খেলা : বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশে যেন কালো মেঘের ঘনাঘটা। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলছিলো বিসিবি আর প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটারদের মধ্যে ইদুরদৌঁড় খেলা। বিসিবি সভাপতি পাপন এবং প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটারদের মধ্যে অঘোষিত লড়াই শেষ পর্যন্ত থেমে গেলেও ভারত সফরে সাকিবের যাওয়া না যাওয়া নিয়ে যে লুকোচুরি খেলা চলছিলো সে বিষয় এখন এলো আরও ভয়াবহ সংবাদ। বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্রের খবর, সাকিব আসলে ভারতে যেতে চাচ্ছেন না খবরটি ঠিক নয়। আসলে তিনি যেতে পারবেন না। সম্ভবত আইসিসির দুর্নীতি দমন সংস্থার রায়ে ১৮ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছেন সাকিব। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিশাল। বাজিকরদের কাছ থেকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও নিশ্চুপ থাকা।
আইসিসির কোড অব কন্ডাক্টে বলা আছে, বাজিকরদের কাছ থেকে ম্যাচ বা স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাতে হবে। না হয় আইসিসির দুর্নীতি দমন সংস্থা- আকসুকে অবহিত করতে হবে। সে খবর নিজে লুকিয়ে রাখলে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে। সাকিব তার কোনোটাই করেননি। বোর্ডের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে বিষয়টি সত্য।
আগামীকাল (মঙ্গলবার) নাকি সেটাই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। আর প্রকাশিত হওয়া মানে সাকিবের সামনে নিশ্চিত শাস্তির খড়গ ঝুলবে। আর তাই তার পক্ষে ভারত সফরে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে বোর্ড কর্তারা কাল (সোমবার) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চরম গোপনীয়তা ও নীরবতা অবলম্বন করেছেন। কিন্তু রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ খবর এদিক-ওদিক থেকে চাওর হতে থাকে। এ ছাড়া সাকিবের বিপক্ষে আরও একটি অভিযোগ উঠেছে, তা হলো বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনকে সরানোর নকশা আঁটা। বর্তমান বোর্ড ভাঙ্গার চেষ্টার অভিযোগও নাকি আছে সাকিবের বিরুদ্ধে। অবশ্য এই অভিযোগের সত্যতা নিয়ে সংশয় আছে। যদিও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ক্রিকেটারদের আন্দোলনের শুরু থেকেই বলে আসছেন, বড় ধরনের চক্রান্ত হয়েছে। সেই চক্রান্তর জাল ছিন্ন করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। তবে এসব বাদ দিয়েও বিসিবি সাকিবের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আইসিসি ইস্যূতে।
জানা যায়, সোমবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ক্রিকেট পাড়া সরব ছিল সাকিবকে নিয়ে। সবার মুখে একটাই প্রশ্ন ছিল, সাকিব কি আদৌ ভারত সফরে যাবেন? নাকি গ্রামীণফোনের সঙ্গে করা চুক্তির কারণে বোর্ডের কাছ থেকে কারণ দর্শানো নোটিশ পেয়ে ক্ষুব্ধ সাকিব, ভারত সফরে না যাওয়ার পাঁয়তারা করছেন? বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের মুখেও এমন কথা উচ্চারিত হয়েছে যে, সাকিবসহ কয়েকজন ভারত সফরে না যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে।
