
তুমুল সমালোচনা ও বিতর্কের পর অবশেষে এস এম রইজ উদ্দিনের স্বাধীনতা পদক বাতিল করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় পুরস্কার ও পদক সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
গত ২০শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২০ পাওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করে সরকারের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ। নয়জন ব্যক্তি এবং একটি প্রতিষ্ঠান পায় এই পদক। এরপর থেকে তালিকা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় দেশে।
সমালোচনা হয় সাহিত্যে রেইজ উদ্দিন ও সংস্কৃতিতে কালীপদ দাস এর স্বাধীনতা পদক পাওয়া নিয়ে। বিশেষ করে ভুলভাল শব্দে কবিতা এস এম রইজ উদ্দিনকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোহগ মাধ্যমে ব্যাপক ট্রল তৈরি হয়। সমালোচনা করেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক থেকে শুরু করে কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিকসহ দেশের বিভিন্ন গুণিজন।
বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান তার ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘এবার সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন রইজউদ্দীন, ইনি কে? চিনি না তো। কালীপদ দাসই বা কে! হায়! স্বাধীনতা পুরস্কার!’
কবি প্রাবন্ধিক আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ–উল–আলম লেনিন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কার একাধিক অজ্ঞাত অখ্যাত ও অযোগ্য ব্যক্তিকে প্রদান করে সরকারের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার, পুরস্কারের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য অন্তত একজনের অর্থাৎ জনাব রইজ উদ্দিনের নামে প্রদত্ত স্বাধীনতা পুরস্কারটি প্রত্যাহার করা হোক।’
মুখ ঢাকো লজ্জায় শিরোনামে প্রখাত সাহিত্যিক আনিসুল হক একটি শীর্ষ জাতীয় দৈনিকের লিখেন, এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদ এবং সংস্কৃতিতে কালীপদ দাস নামের যে দুজন এ পুরস্কার পাবেন বলে ঘোষিত হয়েছে, তাঁদের আমরা অনেকেই চিনি না। আমি না চিনতেই পারি, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত শামসুজ্জামান খান, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক, যার কাণ্ডজ্ঞানের ওপরে আমাদের আস্থা আছে, তিনিও চেনেন না। এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদকে আস্তে আস্তে চেনা গেল। তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে ফেসবুকে। সত্যি সত্যি যদি এগুলো এস এম রইজ উদ্দিনের লেখা হয়ে থাকে এবং সত্যি সত্যি এই কবিতার লেখককে যদি সাহিত্যে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়, তাহলে তা হবে খুবই লজ্জার ব্যাপার। আমি প্রথমেই এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদ এবং তার পরিবার-পরিজনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। পুরস্কারের তালিকায় আপনারা নিজেরা নিজের নাম লিখে দেননি, রাষ্ট্র দিয়েছে। আপনাদের কোনো সমালোচনা আমি করব না। কিন্তু প্রকাশিত কবিতা বা সাহিত্যের সমালোচনা করার অধিকার পাঠক হিসেবে আমার আছে। আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই যে রইজ সাহেবের এই কবিতা কোনো জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার উপযুক্ত নয়। এবং এ কবিতা লিখে তিনি পাড়ার মিতালি সংঘ, সবুজ সংঘের বার্ষিক পুরস্কারও পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন না।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতা পদক বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক পুরস্কার। এই পুরস্কারের মূল্যমান হিসেবে তিন লাখ টাকা। ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের ৫০ গ্রাম ওজনের একটি পদক (রেপ্লিকা) তিনলাখ টাকা ও সনদপত্র প্রদান করা হয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে।
/এসএস