জামালপুরে আন্তনগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি কেবিন থেকে প্রাক্তন এক ছাত্রীসহ এক অধ্যক্ষকে আটক করেছে রেলওয়ে থানার পুলিশ। পুলিশ বলছে, ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় তাঁদের আটক করা হয়েছে। কিন্তু প্রাক্তন ওই ছাত্রী বলছেন, ট্রেনে শিক্ষকের সঙ্গে দেখা হওয়ায় তাঁর সঙ্গে যাচ্ছিলেন। তাঁর কোনো অভিযোগ নেই। আর অধ্যক্ষ বলছেন, ট্রেন ছাড়ার পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে অপবাদ দিয়ে তাঁদের আটক করা হয়।
আটক আবদুস সালাম চৌধুরী (৫০) ইসলামপুর জে জে কে এম গালর্স হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি জামালপুর শহরের বেলটিয়া এলাকার বাসিন্দা।
রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রোববার ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দেওয়ানগঞ্জগামী আন্তনগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের কেবিন বুকিং করে ওই অধ্যক্ষ তার কলেজের এক প্রাক্তন ছাত্রীকে নিয়ে ভ্রমণ করছিলেন। ট্রেনটি মেলান্দহ স্টেশন পার হওয়ার পর ওই তরুণীসহ কেবিনটি ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় যাত্রীদের সন্দেহ হয়। যাত্রীরা কর্তব্যরত পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন যে, ‘খ’ বগির ২ নম্বর কেবিনে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে। কেবিনের বাইরে থেকে ডাকাডাকির পরও দরজা না খোলায় কর্তব্যরত রেল পুলিশকে বিষয়টি জানায় যাত্রীরা।
পরে পুলিশ ওই কেবিনে থেকে অধ্যক্ষ আবদুস সালাম চৌধুরীকে ওই তরুণীসহ আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে। তিন সিটের কেবিনে সেই নারীসহ তারা দুজনই ছিলেন। এ সময় আবদুস সালাম অনৈতিক কাজে ব্যবহৃত কনডমটি গিলে ফেলার চেষ্টা করেন। পরে এক পুলিশ সদস্য কনস্টেবল অধ্যক্ষের মুখ থেকে কনডমটি বের করেন। তরুণীর ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে একটি আই ফোন পাওয়া যায়। তাদের দুজনকে আটক করে দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরপর বিকেলে আটক দুজনকে আন্তনগর তিস্তা ট্রেনেই জামালপুর জিআরপি থানায় নিয়ে আসা হয়।
ওই অধ্যক্ষ বলেন, পুরো ঘটনাটি ট্রেন ছাড়ার মাত্র পাঁচ-সাত মিনিটের মাথায় ঘটে। সে আমার একজন প্রাক্তন ছাত্রী। দেখা হওয়ায় তাঁকে নিয়ে যাচ্ছিলাম। পাঁচ-সাত মিনিটের মধ্যে কি এমন খারাপ কাজ করা যায়।
ঘটনাটি আজ রোববার দুপুরে জামালপুর কোর্ট স্টেশন এলাকায় ঘটে। জামালপুর রেলওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আন্তনগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুপুর ১২টা ৮মিনিটের দিকে জামালপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই একটি কেবিন থেকে ওই দুজনকে আটক করা হয়। তাঁদের প্রথমে দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বিকেল চারটার দিকে জামালপুর রেলওয়ে থানায় আনা হয়।
এই দুজনকে রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাপস চন্দ্র পণ্ডিত জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাঁর কক্ষে থাকা অবস্থায় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ওই ছাত্রী গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘ওই অধ্যক্ষ আমার একজন শিক্ষক। তাঁর সঙ্গে আমার আর কোনো সর্ম্পক নেই। শিক্ষক হিসেবে ট্রেনে দেখা হওয়ায় তাঁর ওই কেবিনে একসঙ্গে যাচ্ছিলাম। তাই এ বিষয়ে আমার কোনো অভিযোগও নেই।’
একই সময় অধ্যক্ষ বলেন, ‘ওই কেবিনে আরও দুজন যুবক বসে ছিলেন। কিন্তু আমরা যাওয়ার পর কেবিন থেকে তাঁরা চলে যান। তাই কেবিনের দরজাটি লাগনো ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর দুজন যুবক এসে কেবিনের দরজায় নক করছিলেন। পুরো ঘটনাটি ট্রেন ছাড়ার মাত্র পাঁচ-সাত মিটিনের মাথায় ঘটে। সে আমার একজন প্রাক্তন ছাত্রী। দেখা হওয়ায় তাঁকে নিয়ে যাচ্ছিলাম। পাঁচ-সাত মিনিটের মধ্যে কি এমন খারাপ কাজ করা যায়। আমার বিরুদ্ধে হয়তো কেউ ষড়যন্ত্র করেছে। যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে, এসবের কোনো ভিত্তি নেই।’
ওসি তাপস বলেন, ‘ছাত্রীটির কোনো অভিযোগ নেই তবে ট্রেনের মধ্যে “জনসমক্ষে অনৈতিক কার্যকলাপে” যাত্রীদের বিব্রত করার অপরাধের অভিযোগে রেলওয়ে আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।’