সুন্দরবনের কারণে বিস্তৃত হতে পারেনি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। ঘূর্ণিঝড়টি বনের ভেতর প্রবেশের পর দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় আবারও রক্ষা পেয়েছে উপকূলীয় জনগণ। ২০০৭ সালের সিডর এবং ২০০৯ সালের আইলাতেও একইভাবে এই অঞ্চলকে আগলে রেখেছিল সুন্দরবন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলে বাঁধের মতো। ঘূর্ণিঝড় প্রায় একশ কিলোমিটার প্রশস্ত এই বন পার হয়ে আসতে স্বাভাবিকভাবেই তীব্রতা হারিয়ে ফেলে। সুন্দরবন ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত সহ্য করে ব্যাপক প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতি থেকে এই জনপদকে রক্ষা করে। অথচ এই বনটিকে রক্ষায় গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো আমরা এটিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছি।
এবারের ঘূর্ণিঝড়ের প্রবলতা কমার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাক্টিভিস্টরা আবারও সুন্দরবন বাঁচানোর বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে এসেছেন। এমনকি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমানও সংবাদ সম্মেলনে সুন্দরবন রক্ষায় আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। শনিবার রাত ৯টা থেকে উপকূল অতিক্রম করে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বাংলাদেশ ও ভারতীয় সুন্দরবন সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে। তবে সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় প্রবেশের পর সেটি দুর্বল হয়ে যায়।
সুন্দরবন থেকে এটি ঘূর্ণিঝড় আকারে বের হতে পারেনি। ধীরে ধীরে ভোরের দিকে গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। সুন্দরবনের কারণে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হওয়া প্রসঙ্গে আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি সুন্দরবনের ভারতীয় অংশ দিয়ে প্রবেশ করে বাংলাদেশের অংশে এসে বনের মধ্যে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে দুর্বল হয়ে গেছে। সুন্দরবনের গাছপালার মধ্যে ঝড়ের শক্তি হ্রাস পেতে থাকে। লোকালয়ে প্রবেশের আগেই এটি গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়।’
সুন্দরবন নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা বলছেন, সুন্দরবন বিশ্ব প্রাণবৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষার অন্যতম শক্তি। অথচ তেলের ট্যাঙ্ক ডুবে জল দূষিত হওয়া, বিভিন্ন শিকারি ও বিধ্বংসী নানা শিল্প-উদ্যোগে বারবারই ধ্বংসের মুখে পড়েছে সুন্দরবন। তেলগ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতা খান আসাদুজ্জামান মাসুম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে, আমরা কি সুন্দরবন বাঁচাতে পারি না?’
আই.এ/