বাইতুল মুকাররম দক্ষিণ চত্বরে মিলাদুন্নবী সা. উপলক্ষে চলছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত ইসলামী বইমেলা। পুরো রবিউল আউয়াল মাস জুড়ে চলবে এই বইমেলা। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এই বইমেলা প্রতিবছর রমজানে ও রবিউল আউয়ালে দুইবার অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
রবিউল আউয়াল উপলক্ষে শুরু এই বইমেলা শুরু হয় গত ৯ নভেম্বর শনিবার। ধর্মসচিব মোঃ আনিছুর রহমান মেলার উদ্বোধন করেন। মেলায় ৬১ টি স্টল অংশগ্রহণ করছে। প্রতিদিন সকাল ১০টাথেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে মেলা। আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এ বইমেলা।
[caption id="attachment_57751" align="alignnone" width="561"] বাইতুল মোকাররমে চলছে ইসলামী বইমেলা, একটি স্টলে পাঠকের ভিড়। ছবি: পাবলিক ভয়েস[/caption]
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমির বইমেলা নিয়ে পাঠক, ক্রেতা-বিক্রেতা থেকে শুরু করে মিডিয়া-সাংবাদিকদের উচ্ছাস থাকে চোখে পড়ার মতো। তবে ইসলামী ফাউন্ডেশনের বইমেলা ঘিরে তেমনটা লক্ষ্য করা যায় না। ইসলামী গ্রন্থের সমাহার বলেই মিডিয়ার আচরণ কিছুটা সৎ মায়ের মতো বলে মনে করেন পাঠক-বিক্রেতারা। তবে কেউ কেউ এ দাবি মানতে নারাজ।
তর্ক-বিতর্কের পর মেলায় পাঠকের উপস্থিতি ও বেচা-বিক্রি কেমন চলছে এসব নিয়েই পাবলিক ভয়েস মুখোমুখি হয় পাঠক ও বিক্রেতাদের। কথা বলেন পাবলিক ভয়েসের সহকারী বার্তা সম্পাদক এইচএম আবু বকর। ক্যামেরায় ছিলেন মুহসিন মোল্লা।
বইমেলায় এসে কেমন লাগছে? এমন এক প্রশ্নের জবাবে বইমেলায় আগত রবিউল ইসলাম নামে এক পাঠক বলেন, ‘এখানে এসে খুবই ভালো লাগছে। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই বইমেলা আরও আড়ম্বরপূর্ণ হতে পারতো। বইমেলার আয়োজকদের পক্ষ থেকে প্রচারণা ও পরিধি নির্ধারণের ক্ষেত্রে আন্তরিকতার অভাব লক্ষণীয়’।
[caption id="attachment_57749" align="alignnone" width="559"] বই দেখছেন এক প্রবীণ পাঠক। ছবি: পাবলিক ভয়েস[/caption]
পাঠকদের সবধরণের বইয়ের চাহিদা এখান থেকে মিটছে কিনা? ‘এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ হাসান নামে একজন ক্রেতা বলেন, শিশুতোষ বইয়ের ঘাটতি প্রকট। ইসলামে শিশুর মনন পরিচর্যার অনেক গুরুত্ব থাকলেও এই বইমেলায় বাচ্চাদের চরিত্র গঠনমূলক বইয়ের যথেষ্ট কমতি রয়েছে। লেখক, প্রকাশকদের এবিষয়ে আরও গ্রন্থ রচনা ও বাজারজাত করা উচিত’।
এই বইমেলার মাধ্যমে দেশজুড়ে ইসলামের বিশুদ্ধ চিন্তাধারা ছড়িয়ে দেয়ার কতোটা প্রয়াস পাবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মাকতাবাতুল হাসানের প্রকাশক রাকিবুল হাসান বলেন, আসলে ক্ষুদ্র পরিসরের এই বইমেলার মাধ্যমে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের সর্বত্র ইসলামের সুবাস ছড়িয়ে দেয়া সহজ নয়, বিভাগ এবং জেলাভিত্তিক এমন বইমেলা আরও আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে যাওয়া সহজ হবে ইনশাআল্লাহ।
[caption id="attachment_57748" align="alignnone" width="559"] মাকতাবাতুল হাসানের তিনটি বই। ছবি: পাবলিক ভয়েস[/caption]
আয়োজক হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভূমিকা কি সন্তোষজনক? এমন প্রশ্নের জবাবে হাফেজ শাহাদাত হোসেন প্রধানিয়া নামক একজন প্রকাশক বলেন, আয়োজক হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্তব্য ছিলো ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় এই বইমেলার প্রচার করা। আমরা ধর্ম মন্ত্রনালয়ে এই পরামর্শও দিয়েছিলাম কিন্তু তারা তা মূল্যায়ন করেননি। তবে এবছর অন্যান্য সময়ের চেয়ে ক্রেতাদের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। এর অনেকটাই অনলাইন প্রচারণার সুফল বলে তিনি জানান।
