পাবলিক ভয়েস : একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে আগামী ৩০ জানুয়ারি। এ অধিবেশন সামনে রেখে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জন্য আবেদনপত্র বিতরণ করবে ক্ষমতাসীন আ.লীগ।
জানা গেছে, সরাসরি নির্বাচিত ছয়জন সংসদ সদস্যের বিপরীতে একটি নারী আসন পাওয়া যায়। সে হিসাব অনুযায়ী ২৫৭ আসনের বিপরীতে ৪৩টি আসন পাচ্ছে আ.লীগ। এই আসনগুলোতে আ.লীগের মনোনয়ন পেতে আজ মঙ্গলবার থেকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে আগ্রহীদের।
আ.লীগের নেতারা জানিয়েছেন, একাদশ জাতীয় সংসদকে প্রাণবন্ত করতে বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাই করে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যদের মনোনীত করবেন আ.লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সে লক্ষ্যে এখন থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি দলীয় আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দেয়ার পর সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করেই ৪৩টি আসনে মনোনীত করা হবে।
আ.লীগ সূত্র জানা গেছে, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ও জেলায় পর্যায়ে দীর্ঘদিন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত জনপ্রিয় নারীদের অনুসন্ধান করছেন আ.লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলটির বিভিন্ন নেতা ও সংস্থার মাধ্যমে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে।
পরিবারের রাজনৈতিক ঐতিহ্য, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত, এক-এগারো পরবর্তী সময়ে ভূমিকা, বিভিন্ন সময়ে দলের জন্য ত্যাগ, বিভিন্ন সেক্টরে অবদান আছে ও অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে প্রার্থী বাছাই করা হবে। এই সব গুণাবলির পাশাপাশি জাতীয় সংসদে কথা বলতে পারবেন এমন প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হবে।
আ.লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে জায়গা পেতে ইতোমধ্যেই দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার গুডবুকে থাকার চেষ্টা করছেন অনেকেই। মনোনয়ন পেতে আগ্রহীরা গণভবনে গিয়ে দেখা করার পাশাপাশি আ.লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। আ.লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড চূড়ান্ত মনোনয়ন প্রদাণ করবেন বলে জানান নেতারা।
দলটির হাইকমান্ড সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিসভার মতোই চমক থাকতে পারে এবারের সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে। নবম বা দশম সংসদে থাকা সংরক্ষিত নারী আসনের অধিকাংশ সদস্যই থাকছেন না। দশম সংসদে থাকা ৫ থেকে ৭ জন একাদশ সংসদে আ.লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন। বাকি আসনগুলোতে দেখা যেতে পারে একেবারেই নতুন মুখ।
দলটির সূত্র জানায়, দশম সংসদে সরাসরি আসন থেকে নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন আ.লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি পরাজিত হয়েছেন। দশম সংসদে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন কাজী জাফরুল্লাহর স্ত্রী নিলুফার জাফরুল্লাহ। নিলুফার জাফরুল্লাহ একাদশ সংসদে পুনরায় মনোনয়ন পেতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। আ.লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হিসেবে নবম সংসদে ছিলেন ফরিদুন্নাহার লাইলী। এবারও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
জানা গেছে, পুরনোদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য সানজিদা খানম, ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি, আওয়ামী লীগ নেত্রী আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, মাহজাবিন খালেদ প্রমুখ।
সরাসরি আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি এমনদের মাঝে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর স্ত্রী সায়েরা মহসীন, সাবেক সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ, সাবেক সংসদ সদস্য ও চিত্রনায়িকা সারাহ্ কবরী।
আ.লীগের হাইকমান্ডের সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নতুন মুখ হিসেবে চমক থাকছে শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে অভিনেত্রী শমী কায়সার। পাশাপাশি নতুন মুখ হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী। আ.লীগের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মারুফা আক্তার পপি।
আলোচনায় রয়েছেন মহিলা আ.লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক। এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা লোপা তালুকদার। মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে শতাধিক।
আ.লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও দলটির মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান জাগো নিউজকে বলেন, যেকোনো নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ক্রাইটেরিয়া সবসময় একটাই, সেটা হচ্ছে যোগ্যতা। এলাকায় প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, যে কর্মকাণ্ড করার জন্য মনোনয়ন চেয়েছেন সে কর্মকাণ্ড করার মতো দক্ষতা-সক্ষমতা এইগুলো দেখা হবে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে।
তিনি বলেন, সকল ধরনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যেন হয় সেটা আমরা দেখবো। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার পাশাপাশি পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য অঙ্গন থেকেও বিবেচনা করা হবে।