
করোনা ভাইরাস আতঙ্কে দিন পার করছে বিশ্ববাসী। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ চীন থেকে নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়েছে। অনেক দেশ চীন ভ্রমণের ওপরও জারি করেছে সতর্কতাও। এ ধরনের নানা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে বিশ্বজুড়ে করোনা কম ছড়ালেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চীন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৪২৫ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এখন পর্যন্ত ২৬টি দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। তবে ওইসব দেশে এখনো দ্রুততার সঙ্গে এই ভাইরাসটি ছড়ায়নি।
হিসাব বলছে, করোনা ভাইরাসে শুধু চীনে মারা গেছেন ৪২৩ জন। এর মধ্যে বেশিরভাগই উহানের বাসিন্দা। বাকি দুজনের মধ্যে ১ জন হংকংয়ে ও অন্য একজন ফিলিপাইনে মারা গেছেন বলে জানা গেছে।
হংকংয়ের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম বলছে, করোনা ভাইরাসে চীন আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি বিশ্ব গণমাধ্যমে যেভাবে উঠে এসেছে, প্রকৃত পরিস্থিতি তার চেয়ে আরও ভয়াবহ। এমনকি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মৃতের সংখ্যাও চীন গোপন করছে বলে দাবি অনেকের।
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি হলেও ইতোমধ্যে বিভিন্ন শহরে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। আতঙ্কে ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। উহানসহ অন্য বেশকিছু শহরের রাস্তাগুলো দেখলে মনে হয় যেন মৃত্যুপুরী। ব্যস্ত রাস্তা এখন একেবারে ফাঁকা। এছাড়া হুবেই প্রদেশের বেশিরভাগ বাজার এখন বন্ধ রয়েছে। কোনো শাকসবজি বা অন্য খাবার সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে শুধু শুকনো খাবার খেয়েই দিনযাপন করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
চীনের মৃত্যুফাঁদ উহান থেকে ৩১৪ বাংলাদেশিকেও ফেরত আনা হয়েছে। তাদের সবাইকে রাখা হয়েছে পর্যবেক্ষণে। বাংলাদেশে যেন করোনা ভাইরাস ছড়াতে না পারে সেজন্য নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। এর মধ্যে আছে- চীনের অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা বাতিল করা ও চীন থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলকভাবে স্ক্যানিং করা। হয়তো এসব কারণেই করোনা ভাইরাস চারপাশে জাল বিস্তার করলেও এখনো নিরাপদে আছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের পাশের দেশ ভারতে এরই মধ্যে করোনা আক্রান্ত ৩ জন রোগী পাওয়া গেছে। দেশটির কেরালা রাজ্যের কাসারগড় এলাকায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তৃতীয় রোগী পাওয়া যাওয়ার পর রাজ্যটিকে একটি বিপর্যস্ত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় সরকার।
চিকিৎসকরা বলছেন, কেরালায় এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাছাড়া পর্যবেক্ষণে থাকা আরও দুইজনকে সংক্রমণের আশঙ্কায় সরকারি হাসপাতালের ‘আইসোলেশন ওয়ার্ডে’ পাঠানো হয়েছে।
ভারতে মারাত্মকভাবে করোনা আতঙ্ক দেখা দেওয়ায় চীনের নাগরিকদের জন্য ১৫ জানুয়ারি থেকে ইস্যু হওয়া সব ভিসা বাতিল করেছে নয়াদিল্লি প্রশাসন। ফলে চীন থেকে ভারতে আসতে সবাইকে নতুন করে ভিসার আবেদন করতে হবে। এতে চীনাদের জন্য ভারতের ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ দিকে করোনা ভাইরাসে ভয়াবহতা চীনে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছালেও বাইরের দেশে এর প্রভাব এতটা ভয়াবহ নয় বলে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এ কারণে ভাইরাসটিকে মহামারি বলতেও নারাজ তারা।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক সংক্রামক ঝুঁকি প্রস্তুতি বিভাগের প্রধান সাইলভি ব্রায়ান্ড বলেন, চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটিকে এখনই মহামারি বলা যাবে না। করোনা ভাইরাস নিয়ে চীন যেভাবে কাজ করছে তাতে বিশ্ব দ্রুতই এটি থেকে মুক্তি পাবে বলে আমরা আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন গুজব প্রতিরোধ করতে হবে। কোনো মহামারি শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে বা শুরুর পর বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ায়। এগুলো প্রতিরোধ করতে না পারলে সমস্যা কাটিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে এখনো মহামারি না বললেও অনেক ভাইরাস বিশেষজ্ঞ বলছেন- এটি মহামারিতে রূপ নেওয়ার পথে রয়েছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে দ্রুতই এটি মহামারিতে রূপ নেবে। যদিও এতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে এ বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তারা।
আই.এ/