প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ২৭, ২০২৫, ৮:০০ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জানুয়ারি ১২, ২০১৯, ৭:৩৪ অপরাহ্ণ
আল্লামা শফিকে নিয়ে একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে!

-আরিফ রব্বানী
মেয়েদের প্রাইমারি লেবেলের ওপরে শিক্ষাগ্রহণ করতে বারণ করেছেন বলে সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম আল্লামা শাহ আহমাদ শফি হাফিজাহুল্লাহুকে নিয়ে দুদিন ধরে বেশ সমালোচনা চলছে। বিশেষ করে সুশীল, নাস্তিকপন্থী এবং বামপাড়ার জনগণ এ নিয়ে তুলকালাম ঘটিয়ে ছাড়ছে। বয়োবৃদ্ধ এই লোকটিকে নিয়ে তারা যা ইচ্ছে তা-ই বকে যাচ্ছে। আচ্ছা! আল্লামা শফি কি আসলেই নারীদের 'উচ্চশিক্ষা'র বিরোধী? কী মনে হয় আপনার? তাহলে আসুন একটি খবর দেই আপনাকে!
কওমি মাদরাসাভিত্তিক শিক্ষাবোর্ড 'বেফাকুল আরাবিয়া বাংলাদেশ'-এর প্রধান হলেন আল্লামা শফি হাফিজাহুল্লাহ। এই বোর্ডের অধীনে হাজারো পুরুষ-মাদরাসার ছাত্ররা যেমন পরীক্ষা দেয় তদ্রূপ মহিলা-মাদরাসার ছাত্রীরাও পরীক্ষা দেয়। তাকমীল [মাস্টার্স] পড়ুয়া ছাত্ররাও যেমন এই বোর্ডের আওতাভুক্ত তদ্রূপ তাকমীল [মাস্টার্স] পড়ুয়া ছাত্রীরাও এর আওতাভুক্ত। অর্থাৎ এই বোর্ডে উচ্চশিক্ষার জন্য পুরুষরা যেমন রয়েছে তেমন মহিলারাও রয়েছে। কই কোনদিন তো আল্লামা শফি বললেন না যে, মহিলারা মিযান[প্রাইমারি লেবেল] পড়ার পর আর পড়তে পারবে না। এতটুকুই যথেষ্ট তাদের জন্য। বরঞ্চ উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি মহিলাদের উৎসাহ এমননি জোর তাগিদও দিয়ে থাকেন। এটাই বাস্তব। এটাই সত্য।
তাহলে সম্প্রতি যে কথাটি বলেছেন তার ব্যাখ্যা কী? এর ব্যাখ্যা তো অনেক সহজ। যদি শিয়ালের মতো মুরগির স্বাধীনতা চাওয়ার অভ্যেস না থাকে আরকি!
মেয়েরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে এতে আশাকরি কেউ বাধা দিবে না। কিন্তু উচ্চশিক্ষার জন্য যদি আমার মুসলিম বোনকে কেউ নাস্তিকতার পাঠ শিখায় তাহলে তো আমি বারণ করবই। উচ্চশিক্ষার জন্য যদি আমার বোনের সম্ভ্রমহানি হয় তাহলে তো আমি বাধা দিবই। উচ্চশিক্ষার জন্য যদি আমার বোনকে সহপাঠিদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাহলে তো আমি প্রতিবন্ধক হবই।
আমার বাংলাদেশের কলেজ-ইউনিভার্সিটির কথা বাদই দিলাম। প্রাইমারির মেয়েরাও এখন নিরাপদ নয়। কখনো শিক্ষক আবার কখনো সহপাঠীদের দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে— যা প্রায়ই খবর পাওয়া যায়। জীবনের সূচনাতেই কোমলমতি এই শিক্ষার্থীরা পদে পদে হোঁচট খাচ্ছে! লজ্জার ভয়ে না পারছে কিছু বলতে না পারছে সইতে! সতিত্ব হারানোর কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে বড় হচ্ছে আর পুরুষদের ঘৃণা করা শিখছে। কেউ কেউ আবার নিজের আত্মমর্যাদার কথা বাদ দিয়ে বেছে নিচ্ছে নিষিদ্ধ কোন পথ!
এহেন দূরাবস্থা যখন জেনারেল শিক্ষাব্যবস্থার নিত্যদিনের দৃশ্যপট তখন একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আল্লামা শফি কীভাবে তার মেয়েকে স্কুলে পাঠায়? কীভাবে সে তার ভক্তদের বলে মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে?
শিক্ষাব্যবস্থা সুষ্ঠু করে তোলার জন্য লেখালেখি, কলমবাজি, নিউজ, টকশো তো কম হল না। কিন্তু সরকার আজ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পারেনি আমার বোনের নিরাপদ লেখাপড়া করার সুযোগ করে দিতে, পারেনি শিক্ষকের হাত থেকে ছাত্রীকে বাঁচাতে,পারেনি ইভটিজিংয়ের কবল থেকে আমার বোনকে রক্ষা করতে। যখন রাষ্ট্র ব্যর্থ তখন এ ছাড়া পথ কি? নিজের মেয়েকে তো পড়ার নামে আর আগুনে নিক্ষেপ করতে পারে না কোন বাবা। কেউ তো নিজের মেয়েকে ধর্ষিতা হতে দিতে পারে না।
তারপরও হুজুর কথাগুলো একটু ব্যাখ্যাসহ বলতে পারতেন তাহলেই এত বিভ্রান্তির সূত্রপাত হত না।
ছাত্র, জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম,ঢাকা।
Copyright © 2025 Samakaler Kontho. All rights reserved.