হাবিবুর রহমান মিছবাহ
সারাদেশ অঘোষিত ধর্ষণের রাজ্যে পরিণত হয়েছে। দৈনিক অসংখ্য ধর্ষণের সংবাদ করতে বাধ্য হচ্ছে গণমাধ্যমকর্মীরা। যা চরম লজ্জা ও পরিতাপের বিষয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় পাক হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের মা-বোনদের ইজ্জতের ওপর যেভাবে হামলে পড়েছিল, আজ স্বাধীনতার অর্ধশত বছরে এসেও সেই একই দৃশ্য দেখতে হচ্ছে আমাদের! বরং বর্তমানের বেহায়াপনা তখনের থেকেও ভয়াবহ বলা যায়।
শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীকে শিক্ষকের ধর্ষণ, দলবেঁধে ছাত্রীকে ধর্ষণ, শিক্ষিকাকে ছাত্রের ধর্ষণ, শিশু ধর্ষণের পর হত্যা, পারিবারিক কলহের জেরে ধর্ষণ, প্রেমের সম্পর্ক থেকে ধর্ষণ অতঃপর হত্যা, ফেসবুকে সম্পর্ক- সাক্ষাৎ করতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার, চলন্ত বাসে গার্মেন্টসকর্মী ধর্ষণ!
এভাবে আর কত দেখতে হবে আমাদের? সহ্য করতে হবে এসব চারপায়া আচরণ? অথচ এভাবেই লজ্জার মাথা খেয়ে নিত্যদিন অনাকাঙ্ক্ষিত শিরোনাম দেখতে হচ্ছে আমাদের! এখন যদি আমি বলি নিরাপদ পরিবেশ না পেলে নারীদের বাইরে নামতে দিবেন না বা বাইরে পাঠাবেন না, তাহলে কি আমার ভুল হবে? এ বক্তব্য কি নারীবিদ্বেষী হবে নাকি নারীবান্ধব?
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শই নারীদের নিরাপত্তার একমাত্র গ্যারান্টি। নববী আদর্শেই রয়েছে নারীর মর্যাদা, অধিকার ও সম্মান।
নারী স্বাধীনতার নামে বাংলাদেশে যা চলছে, তা মূলত নারীকে পণ্য বানাবারই নামান্তর। এই নারী স্বাধীনতা আর সমান অধিকারের আন্দোলনই নারীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই আন্দোলনের নামে মা-বোনদের বাইরে নামিয়ে বখাটে আর চরিত্রহীনদের ভোগের সামগ্রী বানিয়েছে।
কোনো মা-বাবাই তার মেয়েকে স্কুলে বা শপিংয়ে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন না। আমাদের সমাজে যুবতী মেয়ে কিংবা নারী এমনকি শিশু পর্যন্ত নিরাপদ নয়! এর থেকে উত্তরণের পথ কী? নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
জাহেলী যুগে যখন নারীদের যত্রতত্র ব্যবহার করা হতো, ভোগের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হতো, সে অন্ধকার জাহেলী যুগে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের জন্য যে পরিবেশ করে দিয়েছেন, সেই পরিবেশের পুণরাবৃত্তি ঘটাতে আবারো সেই খোলাফায়ে রাশেদার আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে।
যুবসমাজের চরিত্রের অবক্ষয়রোধে কাজ করতে হবে। দীনি/ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে তাদের। দীনি/ইসলামী শিক্ষার অভাবে যুবসমাজ চরিত্রহীন হয়ে পড়ছে। তাই শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটাতে হবে। যতদিন পর্যন্ত পুরুষ জাতির মাঝে দীনি/ইসলামী শিক্ষার প্রসার না ঘটবে, ততদিন পর্যন্ত নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে ওঠা সম্ভব নয়।
নারীদের নিরাপদ পরিবেশের জন্য প্রথম শর্ত হলো- পুরুষের মাঝে দীনি শিক্ষা ও দীনি জ্ঞান অবশ্যকরণীয়। অতএব আমরা যদি আমাদের মা-বোনদের ইজ্জত নিয়ে এক সেকেন্ডও ভাবি, তাহলে আমরা বলতেই পারি, নিরাপদ পরিবেশ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের মা-বোনদের বাইরে পাঠাবো না।
লেখক : রাষ্ট্রচিন্তাবিদ, গবেষক, সমাজকর্মী