
৫০০ কোটি টাকার অনিয়ম উদঘাটিত হয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে (ইফা)। ৭৪ কোটি টাকা ফেরত দিয়ে মহাহিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়ের কাছে অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি চেয়েছেন ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (ডিজি) সামীম মোহাম্মদ আফজাল। ১৩৪টি অনিয়মের ব্যাপারে ইফার জবাব পাওয়ার পর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
গণমামধ্যমের খবরে জানা গেছে, খসড়া প্রতিবেদনে অনিয়মের টাকার অঙ্ক প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চার দফায় ৭৪ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেয়া হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার পরই সুনির্দিষ্ট অঙ্ক জানা যাবে। ২০০৯-১৮ অর্থবছরের ইফার ব্যয়ের বিষয়ে সরকারি নিরীক্ষায় অনিয়মের চাঞ্চল্যকর চিত্র ফুটে ওঠে। চলতি বছরের ৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত এই নিরীক্ষা চলে।
গত ২৩ অক্টোবর সরকারি কোষাগারে প্রথম প্রায় ৩২ কোটি টাকা জমা দিয়ে একটি নিরীক্ষা আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য অনুরোধ জানান ডিজি। এরপর আরো তিন দফায় জমা দেয়া দেন প্রায় ৪২ কোটি টাকা। গত ৩০ অক্টোবর নিরীক্ষা আপত্তির জবাব দেন ইফা ডিজি।
২০০৯ সাল থেকে ইফার ডিজির দায়িত্ব পালন করে আসছেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত বিচার বিভাগের কর্মকর্তা সামীম মোহাম্মদ আফজাল।
এ বিষয়ে ইফার সচিব কাজী নুরুল ইসলাম জানান, অনিয়মের বিষয় জানতে পেরেছেন। এ ব্যাপারে তার দফতরের মাধ্যমে টাকা ফেরত দেয়ার কোনো বিষয় ঘটেনি এবং তার দফতরকে এ বিষয়ে অবহিতও করা হয়নি। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ইফা ডিজির ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলব করে।
গত জুন মাসে অনিয়মের অভিযোগে ধর্ম মন্ত্রণালয় ডিজিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলে তার অনিয়মের বিষয় আলোচনায় আসে। ওই শোকজ নোটিশেও অনিয়মের অভিযোগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলে ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানোর বিষয় স্থান পায়।
পরে অবশ্য ইফা বোর্ড কিছুটা নমনীয় হয় এবং ডিজির কিছু ক্ষমতা কমিয়ে তার চুক্তির মেয়াদ পর্যন্ত দায়িত্ব অব্যাহত রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয় সূত্র জানায়, ইফা ডিজির অনিয়মের বিষয় সামনে আসার পরই গত জুলাই মাসে বিশেষ নিরীক্ষাকার্যক্রমে হাত দেয়া হয়। এক মাসের নিরীক্ষায় ইফার বিভিন্ন প্রকল্পসহ ব্যয়ের অনেক খাতেই অনিয়ম ধরা পড়ে। বিষয়টি ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো হয়।
একই সাথে ইফা ডিজির কাছে সুনির্দিষ্ট অনিয়মের বিষয়গুলোর জবাব চাওয়া হয়। ইফা সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ২৫০ পৃষ্ঠার নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ১৩৪টি খাতে অনিয়মের চিত্র এসেছে। প্রায় সবগুলো অনিয়মের সাথেই ইফা ডিজির সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এর মধ্যে নিয়মবহির্ভূতভাবে ডিজির বাসায় ইফার একটি গাড়ি ব্যবহারের বিষয়ও রয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ইফার অনিয়ম বিশেষ করে মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে অনিয়মের সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় অবগত আছে। সরকারি নিরীক্ষায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন আসার পরই তার আলোকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান। ইফার ডিজি তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর থেকে সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন।
আই.এ/