আগামী কাল ১০ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে দাওয়াত ও তাবলীগের বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে মুসুল্লিদের উপস্থিতির নজিরবিহীন রেকর্ড তৈরি হয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমা মানেই টঙ্গীর তুরাগ তীরে বাধভাঙ্গা জোয়ারের মত মুসুল্লিরা উপস্থিত হন কিন্ত তাবলীগের দু পক্ষের বিবাদবান সমস্যা ও সংকটের কারণে গত বছর বিশ্ব ইজতেমা কিছুটা ছন্দ হারালেও এবারের আলমী শূরা ও আলেম ওলামাদের তত্বাবধানে হওয়া বিশ্ব ইজতেমার মূল পর্বে লোকজন বাধভাঙ্গা জোয়ারের মত উপস্থিত হয়েছে।
মাঠে জায়গা না থাকায় ইজতেমা মাঠের বাইরেও দেওয়া হচ্ছে মাইক যাতে করে মানুষ ঠিকমত বয়ান শুনতে পারেন। আগামী কাল বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ইজতেমার মূল পর্ব। চলবে ১২ তারিখ পর্যন্ত তিন দিন। পরবর্তিতে কিছুদিন পর আবার রয়েছে নানা কারণে বিতর্কিত ও আলোচিত মাওলানা সা'দ কান্ধলভী অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমা যারা তাবলীগের মধ্যে সা'দপন্থী বা একক আমীরপন্থী বলে পরিচিত। তবে তাদের ইজতেমায়ও মাওলানা সা'দ উপস্থিত হবে না বলে তারা ইতিপূর্বেই জানিয়েছেন। তবে আলেম ওলামাদের তত্বাবধানে আলমী শুরার নিয়মতান্ত্রিকতায় পরিচালিত এই ইজতেমার নাম দেওয়া হয়েছে 'টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা শুরায়ী নেজাম-২০২০ ইং (১৪৪১ হি.)'।
ইতিমধ্যেই আলমী শুরায়ী নেজামে পরিচালিত এই মূল পর্বের ইজতেমা মাঠে উপস্থিত হয়েছেন দাওয়াত ও তাবলীগের গুরুত্বপূর্ণ মুরুব্বী মাওলানা আহমদ লাট এবং ইবরাহীম দেওলা। গতকাল বুধবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বিমানযোগে ঢাকা পৌঁছেন তাবলিগের এই মুরব্বি। এখন আলেমদ্বয় টঙ্গী ময়দানে অবস্থান করছেন।
বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বিদেশী মেহমানদের বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান। এ ছাড়াও তাবলীগের মুরুব্বী মাওলানা জুবায়ের ও আলেম ওলামারা থাকবেন এই ইজতেমায়।
এ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে সেখানে অবস্থান করছেন বলেও জানানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ এবং র্যাব সেখানে উপস্থিত রয়েছেন। তবে ইজতেমার এই পর্বে কোন উত্তেজনার আশংকা নেই বলেও জানা হয়েছে।
টঙ্গী মাঠ ঘুরে পাবলিক ভয়েসের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এ বছর ইজতেমা শুরুর আগের দিনই পুরো মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে মানুষজনের বিশাল চাপ লক্ষ করা যাচ্ছে। পশ্চিমে আশুলিয়া রোড, পূর্বে ঢাকা ময়মনসিংহ রোড, উত্তরে কামারপাড়া রোডসহ বিশ্ব ইজতেমা মাঠের চতুর্দিকেই মানুষের গিজগিজে অবস্থা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় অনেকের সাথে কথা বললে তারা জানিয়েছেন, ইজতেমার মাঠে সব সময়ই লোকজনের বিশাল ভীড় পরিলক্ষিত হলেও এ বছর ইজতেমা শুরু হওয়ার আগেই মুসুল্লিদের যে উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে ইতোপূর্বে অনেক বার তা দেখা যায়নি। সর্বশেষ এ ধরনের ভীড় দেখা গেছে তাবলীগের উভয় পক্ষ মিলে করা বাংলাদেশের সকল জেলার একত্রিকরণ ইজতেমার শেষ পর্বে। এরপর বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে ভাগ হয়ে জেলা জেলা করা হয়।
প্রায় ৮/১০ বছর ধরে ইজতেমার মাঠে কম্বল বিক্রি করা দোকানী সোবহান বলেন, ইজতেমার মাঠে এ বছরের ভীড় খুব বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। তিনি আরও দুদিন আগেই চলে এসেছেন মাঠে। কিন্তু তখন থেকেই মানুষজনের উপস্থিতি ব্যাপক ভাবে শুরু হয়েছেন। তিনি বলেন, সব জেলা মিলিয়ে একত্রে ইজতেমা করলে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌছার আশঙ্কা রয়েছে। তবে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতিতে তিনি খুশি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গত বছর যখন ইজতেমার মাঠে মারামারি হইছে তখন আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি। তাবলীগের মধ্যে আমরা এগুলো দেখতে চাই না।
শুরায়ী নেজামের এই ইজতেমায় মানুষের ব্যাপক উপস্থিতির জন্য সারাদেশে আলেম ওলামাদের ব্যাপক প্রচারণা ও তাবলীগের সাথে আলেমদের সম্পৃক্ত হওয়ার প্রমান বহন করে বলে জানিয়েছেন কাকরাইলের একজন মুরুব্বী।