
করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক লক্ষ ছাড়িয়ে গেল। সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লক্ষ ১০ হাজার। বিশ্ব জুড়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৮০০। এই মুহূর্তে সব চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি ইটালি এবং ইরানে। ইটালিতেমৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪৬৩ জনের। আক্রান্ত নয় হাজারেরও বেশি মানুষ। অন্য দিকে ইরানে করোনার সংক্রমণ এতটাই আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে যে, আপাতত ৭০ হাজার জেলবন্দিকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে দেশের প্রশাসন।
বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। ফের মহামারির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ইটালিতে চলছে মৃত্যু মিছিল, ইরান, দক্ষিণ এবং উত্তর কোরিয়ার অবস্থা ভয়াবহ। তারই মধ্যে করোনা ভাইরাসকে পাত্তা না দেওয়ার টুইট করে বিতর্ক জড়িয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার একটি টুইটে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে ট্রাম্প লিখেছেন, "গত বছর ফ্লুতে ৩৭ হাজার অ্যামেরিকানের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু তার জন্য অর্থনীতি থমকে যায়নি। স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়নি। সব কিছু স্বাভাবিক গতিতেই চলেছে। করোনা ভাইরাস নিয়ে অতিরিক্ত আশঙ্কা তৈরি করা হচ্ছে।"
So last year 37,000 Americans died from the common Flu. It averages between 27,000 and 70,000 per year. Nothing is shut down, life & the economy go on. At this moment there are 546 confirmed cases of CoronaVirus, with 22 deaths. Think about that!
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) March 9, 2020
ট্রাম্পের এই টুইটের কড়া সমালোচনা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাদের বক্তব্য, গোটা বিশ্ব যখন এক ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার, তখন ট্রাম্প বিষয়টিকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করছেন। যা মোটেই অভিপ্রেত নয়। বস্তুত, ট্রাম্প যখন এ কথা লিখছেন, তখনও অ্যামেরিকায় সংক্রমণ বাড়ছে। সূত্র জানিয়েছে, পেন্টাগনে এক মার্কিন সেনার শরীরে ভাইরাস মিলেছে। কিছু দিন আগে ইথিওপিয়া থেকে ফিরেছেন তিনি। অন্য দিকে ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে একটি প্রমোদতরিকে এত দিন আটকে রাখা হয়েছিল। এবার আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশঙ্কা, তিন হাজার ৬০০ যাত্রীর মধ্যে অনেকেই করোনা আক্রান্ত।
ইউরোপের অবস্থা ক্রমশ ভয়াবহ চেহারা নিচ্ছে। ইটালিতে নতুন ডিক্রি জারি হয়েছে। উত্তর থেকে কেউ দেশের অন্যান্য প্রান্তে যেতে পারবেন না। বলা হয়েছে, একান্ত কাজ ছাড়া বাড়ির সীমানার বাইরে বেরনো যাবে না। গোটা দেশ জুড়ে লাল সংকেত জারি হয়েছে। এ দিকে ফ্রান্সের এক মন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আপাতত তিনি বাড়িতেই আইসোলেশনে আছেন। ফ্রান্সেও দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনা ভাইরাস। পর্তুগালের প্রেসিডেন্টও নিজেকে আইসোলেশনে রেখেছিলেন। তবে তাঁর শরীরে করোনার জীবাণু মেলেনি।
ইরাকের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। তীর্থ যাত্রীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নাজাফ শহর। শিয়া মুসলিমদের অন্যতম তীর্থক্ষেত্র এই শহর। নাগরিকদের আপাতত কোনও ধর্মীয় সমাবেশে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। এ দিকে ইরানে বিষাক্ত অ্যালকোহল খেয়ে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানকার সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গুজব ছড়িয়েছিল, অ্যালকোহল খেলে করোনা হবে না। সে কারণেই বহু মানুষ বিষাক্ত অ্যালকোহল খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখনও পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি আরও অনেকে। অন্যদিকে ইরান প্রায় ৭০ হাজার জেলবন্দিকে মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনা ভাইরাস যাতে জেলে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে উত্তর কোরিয়া নিয়েও। তাদের আশঙ্কা, দক্ষিণ কোরিয়ার মতোই উত্তর কোরিয়াতেও একই ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। কিন্তু কিম প্রশাসন তা প্রকাশ করছে না। স্বাস্থকর্মীদের যাতে সে দেশে ঢুকতে দেওয়া হয়, তার জন্য আর্জি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অন্য দেশগুলির কাছে আবেদন করেছে, আপাতত উত্তর কোরিয়ার উপর থেকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হোক।
ভারতে আরও একজনের শরীরে করোনা ভাইরাস মিলেছে। সব মিলিয়ে এখন আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪। তবে এখনও পর্যন্ত কারও মৃত্যুর কথা জানা যায়নি। সোমবার রাতে একটি শিশুর শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ মিলেছে। বাংলাদেশেও এখনও পর্যন্ত ৩ জনের শরীরে করোনার জীবাণু মিলেছে। তবে করোনা নিয়ে আশঙ্কা গোটা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। পাওয়া যাচ্ছে না মাস্ক, মিলছে না স্যানিটাইজার।
যুক্তরাজ্যে করোনার প্রভাবে পঞ্চম জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। সেখানকার সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মৃত ব্যক্তি একজন বাংলাদেশি ব্রিটিশ। বস্তুত, এই প্রথম করোনার প্রভাবে কোনও বাংলাদেশির মৃত্যু হল। অন্য দিকে, জার্মানিতেও এই প্রথম করোনার কারণে মৃত্যু ঘটল। সেখানকার স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, সোমবার দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।ডয়েস ভেলে।
মাহিন মুহসিন/পাবলিকভয়েস