
রাজশাহীর পদ্মায় বিয়েবাড়ির নৌকাডুবিতে এখনও পর্যন্ত ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় নববধূসহ তিনজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করছে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে।
এরমধ্যে গতকাল বিকেলে শামীম (৪৮) ও তার ৭ বছর বয়সি মেয়ের লাশ উদ্ধারের পর আরো একটি করুণ হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। প্রাণপণে মেয়েকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন শামীম। বুকে জড়িয়ে রেখেছিলেন আপন মমতায়। এক মুহুর্তের জন্য মেয়েকে হারাতে চাননি। শেষপর্যন্ত মেয়েকে বুকে জড়িয়েই লাশ হয়ে উঠে এলেন তিনি।
গতকাল শনিবার বিকালে দুর্ঘটনাস্থলের পাশ থেকে শামীম ও তার মেয়ে মদিনা ওরফে রোসনির (৭) লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। উদ্ধারের সময় শামীমের লাশটি মেয়ে রশ্মিকে বুকে জড়িয়ে রাখা অবস্থায় পাওয়া যায় বলে।
এর আগে নৌকাডুবিতে শামীমের স্ত্রী মনিকার (৪০) লাশও উদ্ধার করা হয়েছে। শামীম কনে সুইটির সম্পর্কে চাচা। এ নিয়ে শামীমের পরিবারের আর কেউ বাকী রইলো না জীনব নিয়ে ফিরে আসার জন্য।
নিহত অন্যরা হলেন- রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ হড়গ্রাম ইউনিয়নের বসুয়া এলাকার আবদুল গাজীর ছেলে রতন আলী (৪০) ও তার মেয়ে মরিয়ম খাতুন (৬) এবং হড়গ্রাম ইউনিয়নের গোবিন্দপুরের আসলাম উদ্দিনের ছেলে এখলাক হোসেন (২৪)। রতন সম্পর্কে কনের দুলাভাই। এখলাক সুইটির খালাত ভাই। নিখোঁজ রয়েছেন কনে সুইটি, তার ফুপাতো বোনের মেয়ে রুবায়েত (৮) ও খালা আঁখি খাতুন।
নিখোঁজদের অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে গঠিত কমিটির সমন্বয়কারী আবু আসলাম জানান, নিখোঁজ তিনজনের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। উদ্ধারকাজ চলছে।
এ ঘটনায় রাজশাহী জেলা প্রশাসন সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে। দুই কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে দুর্ঘটনার কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ জানাতে বলা হয়েছে।
কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম প্রাথমিকভাবে নৌকাডুবির তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, নৌকা দুটি ছিল ডিঙি। অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে বিপদ ঘটেছে। এ ছাড়া মাঝিরা ছিল অদক্ষ। আর এদের একজন ছিল কিশোর। পাশাপাশি ঝড়ো হাওয়ায় নৌকা দুটি পানিতে তলিয়ে যায়।
প্রসঙ্গত গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীর চরখিদিরপুর এলাকার প্রয়াত ইনসার আলীর ছেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় আসাদুজ্জামান রুমনের সঙ্গে বিয়ে হয় পবা উপজেলার কর্ণহার থানার শাহীনের মেয়ে সুইটি খাতুন পূর্ণির। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সুইটিকে নেয়া হয় চরখিদিরপুরে রুমনের বাড়িতে।
শুক্রবার সেখানে বৌভাত ছিল। সুইটির স্বজনরা বৌভাতের দাওয়াত খেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় সুইটি ও তার স্বামী রুমনকে নিয়ে ফিরছিলেন। ইঞ্জিনচালিত দুটি ছোট নৌকা ৪১ যাত্রী নিয়ে নগরীর শ্রীরামপুরে পদ্মা পার হওয়ার সময় মাঝনদীতে ঝড়ো হাওয়া ও ঢেউয়ের মাঝে পড়ে।
এ সময় নৌকার ইঞ্জিন বিকল হলে যাত্রীরা ভয়ে নড়াচড়া করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাদের নৌকা ডুবতে থাকে।
/এসএস