
তুরস্ক ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠী ও সংস্থা সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যার রায় নিয়ে তাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছে। এই রায়ের সমালোচনা করে তারা বলেন, এ রায়ে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে, খাসোগির পরিবার ও যুক্তরাষ্ট্র এ রায়ের প্রশংসা করেছে।
২০১৮ সালে তুরস্কে সৌদি দূতাবাসে জামাল খাসোগিকে হত্যার দায়ে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড দেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ। ওই ঘটনায় ৩১ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিলো বলে জানায় সৌদি কৌসুলির কার্যালয়। সোমবারের রায়ে ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি তিনজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও বাকি তিনজনকে খালাস দেয়া হয়।
তবে, এ ঘটনায় সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মেদ বিন সালমানের ঘনিষ্ঠ দুই সহকারীকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে। সৌদি আরবের সহকারী কৌঁসুলি শালান আল-শালান জানান, তদন্তে জানা যায়, হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
সৌদি আরবের এ রায় নিয়ে প্রচণ্ড অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণকারী এ সংস্থার মুখপাত্র আহমেদ বেনচেমসি জানান, এ বিচার প্রক্রিয়ায় প্রথম থেকেই গোপন রাখা হয়েছে। এমনকি এখনও (রায় দেয়ার পরও) সেই গোপনীয়তা চলছে।
বেনচেমসি বলেন, ‘আমরা জানি না কারা মুখোশ পরিহিত চক্রান্তকারী। আমরা এও ঠিক করে জানি না, কাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, উচু পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তদন্তের মধ্যে আনেন সৌদি কৌঁসুলিরা।
এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যাগনেস কালামার্দ জানান, আর যা কিছুই হোক না কেন, এই রায়ে সুবিচার নিশ্চিত করা হয়নি। এক টুইটার বার্তায় তিনি লিখেন, ‘আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী খাসোগিকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়। আর এর জন্য দায়ী সৌদি আরব রাষ্ট্র।’
তিনি আরও লিখেন, ‘হত্যাকারীরা দোষীসাব্যস্ত হলো, মৃতুদণ্ডের রায় পেলো। কিন্তু মূল পরিকল্পনাকারীরা মুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে তদন্তও করা হয়নি। এটা ন্যায়বিচার বিরোধী। এটি হাস্যকার।‘ একইভাবে এ রায়ের নিন্দা জানিয়েছে রিপোর্টাস উইথাউট বর্ডারস, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
একদিকে সৌদি কৌসুলির কার্যালয় খাসোগির হত্যাকাণ্ডকে পূর্বপরিকল্পিত না বললেও, তুরস্কের গোয়েন্দারা প্রথম থেকে একে পূর্বপরিকল্পিত হিসেবে দাবি করে আস। রায়কে ‘কেলেঙ্কারি যুক্ত’ হিসেবে উল্লেখ করে তুরস্ক সরকার বলেছে, এতে দোষীদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
তবে, সৌদি আরবের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। ভয়াবহ অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে এ রায় ‘গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো রায়ের সমালোচনা করলেও খাসোগির পরিবার এতে খুশি হয়েছে। এক টুইটার বার্তায় খাসোগির ছেলে সালাহ খাসোগি জানান, তার পরিবার ন্যায় বিচার পেয়েছে। এ জন্য সৌদি আরবের সরকারি কৌসুলিদের ধন্যবাদ দেন তিনি।
আই.এ/