
ইসমাঈল আযহার: প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ওমরাহ যাত্রী ও মসজিদে নববী ভ্রমণকারীদের জন্য সৌদি আরবে প্রবেশ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। ফলে সৌদি প্রশাসনের পরবর্তী নির্দেশনা ছাড়া বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সৌদি আরবে নিয়োগপ্রাপ্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
এর আগে বৃহস্পতিবার সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, যারা ওমরাহ করতে চাচ্ছেন বা মদিনায় মসজিদে নববীতে যেতে চাচ্ছেন সৌদি আরবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় তাদের প্রবেশাধিকার অস্থায়ীভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গোলাম মসীহ বলেন, সৌদি প্রশাসন নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বের অন্য দেশেগুলোর মতো তা আমাদেরও মানতে হবে। কবে ওমরাহ যাত্রীরা পুনরায় সৌদিতে ঢোকার সুযোগ পাবেন, সেটা দেশটির সরকারের ওপর নির্ভর করছে।
সৌদি আরবে করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশ থেকে ওমরাহ ও ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা: যেসব দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগি শনাক্ত হয়েছে সেসব দেশ থেকে সৌদি আরবে ওমরা ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ নিষেধাজ্ঞার কথা জানায় মন্ত্রণালয়। খবর ডন।
গত অক্টোবরে নতুন ভ্রমণ ভিসানীতি ঘোষণা করে সৌদি আরব। সৌদি আরবের শীর্ষ এক পর্যটন কর্মকর্তার বরাতে ডন নিউজ জানাায়, অক্টোবর থেকে শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৪০০,০০০ ট্যুরিস্ট ভিসা দেওয়া হয়েছে এবং ২০৩০ সালে দেশটির লক্ষ্য ছিল ১০০ মিলিয়ন বার্ষিক ভ্রমণ ভিসা দেওয়া। কিন্তু সম্প্রতি করোনাভাইরাস এর প্রদুর্ভাব মহামারী রুপ নেওয়ায় আপাতত সাময়িক সময়ের জন্য দেশটিতে সব ধরণের ভ্রমণ এবং ওমরাহ ভিসা বন্ধ করা হলো।
বিবৃতিতে বলা হয়, যেসব দেশগুলিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, সেখান থেকে সৌদি আরবে ওমরা ও ভ্রমণের জন্য বিদেশীদের প্রবেশ স্থগিত করা হয়েছে। চীনের বাইরে ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের ফলে মহামারী হওয়ার আশঙ্কা আরও বেড়ে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তবে কোন কোন দেশ থেকে যাত্রীরা সৌদি প্রবেশ করতে পারবে না সে বিষয়ে স্পষ্ট করা হয়নি। এ বিষয়ে বলা হয়েছে মক্কা ও মদিনাসহ ভ্রমন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ এ বিষয়টা চিহ্নিত করবে।
এদিকে ওমরাহ ও ট্যুুরিস্টদের জন্য ভিসা স্থগিতের সময়সীমাও উল্লেখ্য করা হয়নি পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে। এ ব্যাপারে গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাময়িক সময়ের জন্য করোনার প্রাদুর্ভাব অঞ্চলের লোকজনদের ভিসা দিবে না সৌদি আরব।
সৌদি আরবে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার কোনো রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিবেশী কয়েকটি দেশে ভয়ঙ্কর এ ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইরানেই মারা ১৯জন মারা গেছে। এ নিয়ে চিনের পর ইরানে সর্বোচ্চ সংখ্যক লোক এ ভাইরাসে মারা গেছে।
এছাড়া বাহরাইনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে নয়জন। ওমানে সংক্রমণ ঘটেছে তিনজনের দেহে। কুয়েত, ইরাক, মিসর, ইসরায়েলেও সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। সোমবার দেশগুলোতে একজন করে আক্রান্তের খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২ হাজার ৮০৩ জন। শুধুমাত্র চিনে মারা গেছে ২ হাজার ৭৪৭ জন।
গত বছরের ডিসেম্বর ৩১ তারিখে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথমবারের মতো ধরা পড়ে নভেল করোনা ভাইরাস। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্বের অন্তত ৪৫টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৮শ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৮২ হাজার ১৬৬ জন। এখন পর্যন্ত ৩৩ হাজার ২০৬ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
আই.এ/