
সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার খরচ কমানোর চিন্তা করছে সরকার। বিদ্যমান ব্যবস্থায় দুটি ক্যাটাগরিতে (প্যাকেজ-১ এবং প্যাকেজ-২ এর আওতায়) সরকারিভাবে হজে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ দুই প্যাকেজের মধ্যে একটির খরচ নির্ধারণ করা হয়েছিল (২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী) চার লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা আর অন্যটিতে খরচ নেওয়া হয় তিন লাখ ৪৪ হাজার টাকা।
আগামীতে এ দু’টি ক্যাটাগরির পাশাপাশি নতুন আরো একটি প্যাকেজের আওতায় কম খরচে বাংলাদেশীদের হজে পাঠানোর চিন্তা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নতুন ওই প্যাকেজে সরকারিভাবে হজের খরচ তিন লাখেরও কম হবে। অর্থাৎ ৩ নং ক্যাটাগরির (সি-প্যাকেজ) আওতায় সরকারিভাবে হজের খরচ গড়পরতায় জনপ্রতি ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা কম লাগবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, খরচের কথা চিন্তা করে অনেকে সরকারিভাবে হজে যেতে উৎসাহিত হন না। আবার সরকারিভাবে হজে গেলে প্রতারণার কোনো ঝুঁকিও থাকে না। মাঝামাঝি অবস্থায় প্রত্যেক হজযাত্রীই চান কম খরচে ঝক্কি ঝামেলামুক্ত ঝুঁকিহীন একটি হজ ব্যবস্থাপনা।
হাজীদের কথা চিন্তা করে নতুন এই প্যাকেজে মাত্র দুই লাখ ৬০ হাজার থেকে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকায় একজন হজযাত্রী সরকারিভাবে হজ পালনের সুযোগ পাবেন। ঢাকার আশকোনার হজ অফিসের সহকারী হজ অফিসার আবদুল আওয়াল গণমাধ্যমকে জানান, এবারের সদ্য সমাপ্ত হজে (২০১৯ সালে) সরকারি দুটি প্যাকেজ ছিল। এর একটি ছিল ‘প্যাকেজ এ’ এবং এ প্যাকেজে হজের খরচ নেয়া হয়েছিল চার লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। অন্য দিকে ‘প্যাকেজ বি’তে খরচ নেয়া হয় তিন লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যান ছয় হাজার ৯২৩ জন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব আনিছুর রহমান জানান, সদ্য শেষ হওয়া (২০১৯ সালের হজ) হজের খরচ আমরা কমিয়ে নতুন একটি প্যাকেজ ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে উঠেনি। আমরা এখন নতুন করে একটি খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি করছি। এ প্রস্তাব প্রথমে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাব। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই আমরা নতুন নামে অর্থাৎ ‘প্যাকেজ-সি’ নামে কম খরচের এ প্যাকেজ ঘোষণা করব।
হজ অফিসের পরিচালক মো: সাইফুল ইসলাম জানান, নতুন প্যাকেজে অনেক বেশি হাজী সরকারিভাবে হজে যেতে আগ্রহী হবেন। অনেকে নিজের সামর্থ্য ও খরচের কথা চিন্তা করে হজে যেতে আগ্রহী হন না। তবে নতুন প্যাকেজে হজের খরচ অনেক কমবে, তখন হয়তো সরকারিভাবে হাজীর সংখ্যাও বাড়বে।
হজের খরচ কিভাবে কমানোর চিন্তা করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ধর্ম সচিব জানান, সৌদি সরকারের কিছু ফি বা নির্ধারিত খরচ আছে সেখানে খরচ কমানোর আমাদের কোনো সুযোগ নেই। তবে আমরা নতুন প্যাকেজের হাজীদের আজিজিয়া এলাকায় (কাবা থেকে কিছুটা দূরে) ভাড়া বাসাতে রাখব। এখানে বাসা ভাড়ায় জনপ্রতি প্রায় আড়াই হাজার রিয়াল খরচ কম হবে। আবার এ প্যাকেজের হাজীদের প্রথমে মক্কায় না নিয়ে তাদের নেয়া হবে মদিনায়। প্রথমে মদিনায় গেলে সেখানেও জনপ্রতি হাজীদের বাসা ভাড়া বাবদ খরচ ৫০০ রিয়াল কম হবে।
এভাবেই হাজীদের মোট খরচ কিভাবে আরও কমিয়ে আনা যায় সেটি বিবেচনায় নিয়ে নতুন প্যাকেজে কম খরচে হাজী পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। সরকারি হাজীদের প্রশিক্ষণের সাথে জড়িত মীর আবদুর রহমান আকাশ জানান, খরচ কমলে সরকারিভাবে হাজীদের সংখ্যা বাড়বে। আমরা যারা মাঠপর্যায়ের কাজের সাথে জড়িত তারা বিষয়টি উপলব্ধি করে আগেও বেশ কয়েকবার কর্তৃপক্ষের নজরে আনার চেষ্টা করেছি। তবে এবার যদি সরকারি হাজীদের খরচ কমানোর এ উদ্যোগ নেয়া হয় তাহলে হাজীদের সংখ্যা নিঃসন্দেহে বাড়বে।
আই.এ/