
জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রধান ডা. ফারুক আব্দুল্লাহ এমপি অবশেষে দীর্ঘ ৭ মাস পরে মুক্তি পেয়েছেন। আজ (শুক্রবার) জম্মু-কাশ্মীরের স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে এসংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করা হয়।
এ সম্পর্কে ডা. ফারুক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আজ আমি মুক্ত। আমার বলার মতো কোন শব্দ নেই। এই মুহুর্তে, সমস্ত সাথী মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত আমি কোনও রাজনৈতিক ইস্যুতে কথা বলব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি রাজ্যবাসী এবং দেশের সকল নেতাদের যারা আমাদের মুক্তির জন্য আওয়াজ তুলেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এই স্বাধীনতা তখনই পূর্ণ হবে যখন সমস্ত নেতাকে মুক্তি দেওয়া হবে। আমি আশা করছি ভারত সরকার সকলকে মুক্তি দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
জম্মু কাশ্মীরের তিনবার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ডা. ফারুক আবদুল্লাহ। ন্যাশনাল কনফারেন্স দল থেকে তিনি পাঁচবার এমপি হয়েছেন। বর্তমানে তিনি সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার সদস্য। গত ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন ৩৭০ ধারা বাতিলের পরে তাঁকে বন্দি করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকার ফারুক আবদুল্লাহর উপরে জন নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করে। ওই আইনে বিনা বিচারে কাউকে দু’বছর পর্যন্ত আটকে রাখা যায়।
জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ ডা. ফারুক আব্দুল্লাহকে মুক্তি দেওয়ার কথা জানানো হলেও রাজ্যটির সাবেক দু’জন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ এবং মেহবুবা মুফতিকে নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসেনি। তাঁরাও বিগত ৭ মাস ধরে আটক রয়েছেন।
গত (সোমবার) তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, এনসিপি সভাপতি শরদ পওয়ার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া, সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা, আরজেডি’র মনোজ কুমার ঝা এবং বিজেপি’র বিদ্রোহী দুই সাবেক নেতা যশবন্ত সিনহা ও অরুণ শৌরি এক যৌথ বিবৃতিতে জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীসহ সেখানকার রাজনৈতিক নেতাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান।
বিরোধী নেতাদের নামে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে ‘গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি, মৌলিক অধিকার এবং নাগরিকদের স্বাধীনতার উপরে প্রতিনিয়ত আক্রমণ বাড়ছে। এবং তার ফলস্বরূপ, ভিন্নমতের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, সমালোচনার যে কোনও পথকেই বন্ধ করার জন্য সঙ্ঘবদ্ধ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’বলে মন্তব্য করা হয়। জম্মু-কাশ্মীরের তিন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ডা. ফারুক আবদুল্লাহ, ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতিকে সাত মাসেরও বেশি সময় আটক রাখার ঘটনাতেই দেশের এই পরিস্থিতি অত্যন্ত স্পষ্ট বলে বিরোধী নেতারা বলেন।
অত্যন্ত দুর্বল যুক্তি দেখিয়ে তিন সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে আটক রাখা হয়েছে অভিযোগ করে ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘জনজীবনের নিরাপত্তার প্রতি ওঁরা কোনও বিপদের কারণ হয়েছেন বা তাঁদের কাজকর্মে জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে-মোদি সরকারের এই অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি ধোপে টেকে না। ওঁদের রাজনৈতিক জীবনের অতীত রেকর্ড থেকেই তা বোঝা যায়।’
বিরোধী নেতারা এভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর সমালোচনার পরেই আজ জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ডা. ফারুক আব্দুল্লাহকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয় রাজ্য প্রশাসন।
এ প্রসঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ‘বন্দি মুক্তি কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক ছোটন দাস আজ রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে ফ্যাসিস্ট রাজ চালাচ্ছে। ফারুক সাহেবের বয়স হয়েছে। তিনি মুক্তি পেয়েছেন। সারা বিশ্ব এবং ভারতবর্ষের মানুষের দাবির কারণেই তিনি মুক্তি পেয়েছেন। এটা সরকারের একধরনের আইওয়াসও বটে। এখনও ওমর আব্দুল্লাহ, মেহেবুবা মুফতি বন্দি আছেন। দু'জনেই জনপ্রতিনিধি। অর্থাৎ সেই অঞ্চলের জনগণকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। গোটা কাশ্মীরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা এবং ভারতের গণতান্ত্রিক মানুষের দাবি, কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের ওপরে যত ধরণের নিষেধাজ্ঞা আছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা যে নাগরিক সুবিধা ভোগ করে থাকি কাশ্মীরের নাগরিকরা যাতে দ্রুত তা ভোগ করতে পারেন সেই দাবি জানাচ্ছি। জেলখানায় অন্যায়ভাবে অনেককে অন্যায়ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে এটা মোদি-অমিত শাহদের ফ্যাসিজমের নিদর্শন। যা আমাদের কাছে লজ্জার বিষয়। আমরা দাবি জানাচ্ছি যে অবিলম্বে কাশ্মীরের সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হোক।পার্সটুডে।
এমএম/