আর সে কারণেই সাকিব ইস্যুতে বোর্ড সভাপতি কাল বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বোর্ডে কাটিয়েছেন। বোর্ড পরিচালক, কোচিং স্টাফ ও ক’জন ক্রিকেটারের সঙ্গে কথাবার্তাও বলেছেন। তখন শোনা যাচ্ছিল, সাকিব ভারত সফরে যেতে চাচ্ছেন না। তাকে বোঝানোর চেষ্টা চলছে। আর সাকিব শেষ পর্যন্ত না গেলে সম্ভাব্য করণীয় কী হবে? তা নিয়েই নাকি সব কথাবার্তা হয়েছে। কিন্তু রাত বাড়ার সঙ্গেই সঙ্গেই হাওয়া পাল্টাতে আরম্ভ করলো। রাতে বোর্ডের ক’জন পরিচালকের কথায় কেমন যেন ভাব! রাত ১২টা গড়িয়ে মঙ্গলবার প্রথম প্রহর থেকেই কানাঘুষা, আরে সাকিব ভারত সফরে যাবেন কি যাবে না- সেটা বড় নয়। সাকিব আদৌ যেতে পারবেন কি না সেটাই দেখার।
বোর্ডের অন্তত দু’জন পরিচালকের মুখে এমন কথা শোনার পরও ঠিক বোঝা যায়নি আসল ঘটনা কী? পরে মধ্যরাতে (সোমবার দিবাগত রাত দুইটায়) দিকে জানা গেল খবর, যা শুনে শুধু সাকিব সমর্থকরা হয়ত মুষড়ে পড়বেন। আর বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভক্ত ও সমর্থক যে কারো মাথায় বাজ পড়ার উপক্রম হলো। সব মিলে চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের বিপক্ষে গুরুতর অভিযোগ সামনে উপস্থিত। অভিযোগের তীরে বিদ্ধ সাকিব শেষ পর্যন্ত কীভাবে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন?- সেটাই দেখার।
এদিকে ভারত সফর ও চুক্তি বিষয়ে বিসিবি সভাপতি বলেছেন, মেঘ এখনও কাটেনি। ভারত সফরে শুধু তামিম নন। আরও কিছু ক্রিকেটার নাও যেতে পারে। ভারতের মাটিতে টি-২০ এবং টেস্ট সিরিজ থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিতে পারেন দলীয় অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ক্রীড়া বিষয়ক সংবাদ মাধ্যম ইএসপিএন ক্রিকইনফো একটি জাতীয় দৈনিকের বরাত দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে।
বিসিবি সভাপতি ওই সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'আমি হলফ করে বলতে পারি, ওরা কয়েকজন ভারত সফরে যাবে না। আর আমাদের যখন কিছুই করার থাকবে না, তখন ওরা বিষয়টি আমাদের জানাবে।' সাকিবের ভারত সফরে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে বিসিবি সভাপতি বলেন, 'আমি ঠিক জানি না। সাকিবকে আজ (রোববার) আলোচনার জন্য ডেকেছি। দেখি সে কী বলে। তবে শুধু সাকিব নয়, আরও ক'জনকে নিয়ে বলছি। আমার কাছে তথ্য আছে যে, অন্যরাও ভারত সফরে না যেতে পারে।'
ক্রিকেটাররা ভেবেছিল তাদের ডাকা ধর্মঘট আরও কিছুদিন চলবে। কিন্তু সেটা দ্রুতই সমাধান হয়ে গেছে। এখন তাই ভারত সিরিজ থেকে নাম প্রত্যাহার করার জন্য তারা নতুন নতুন অজুহাত দাঁড় করাবে বলে দাবি পাপনের। যদিও তার পাওয়া তথ্যগুলো বিশ্বস্ত সূত্র থেকে পাওয়া নয় বলে উল্লেখ করেন বিসিবি কর্তা। তিনি তামিমের উদাহরণ দিয়ে বলেন, তামিম শুধু শেষ টেস্টটা থেকে ছুটি নিতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন সে পুরো সিরিজ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এখন যদি সাকিব ৩০ অক্টোবর জানায়, সে যাবে না। তাহলে আমরা কী করবো। অধিনায়ক কোথায় পাবো।
বিসিবি সভাপতি বলেন, ক্রিকেটারদের অযৌক্তিক দাবি তাদের মানা ঠিক হয়নি। কিন্তু মিডিয়া এমনভাবে বিষয়নি নিয়ে পড়লো যে, ক্রিকেটারদের দাবি-দাওয়া মেনে নিতে হলো। এছাড়া আইসিসির অন্যান্য সদস্য দেশের সঙ্গে কথা বলে তিনি জেনেছেন, তাদের দাবি মেনে নেওয়া ঠিক হয়নি। সাকিবের টেলিকো কম্পানির সঙ্গে চুক্তি বেআইনি বলে উল্লেখ করেন তিনি। জানুয়ারিতে ক্রিকেট দলের নতুন স্পন্সর স্বত্ত্বর জন্য দরপত্র আহ্বান করবে বিসিবি। সাকিবের চুক্তির দরুণ টেলিকোগুলো বিসিবির সঙ্গে চুক্তি করতে চাইবে না। কিংবা চুক্তি করলেও কম টাকা দিতে চাইবে বলে উল্লেখ করেন নাজমুল ইসলাম পাপন। সূত্র : জাগো নিউজ, সমকাল