[caption id="attachment_57750" align="alignnone" width="561"] পছন্দের বই খুঁজছেন পাঠক। ছবি: পাবলিক ভয়েস[/caption]
আপনারা পাঠকদের কাছে কিভাবে পৌঁছাতে চান? এমন প্রশ্নের জবাবে অভিজাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স এর প্রকাশক নূর মুহাম্মদ আবু তাহের বলেন, ‘ইদানিং তরুণ লেখকরা ভালো লিখছেন। তরুণদের ভালো কাজগুলি জাতির সামনে তুলে ধরতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। হালের বিজ্ঞানভিত্তিক বইগুলো পাঠকদেরকে বেশি টানছে। আমরা অপসাহিত্যের বিরাট সয়লাব মোকাবেলায় একটা সুন্দর ধারা সৃষ্টি করতে চাই। সুতরাং অন্যদের সমালোচনা না করে পাঠকদের চাহিদার খোরাক যোগার করতে মনোযোগী হওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে’।
মেলায় পাঠকের সাড়া কেমন পাচ্ছেন জানতে চাইলে গার্ডিয়ান প্রকাশক বলেন, এখনো ফাইনাল কথা বলার সময় হয়নি। তবে গত কয়েকদিনে পাঠকের যেভাবে সাড়া পাচ্ছি তাতে বিগত বছরের চেয়ে অবশ্যই ভালো বলবো। এভাবে চললে ভালো একটা ফলাফল এবার পাবো বলে মনে হয়।
মানুষ আসলে বই পড়ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোটা দাগে কেউ বই পড়ছে না সেটা বলবো না। একটি মানসম্পন্ন বই লেখার জন্য, নিজের স্কিল ডেভেলপ করার জন্য যে পরিমাণ ভালো বই পড়া দরকার হয়তো সে পরিমান বই পড়া হচ্ছে না; কিন্তু প্রচুর বই পড়ছে মানুষ। কারণ আমরা দেখছি, পাঠকের জন্য আমরা যখন একটি বই নির্মাণ করি তখন শত শত পাঠক, হাজার হাজার পাঠক বই কিনছে। বই কিনে নিশ্চয়ই কেউ ফেলে রাখে না। অবশ্যই তারা বই পড়েছে।
[caption id="attachment_57746" align="alignnone" width="561"] গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স এর একটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচণ হয় মেলায়। ছবি: পাবলিক ভয়েস[/caption]
মেলায় স্টল বরাদ্ধের ক্ষেত্রে আয়োজক কর্তৃপক্ষ ইসলামী ফাউন্ডেশনের বৈষম্যমূলক নীতির সমালোচনা করেন অনেকে। তারা বলেন, খুচরা বিক্রেতাদের দাপটে মেলায় অভিজাত প্রকাশনা সংস্থা অংশগ্রহণ করতে পারে না। যাচাই-বাচাই ছাড়া অবৈধ যোগসাজশে আয়োজক কর্তৃপক্ষ মানহীন খুচরা বিক্রেতাদের স্টল বরাদ্ধ দেয়া। তাদের থেকে চড়া মূল্যে বিভিন্ন নামী-দামী প্রকাশনা সংস্থাকে স্টল কিনতে বাধ্য করা হয়।
এ ব্যাপারে দারুস সালাম প্রকাশনীর পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ইসলামী ফাউন্ডেশনের এ বইমেলা নিয়ে প্রকাশকদের মান-অভিমান, অভিযোগ-অনুযোগের কমতি নেই। কিন্তু সেসব আমলে নেয় না কর্তৃপক্ষ। এমনকি অভিজাত প্রকাশনীকে কৌশলে মেলায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয় না বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বাড কম্প্রিন্ট নামক একটি প্রকাশনা সংস্থার নাম উল্লেখ্য করে বলেন, তাদেরকেও এবারের বইমেলায় স্টল দেয়া হয়নি।
[caption id="attachment_57747" align="alignnone" width="561"] কথা বলছিলেন দারুস সালামের পরিচালক। ছবি: পাবলিক ভয়েস[/caption]
এ ব্যাপারে বাড কম্প্রিন্টের স্বত্তাধীকারী মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন সত্যতা স্বীকার করে বলেন, প্রতিবছরই নানান কৌশলে মানসম্পন্ন প্রকাশনা সংস্থাকে মেলা অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। ফলে তিক্ততার কারণে অনেকেই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ইসলামী বইমেলায় অংশগ্রহণ করেন না। আমরাও এবার অংশগ্রহণ করিনি। তবে আমাদের প্রকাশিত বই মেলায় পাওয়া যায়। অনেক বিক্রেতা আমাদের থেকে বই নিয়ে মেলায় বিক্রি করেন।
/এসএস