এক মাস আগে আলোচিত ক্যাসিনো মাফিয়া জিকে শামীমের জামিন পাওয়ার খবর হঠাৎ প্রকাশিত হওয়ায় তুমুল আলোচনার মধ্যে অস্ত্র ও মাদকের মামলায় ঠিকাদার শামীমকে দেওয়া জামিনের আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে হাইকোর্ট।

রোববার হাই কোর্টের বিচারিক বেঞ্চ থেকে এই সিদ্ধান্ত এলো।

বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মুজিবুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ এদিন স্বপ্রণোদিত হয়ে অস্ত্র মামলায় শামীমের ছয় মাসের জামিন আদেশ প্রত্যাহার (রিকল) করে বলেছে, ‘নাম বিভ্রাটে’ হয়ত বুঝতে সমস্যা হয়েছিল।

পরে বিচারপতি মো রেজাউল হক ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাই কোর্ট বেঞ্চও মাদক মামলায় জামিন আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়।

বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক তখন বলেন, “কার্যতালিকায় নামের বিভ্রাট আছে। এ কারণে হয়তো বিভ্রান্তি হয়েছে। আমাদের হয়ত বুঝতে সেদিন ভুল হয়েছে। তাই আমরা জামিনের অর্ডারটি রিকল (প্রত্যাহার ) করলাম।”

পরে একই ধরনের কথা বলেন বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাই কোর্ট বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ডিএজি জান্নাতুল ফেরদৌস। ওই আদালত থেকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি জি কে শামীমকে মাদক মামলায় এক বছরের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেওয়া হয়।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। কোর্ট রিকল না করলে আমরা আপিল বিভাগে যেতাম।”

আদালতের আদেশ প্রত্যাহারের পর জিকে শামীমের আইনজীবী মমতজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী সাংবাদিকদের বলেন, তার মক্কেল গ্রেপ্তার হওয়ার সময় যেসব অস্ত্র পাওয়া গিয়েছিল সেগুলোর লাইসেন্স আছে। লাইসেন্সের শর্ত ভাঙলে সর্বোচ্চ সাজা ৬ মাস। আর জিকে শামীম চার মাস ধরে কারাগারে আছেন।

“আইন তো সকলের জন্যই সমান। কে গোলাম কিবরিয়া শামীম, কে জিকে শামীম তা বড় কথা নয়। আইন বিচার করবে অপরাধের, অপরাধীর বিচার করবে না। আইন বই দেখেই কিন্ত মাননীয় আদালত জামিন মঞ্জুর করেছিলেন। এই আসামির নাম কী এটা আদালত জানতেও চাননি, বুঝতেও চাননি। কোর্টের বোঝার দরকারও নাই। ”

তাহলে কেন আদেশ প্রত্যাহার করা হল- সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষের কথা চালাচালির কারণে। আমরা কোনো তথ্য গোপন করি নাই। আইনের দৃষ্টিতে সে জামিন পাওয়ার হকদার। এই আসামি যদি জিকে শামীম না হয়ে অন্য কেউ হয়, সেও জামিন পাওয়ার হকদার।

“আজকে রাষ্ট্রপক্ষের মাথাব্যথার কারণ যেটা আমি বুঝতে পারলাম, এ জিকে শামীম বলেই তারা জামিন বাতিল করতে চেয়েছে।… চাঞ্চল্যকর বিবেচনায় আদালত আদেশ রিকল করেছেন।”

এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাবেন কিনা জানতে চাইলে মমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী বলেন, “আদেশটি দেখে পর্যালোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেব।”

প্রসঙ্গত : র‌্যাবের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানের নিকেতন থেকে গ্রেপ্তার হন বিতর্কিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া (জি কে) শামীম। যুবলীগ নেতা পরিচয়ে তিনি গণপূর্তের সব কাজের দরপত্র বাগিয়ে নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারি কয়েক হাজার কোটি টাকার কাজ ছিল তার প্রতিষ্ঠান জি কে বিল্ডার্সের হাতে।

শামীমকে গ্রেপ্তারের সময় জি কে বিল্ডার্সের অফিস থেকে নগদ প্রায় দুই কোটি টাকা, পৌনে ২০০ কোটি টাকার এফডিআর, আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ পাওয়ার কথা জানায় র‌্যাব। তখন গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছিল র‌্যাব। এর একটি অস্ত্র আইনে, একটি মাদক আইনে এবং একটি মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে। পরে দুর্নীতি দমন কমিশন করে আরেকটি মামলা।

এর মধ্যে অস্ত্র আইনের মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। আর মাদক আইনের মামলাটি বিচারের জন্য সম্প্রতি হাকিম আদালত থেকে দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে।