রাজধানীর চার দেয়ালে বসবাসকারী মানুষগুলো কখনো কখনো নিজেদের আবাস ঘরকে কারাগার মনে করেন। বিষন্ন মনে বিভিন্ন সময় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। কারণ একটাই চার দেয়ালে অভ্যন্তরে থেকে পাশের ঘর কে আছে কী করছে তা অনেকটা জানা যায় না। হয় না পারস্পরিক বন্ধন।
প্রতিবেশীর যে একটা আত্মার বন্ধন হয় সেটা কেবলই গ্রামিণ স্মৃতি বলে শহুরে মানুষদের বক্তব্য। এই আক্ষেপ গোছাতে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে আয়োজিত হলো ‘পাড়া উৎসব’ নামে প্রতিবেশিদের মিলনমেলা। এতে রয়েছে বেশ কিছু স্টল। যেগুলোতে রয়েছে খাবার, পিঠা, বাচ্চাদের খেলনা, বাসা বাড়ির আসবাব পত্রসহ নানা জিনিসের প্রদর্শনী ও বিক্রয় সুবিধা।
প্রতিবেশীদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করতে এ উৎসবের আয়োজন করে গুলশান সোসাইটি। শুক্রবার সকালে রাজধানীর গুলশানের ৬০, ৬১ ও ৬২ নং সড়কের বাসিন্দাদের নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক সহযোগিতায় ও গুলশান সোসাইটির আয়োজনে ‘পাড়া উৎসব’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সিটি মেয়ার আতিকুল ইসলাম।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার, সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান, সংসদ সদস্য নাহিদ এজহার খান, স্থানীয় কাউন্সিলর, ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং গুলশানের বিভিন্ন বয়সের এলাকাবাসী।
এসময় মেয়র বলেন, আমরা এমন একটি শহর চাই, যেখানে কোনো রকম ভেদাভেদ থাকবে না। সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি নগর গড়াই আমার লক্ষ্য। সমাজে ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ে, শিশু-বয়স্ক সবার অংশগ্রহণ থাকতে হবে। কেউ পাবে কেউ পাবে না, কারো সুযোগ থাকবে কারো থাকবে না সেটি হবে না। আমাদের শিশুরা খেলার সুযোগ পাচ্ছে না, তাদের বন্ধু হচ্ছে না, তারা কম্পিউটার আর বইয়ে ডুবে থাকে, এভাবে চলতে থাকলে তারা বিষন্নতায় ভুগবে, সেটি আমরা মেনে নিতে পারি না। আরও আশঙ্কার বিষয় হলো খেলাধুলা ও সামাজিক মেলামেশার অভাবে আমাদের এই তরুণ প্রজন্মের মাদকাসক্ত ও নেশাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমরা অবশ্যই এটি চাই না। আর সেজন্যই আমাদের এই উদ্দ্যোগ।
[caption id="attachment_61142" align="alignnone" width="570"] মার্কিন রাষ্ট্রদূত অল রবার্ট মিলার ও মেয়র আতিকুল ইসলাম[/caption]
তিনি বলেন, আমরা চাই এলাকাবাসী সবাই আজ সারাদিন এই উৎসব উপভোগ করবেন, পরিবার নিয়ে রাস্তায় আসবেন, নিজের প্রতিবেশীদেরকে চিনবেন, সামাজিক সম্পর্ক দৃঢ় হবে, নিজ এলাকা ও প্রতিবেশীর জন্য নিজেদের মধ্যে দায়িত্বশীলতা বাড়বে। আর এতে করে সামাজিক অন্যায়, অবিচার, অস্থিরতা কমে আসবে। এভাবেই আমরা সবাই মিলে সবার ঢাকা গড়ে তুলতে চাই।
মেয়র আতিকুল ইসলাম আরো বলেন, আমরা চাই বাবা-মারা তাদের সন্তানদের নিয়ে, দাদা-দাদী, নানা-নানীরা তাদের নাতি-নাতনিদের নিয়ে নেমে আসবে, সারাদিন গল্প, খেলা, আড্ডায় তারা মানসিকভাবে বিকশিত হবে, তাদের বন্ধুত্ব হবে, তারা একসাথে মিলেমিশে একে অন্যের এবং এই এলাকার উন্নয়নে কাজ করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মেয়র আতিক- মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলারসহ অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথি ও এলাকাবাসী নিয়ে বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। তারা দেশীয় পিঠার স্টলে পিঠা উপভোগ করেন, ম্যাজিক শো দেখেন, বায়োস্কোপ ও পুতুল নাচ উৎসব আয়োজনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।
এছাড়া বিভিন্ন খাবারের স্টল, স্বাস্থ্যসেবা স্টল, সিটি কর্পোরেশন স্টল, শো-পিস, পাটের তৈরি ব্যবহার্য্য পণ্যসহ আরও অনেক স্টল আয়োজনকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। সেখানে রাখা হয়েছে বড় উইশ বোর্ড, শিশুদের ছবি আঁকার জন্য ক্যানভাস ও রং তুলি, ক্যারাম বোর্ড, দাবাসহ নানান খেলার সামগ্রী। এ সময়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষ সেগুলো নিয়ে আনন্দে মেতে উঠেন।
অনুষ্ঠানস্থলে মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার ক্যারাম ও দাবা খেলেন। পাশাপাশি বাংলার ঐতিহ্য বহনকারী গানের তালে তালে বায়োস্কোপও দেখেন। পরে মেয়র আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে নিয়ে পুরো উৎসবস্থল ঘুরে দেখেন।
/এসএস