
আমন ধানের স্বস্তিদায়ক ফলন হওয়ায় বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে। কমতে শুরু করেছে চালের দাম। এ বছর আমন ও বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। আর সম্ভাব্য এই ফলনের কারণে সরকার মধুর বিড়ম্বনায় পড়তে পারে বলেও তার আশঙ্কা। চালের দাম কমায় ক্রেতাদের স্বস্তি ধরে রাখার পাশাপাশি প্রান্তিক কৃষকের জন্য ধান-চালের ন্যায্য দাম নিশ্চিতে চাল রফতানির ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের চালের দামে প্রভাব ফেলেছে নতুন ধান। মোটা ও সরু—উভয় ধরনের চালের দাম কেজিতে কমেছে তিন থেকে পাঁচ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের গ্রামগঞ্জের বাজারেও সব ধরনের চালের দাম কমেছে। বর্তমানে প্রতিকেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকা দরে। এক মাস আগে এই মানের চাল বিক্রি হয়েছে ৩২ থেকে ৩৬ টাকায়। চাল ব্যবসায়ীদের মতে, অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে চালের দাম কমছে। কৃষি বিপণন অধিদফতরের ৩০ অক্টোবর দেওয়া হিসাবে, বর্তমানে দেশে মোটা চালের পাইকারি মূল্য প্রতি কেজি ২৫ থেকে ২৬ টাকা। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকায়। রাজধানীতে সরু চাল সম্পর্কে নানাজনের নানামত রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, সরু বা চিকন চালের দামের ওপর চালের বাজারের হিসাব-নিকাশ মেলানো ঠিক নয়। রাজধানীতে সরু চাল বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। মিনিকেট নামের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। যদিও এই নামে দেশে কোনও ধান উৎপাদন হয় না। ইরিসহ বিভিন্ন মোটা জাতের ধানের চালকে মেশিনে প্রক্রিয়াজাত করে সরু করে মিনিকেট নামে বিক্রি করেন চাল ব্যবসায়ীরা। নাজিরশাইলও বিক্রি হচ্ছে একই দামে।
এক মাস আগে উভয় ধরনের চালই বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নতুন ধান মাঠ থেকে উঠতে শুরু করছে। কয়েকদিনের মধ্যে নতুন চাল বাজারে উঠবে। তখন পুরান চালের চাহিদা থাকবে না। তাই আগের কেনা চাল সবই বাজারে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে আগের তুলনায় বাজারে চালের সরবরাহ বেড়েছে। চালের দাম কমার ওপছনে এটি বড় কারণ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাদামতলী-বাবুবাজার চাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন দাবি করেন, প্রতিদিনই চালের চাহিদা কমছে।
মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়েছে এবং বহুবিধ রোগ থেকে রেহাই পেতে চিকিৎসকদের পরামর্শে ভাতের ওপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। অপরদিকে সরকারের নজরদারি ও কৃষকের চেষ্টায় বাম্পার ফলন হচ্ছে ধানের। ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বাড়ার কারণেই প্রতিনিয়ত দাম কমছে চালের।
এদিকে, এ বছর আমন ও বোরো উভয় ফসলই বাম্পার ফলন হবে বলে আগাম আভাস দিয়েছেন কৃষি ও খাদ্যমন্ত্রী। ফলে দেশ বাম্পার ফলনের মধুর বিড়ম্বনায় পড়তে যাচ্ছে এমনটা মনে করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কারণ, বাম্পার ফলন দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি, আবার উপযুক্ত দাম না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রান্তিক কৃষক। আর কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে ধান উৎপাদনে আগ্রহ হারাবেন।
এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় চাল রফতানির কথাও ভাবছে সরকার। ব্যবসায়ীরাও চাল রফতানি উৎসাহিত করতে প্রণোদনা চেয়েছেন। বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, চাল রফতানির অনুমতি দেওয়া আছে। তবে চাল রফতানিতে প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নয়। সেটি সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়। কাজেই এটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
এদিকে, সরকার আগামী ২০ নভেম্বর থেকে দেশের প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ৬ লাখ টন আমন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বছর ১ কোটি ৫৩ লাখ মেট্রিক টন আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত বছরও ১ কোটি ৫৩ লাখ টন আমন ধান উৎপাদিত হয়েছিল।
কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ধানের অতিরিক্ত উৎপাদন অনেক সময় বিড়ম্বনার কারণ হয়। এ বছর যা আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তিনি বলেন, চাহিদা মিটিয়ে চাল রফতানি করা যেতে পারে। এতে কৃষক লাভবান হবে। এক্ষেত্রে কৌশল কী হতে পারে, তা নিয়ে সরকারের ভেতরে আলাপ-আলোচনা চলছে।
আই.এ/