সিরিয়ার সীমাবর্তী শহর রাস আল আইনের মধ্যাঞ্চল তুর্কি সমর্থিত সিরিয়ার বিদ্রোহীরা দখলে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন আঙ্কারার এক কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সেখানে রাতভর বোমা হামলার পর শনিবার সকালে ওই শহর নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তারা। তবে এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস’র (এসডিএফ) পক্ষ থেকে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
৭ অক্টোবর সিরিয়ায় আইএসবিরোধী অভিযান চালানোর ঘোষণা দেয় তুরস্ক। পরে ৯ অক্টোবরর সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ‘পিস স্প্রিং অপারেশন’ শুরু করে আঙ্কারা। অভিযানের অংশ হিসেবে তুরস্ক সমর্থিত সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি ইউফ্রেতাসের পূর্ব দিকে প্রবেশ করে। তুর্কি অভিযানে সহযোগিতার জন্য তারা অগ্রসর হচ্ছে। পরে কুর্দি নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় অভিযানে বিমান হামলা ও স্থল অভিযান জোরালো করে তুরস্ক।
এতে তিন শতাধিক ‘জঙ্গি’ নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে আঙ্কারা। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, এ অভিযানে ১১ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এতে এক তুর্কি সেনা নিহত হয়েছে। সেনারা বেশ কিছু লক্ষ্যবস্তু দখল করেছে। এছাড়া সীমান্তের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে তুমুল লড়াই চলছে।
তুর্কি ওই কর্মকর্তা জানিয়েছে, আঙ্কারা সমর্থিত সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘দ্য ন্যাশনাল আর্মি’ সিরিয়ার সীমান্তবর্তী শহর রাস আল আইনের মধ্যাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তুরস্ক সমর্থিত সিরিয়ার বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, রাস আল আইন ও তেল আবিয়াদের দখলকৃত ১৮ গ্রামের সড়ক ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে তবে কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ার ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস’র (এসডিএফ) মন্তব্য পাওয়া যায়নি। সিরিয়ার কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তুরস্কের চলমান অভিযান থামাতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ অভিযান নিয়ে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার ‘মারাত্মক পরিণতি’র বিষয়ে সতর্ক করেছেন আর রাজস্বমন্ত্রী স্টিভেন ম্নুচিন নতুন অবরোধ আরোপের হুমকি দিয়েছেন। এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই এলাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সরিয়ে নিলে অভিযান শুরু করে তুরস্ক। পরে তিনি কুর্দি ও ন্যাটো মিত্র আঙ্কারার মধ্যে যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরে মধ্যস্ততার প্রস্তাব দেন। তবে অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোয়ান। এরই মধ্যে সিরিয়ায় শরণার্থী সংকট ক্রমেই তীব্র হচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয় (ওসিএইচএ) শুক্রবার জানিয়েছে, তুরস্কের অভিযানের ফলে সেখান থেকে লক্ষাধিক বেসামরিক মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তবে সহায়তাকারী সংস্থাগুলো বলেছে, এ সংখ্যা সাড়ে চার লাখের অধিক হবে। সিরিয়ার কুর্দি নেতৃত্বাধীন প্রশাসন জানিয়েছে, ইতোমধ্যে দুই লক্ষাধিক মানুষ বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শুক্রবার সন্ধ্যায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যে যাই বলুক না কেন, আমরা কোনও অবস্থাতে এটা (সামরিক অভিযান) বন্ধ করবো না।’
আই.এ/