নুসরাত জাহান রাফি ছাড়াও ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন তার মোবাইল ফোনে নুসরাতের দুই বান্ধবী নিশাত সুলতানা ও নাসরিন সুলতানা ফুর্তির ভিডিও ধারণ করেন। নুসারতের দুই বান্ধবী সোমবার (৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিতে এসে এ তথ্য জানান।
ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় সোমবার (৪ নভেম্বর) আদালতে জবানবন্দি দিতে এসেছিলেন ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির দুই বান্ধবী নিশাত সুলতানা ও নাসরিন সুলতানা ফুর্তি।
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি অধ্যক্ষের কক্ষে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন এমন অভিযোগে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা করেন নুসরাতের মা।
সেই মামলার জের ধরে নুসরাতসহ অন্যদের থানায় ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং সেখানে করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস করার অভিযোগে নুসরাতের মৃত্যুর পর ১৫ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের হয়।
দুই বান্ধবী জানান, উনি (মোয়াজ্জেম) বলেন, আগে এই দু’জনের কথা শুনি। আমি ও নুসরাত যখন ওসির রুমে বসেছিলাম তখন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন নুসরাতকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তখন তিনি নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। নুসরাত অপ্রস্তুত ছিল। সে মুখ ঢাকছিল। ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন বারবার তাকে মুখ থেকে হাত সরাতে বলেন। নুসরাতের জিজ্ঞাসা শেষ হলে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আর আমার বক্তব্যও ভিডিও করেন। আমাকে নেকাব খুলে কথা বলতে বলেন। খুলতে না চাইলে তিনি বলেন, নেকাব থাকলে কথা শুনতে পারছি না। তুমি নেকাব খুলে জোরে কথা বলো। তারপর নিশাতকে ডেকে আনে। পরে নিশাতের বক্তব্য ভিডিও করে। এরপরে সবাই চলে আসি। কিছুদিন পর দেখতে পাই নুসরাতের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।'
তারা আরও জানান, যখন ভিডিও করে তখন ফুর্তি ও নুসরাত দুজন ছিল। ফুর্তিকে জিজ্ঞাসা করি, তোদেরকেও কি ভিডিও করেছে? তখন বলে, আমাকে ও নুসরাত দুজনকে ভিডিও করেছে। এরপর তিন জন অন্য রুমে গিয়ে বসি। তারপর কিছুদিন পর ইউটিউব, ফেসবুকে ভিডিওটি প্রচার হয়। এ নিয়ে ফেনীতে গণ্ডগোল ও মানববন্ধন হয়।
প্রসঙ্গত, নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিমের পরীক্ষার্থী ছিলেন। মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছিলেন তিনি। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলাটি তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়।
আই.এ/