
ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় সিটি মিলান মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। করোনাভাইরাসে চিনের পর ভয়াবহ রকমভাবে আক্রমণ করে ইতালিতে। মিলানের রাজধানী লম্বার্ডিয়ায় সারি সারি লাশ এর বহরে ভূতুরে নগরীতে পরিণত হয়েছে পুরো শহর। হাসপাতাল আর বিশ্রামাগারে যেন লাশ আর জীবিত স্বজনদের মিছিল।
দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা যাওয়া ২ হাজার লোকের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি দেশটির উত্তর লম্বার্ডিয়া অঞ্চলের। এখানকার মর্গে লাশ রাখার জায়গা নেই। কবরস্থানগুলোতেও মানুষ প্রবেশ করতে পারছেন না নিহত স্বচনদের শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।
দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৩৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২ হাজার ৫০৩ জনে। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৬৬০২ জনে। খবর ইতালিভিত্তিক গণমাধ্যম আনাসা (ansa) ও আল জাজিরা।
খবরে বলা হয়, আত্মীয়স্বজনরা তাদের প্রিয়জনদের মুখটি শেষবারের মতো দেখতে যেতে পারছেন না। ম্যাসিমো সেরাতো মিলানের অন্যতম বৃহত্তম ফিউনারেল সংস্থার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, এমন ভয়ানক অবস্থা আমরা জীবনে কল্পনাও করিনি। এ যেন এক মৃত্যুপুরী।
ইউরোপের পর্যটনসমৃদ্ধ দেশটি যেন এক মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। করোনাভাইরাসে
করোনায় নতুন করে ৩ হাজার ৫২৬ জনসহ মোট আক্রান্ত হয়েছে ৩১ হাজার ৫০৬ জন। এর মধ্যে ২ হাজার ৯৪১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
বর্তমানে ২৬ হাজার ৬২ জন আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৪ হাজার ২ জনের অবস্থা সাধারণ (স্থিতিশীল অথবা উন্নতির দিকে) এবং বাকি ২ হাজার ৬০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আক্রান্তের অনুপাতে মৃত্যুর হার ৪৬ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ৫৪ শতাংশ। দেশটিতে নারীদের তুলনায় পুরুষ বেশি মারা যাচ্ছে। এ পর্যন্ত মৃত্যুর হার নারী ৩৮ ভাগ, পুরুষ ৬২ ভাগ।
অন্যদিকে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্পে কন্তে করোনা সমস্যা উত্তরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
এর মধ্যে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ইউরো ছাড় করেছেন, যা দিয়ে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, নাগরিক পরিষেবা এবং ব্যবসার কাজে সহায়তা করা হবে। এ ছাড়া মঙ্গলবার নতুন একটি হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনায় নাগরিক সুরক্ষা বিভাগের প্রধান বার্তোলাসো মিলানো যান।
উল্লেখ্য, চীনে করোনাভাইরাস প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। কিন্তু চীনের বাইরে অন্য দেশে ব্যাপক আকারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এতে বিশ্বব্যাপী প্রচণ্ড আতঙ্ক ও ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত সারাবিশ্বে মারা গেছে ৭ হাজার ৯৮০ জন, গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে প্রাণ হারিয়েছে ৮১৯ জন। এর মধ্যে উৎপত্তিস্থল চীনে মৃত্যুর সংখ্যা ৩ হাজার ২৩৭। চীনের বাইরে মারা গেছে ৪ হাজার ৭৪৩ জন।
এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৯ জন। এর মধ্যে ৮২ হাজার ৭৬৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৮৯৪। দেশটিতে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৯ হাজার ৬১৪ জন। এ ছাড়া চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৫ জন মানুষ।
বর্তমানে ১ লাখ ৭ হাজার ৬০৬ জন আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১ লাখ ১ হাজার ১৯০ জনের অবস্থা সাধারণ (স্থিতিশীল অথবা উন্নতির দিকে) এবং বাকি ৬ হাজার ৪১৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আক্রান্তের অনুপাতে মৃত্যুর হার ৯ শতাংশ ও সুস্থতার হার ৯১ শতাংশ।
/এসএস

