
পদ্মাসেতু নির্মাণের মেয়াদসহ ব্যয় বাড়ল হাজার কোটি টাকা । এবার একধাপে সময় বাড়ছে ১ বছর ৬ মাস। অর্থাৎ প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২১ সালের জুন মাসে। ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্র্রকল্পটি শেষ হওয়ার সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যয় বাড়ছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।
সিডিভ্যাট ও পরামর্শক খাতেই মূলত ব্যয় বাড়ছে। সর্বশেষ পদ্মাসেতু প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বুধবার ( ৩০ অক্টোবর) সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। সেতু বিভাগ আরও জানায়, প্রকল্পের মেয়াদ ১ বছর ৬ মাস বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পের চূড়ান্ত ডিপিপি পাঠানো হয়েছে।
প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবনা যাচাই-বাছাই করছে পরিকল্পনা কমিশনে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য দ্রুত সময়ে প্র্রকল্পটি একনেক সভায় পাঠানো হবে। সেতু বিভাগ সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, নদীশাসন ও পিয়ার নির্মাণে শুরু থেকেই সময় বেশি লেগেছে। ফলে পদ্মাসেতু প্রকল্পটি শেষ করতে আরও ১ বছর ৬ মাস সময় লাগবে। প্রকল্পের সময় ও মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
সময় বৃদ্ধির জন্য নানা ধরনের যৌক্তিকতা দেখিয়ে সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ মূল নদীর ৪০টি পিলারের মধ্যে ২২টি পিলার পুনঃনকশা করা হয়। প্রতিটি পিলারে একটি পাইল বৃদ্ধি করা হয়। এই কারণে আরও ৮টি পিলারের পাইল ড্রাইভিং কাজও স্থগিত ছিল। ফলে মোট ২২টি পাইল রিডিজাইন জরুরি হয়ে পড়ে। ইতোমধেই সবগুলো পিলারের পাইল রিডিজাইন সম্পন্ন করা হয়েছে।
এছাড়া কনস্ট্রাকশন ড্রয়িং ঠিকাদারকে ইস্যু করা হয়েছে। যথাসময়ে ঠিকাদারকে পাইলের নকশা ইস্যু করা সম্ভব না হওয়ায় ঠিকাদারের সিডিউল অনুযায়ী নির্মাণ কাজ ব্যহৃত হচ্ছে। ফলে মূল সেতুর নির্মাণ কাজও দেরি হচ্ছে। সেতুর মূল অংশে সাতটি মুডলে ৪১টি স্টিলের স্প্যান রয়েছে। প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। পদ্মায় ভার্টিকাল ঘুর্ণায়ন গভিরতা থাকায় কাজের গতি কমে যাচ্ছে।
এছাড়া ২২টি পিলার এবং পাইলের কনস্ট্রাকশন ড্রয়িং ঠিকাদারকে ইস্যু করতে দেরি হয়। অপরদিকে ২০১৫ সালে মাওয়া প্রান্তে বর্ষা মৌসুমে সাড়ে তিন থেকে চার মিটার সেকেন্ড স্রোতে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সাড়ে ৫ লাখ ঘনমিটারের দুই গর্তের সৃষ্টি হয়। ফলে ট্রায়াল সেকশনের কাজও দেরি হয়। এসময় জরুরি ভিত্ত্বিতে নকশা অনুযায়ী ভরাট করতে সময় লাগে। এ কাজে অতিরিক্ত ৬ মাস প্রয়োজন হয়।
নদীশাসন কাজেও দেরি: জাজিরা প্রান্তে নদীশাসনের ১১শ’ মিটার ট্রায়াল সেকশনের কাজ সঠিক সময়ে শেষ হয়নি। নকশা অনুযায়ী ট্রায়াল সেকশনের কাজ সঠিক হয়নি। এই কাজ শেষ করতে দেড় বছর বেশি সময় লাগে। ফলে মূল কাজ নির্মাণে দেরি হচ্ছে। নানা সমস্যার কারণে প্রকল্পের ব্যয় ব্যতিরেকে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
সার্বিক বাস্তবায়ন অগ্রগতি: অগ্রগতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ডিপিপি’র ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকার বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ৬৬ শতাংশ। প্রকল্পের শুরু থেকে আগস্ট ২০১৯ পর্যন্ত ব্যয়ের পরিমাণ ১৯ হাজার ৯৪৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। নতুন করে ব্যয়-সময় বৃদ্ধির ফলে তৃতীয়বারের মধ্যে সংশোধন করা হবে পদ্মাসেতুর প্রকল্পের কার্যক্রম।
আই.এ/