
আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার ড. মাহাথির মোহাম্মদকে টেক্কা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন দেশটির প্রভাবশালী নেতা মুহিউদ্দীন ইয়াসিন।
গতকাল শনিবার তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন দেশটির রাজা সুলতান আবদুল্লাহ সুলতান আহমাদ শাহ। আজ রোববার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় দেশটির অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার কথা তার।
মুহিউদ্দীনের শপথের আগেই আজ সকালে ইয়াইয়াসান আল বুখারিতে সংবাদ সম্মেলন করেন মাহাথির। সেখানে তিনি বলেন, আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। বিশেষ করে মুহিউদ্দীনের পক্ষ থেকে এটি বেশি করা হয়েছে। মুহিউদ্দীন ইয়াসিন দীর্ঘদিন তার এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছিলেন। এখন তিনি সেই বিশ্বাসঘাতকতায় সফল হয়েছেন। খবর: অনলাইন দ্য স্টার।
এক প্রশ্নের জবাবে মাহাথির বলেন, আজমিনের নিজস্ব এজেন্ডা ছিল। এই পুরো এজেন্ডা ছিল তার। আর সে মুহিউদ্দীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে তা নিয়ে।
পাকাতান হারাপান জোটের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, জরুরি ভিত্তিতে পাকাতান জোট পার্লামেন্টারি অধিবেশন ডাকবে। আমরা দেখব (এমপিদের পক্ষ থেকে) কার কত সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন আছে। এখন থেকে বিরোধী অবস্থানে যাবে পাকাতান জোট।
পার্তি প্রিবুমি বারসাতু মালয়েশিয়ার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মাহাথির বলেন, এটি এখন নির্ভর করে দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর। তারা আমাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বহিষ্কার করবে নাকি রাখবে সে সিদ্ধান্ত দল নেবে। বারসাতুর সংখ্যাগরিষ্ঠরা আমাকে চেয়ারম্যান হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ফলে কিছু একটা তো হতে যাচ্ছে। তারা এখন আনুষ্ঠানিকভাবে আমাকে বহিষ্কার করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করা নিয়ে তিনি অনুশোচনা বোধ করেন কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে মাহাথির বলেন, তার সামনে এ ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না।
তিনি বলেন, আমি দেখেছি– উমনো এন-ব্লককে নিয়ে বারসাতু জোট গঠন করতে যাচ্ছে। তখন (পদত্যাগ করা ছাড়া) আমার সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না। এর অর্থ হলো– যাদের বিরুদ্ধে আমি লড়াই করেছি, তাদের মেনে নিতে হবে। এটি করতে আমি প্রস্তুত নই। তাই মুহিউদ্দীন এটি করতে প্রস্তুত ছিলেন।
মাহাথিরের সরকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন মুহিউদ্দীন ইয়াসিন। প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে মুহিউদ্দীনের নাম এর আগেই ঘোষণা করেছিল মাহাথিরের দল মালয়েশিয়ার ইউনাইটেড আদিবাসী পার্টি (বারসাতু)।
নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতেই মাহাথির আচমকা পদত্যাগ করেন বলে জল্পনা-কল্পনা চলছিল দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে। তার পদত্যাগের পর ৭৩ বছর বয়সী আনোয়ার ইব্রাহীমের সঙ্গে তার দলের জোটে ভাঙন ধরে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে নাজিব রাজাককে হারিয়ে এ জোট বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে।
মালয়েশিয়ার রাজনীতির মঞ্চে সপ্তাহব্যাপী নানা নাটকীয়তার পর পদত্যাগ করেন মাহাথির। ‘ফ্যাক্ট অব হোপ’ নামে আনোয়ার ইব্রাহীম যে জোট গঠন করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছিলেন, সেই জোটের ভেতরে আনোয়ার বিরোধীরা এ নাটক মঞ্চস্থ করেছে বলে অভিযোগ ওঠে।
মাহাথির মোহাম্মদ পদত্যাগ করলে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল আনোয়ার ইব্রাহীমের। তিনি হলেন দেশটির সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী। কিছু দিন ক্ষমতায় থেকে আনোয়ার ইব্রাহীমের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করবেন ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েই প্রধানমন্ত্রী হন মাহাথির মোহাম্মদ। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি মাহাথির রাখেননি।
/এসএস