মতামত: রাজনীতি অর্থ রাজার নীতি। একজন রাজার নীতি সব সময় রাজ্যের মানুষদের সুখ দুঃখকে ঘিরেই হওয়া বাঞ্ছনীয়। সহজ কথায় বলতে গেলে, রাজ্যের মানুষ এমন একজন ব্যক্তিকেই রাজা হিসেবে পছন্দ করবে বা গ্রহণ করবে, যে রাজা সুখে দুঃখে জনগণের পাশে দাঁড়ায়।
আরো সোজা কথায় বলতে গেলে রাজনীতিতে সফল হতে হলে অবশ্যই একটি রাজনৈতিক দলকে জনসম্পৃক্ত হতে হবে। জনবিচ্ছিন্ন কোনো রাজনৈতিক দল কখনোই রাজনীতিতে সফল হতে পারবে না।
বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে, যেখানে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে হয়, সেই দেশে আপনি বাম রাজনীতি করুন আর ইসলামী রাজনীতি করুন, আপনাকে জনগণের সুখে দুঃখে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। জনগণের ভোট টানতে জনগণের সহানুভূতি পাওয়া যায়, জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়; এমন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা ছাড়া জনগণের প্রিয় হওয়া সম্ভব নয়।
হ্যাঁ, কেউ যদি এমন কথা বলে যে, জনগণের সন্তুষ্টির দরকার নেই। তাহলে আপনাকে বিশাল যোদ্ধা বাহিনী দখল করে, জনগণকে পিটিয়ে, প্রশাসনকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করতে হবে। এছাড়া বংশানুক্রমে প্রাপ্ত ক্ষমতাশক্তির রাজতন্ত্রের পদ্ধতির মধ্যে আপনি জনগণের সম্পৃক্তি ব্যতিরেকে শক্তিশালী পেটুয়া বাহিনী তথা প্রশাসনিক শক্তি ব্যবহার করে জনগণের উপরে নিজের মত চাপিয়ে দিতে পারবেন।
এর বাইরে এসে যদি আপনি বাংলাদেশের প্রচলিত প্রথার রাজনীতি করতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে।
এখন আসুন, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বাংলাদেশের ভয়াবহ নিষ্ঠুরতম ‘জাতীয় নির্বাচনের পর নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ন্যাক্কারজনক ধর্ষণের বিভীষিকাময়’ ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সূত্র ধরে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
এই ঘটনার মাধ্যমে সারাদেশের বিবেকবান মানুষের হৃদয়টা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। এই সময়টা ছিলো জনগণের দুঃখের সময়, কষ্টের সময়। ঠিক এই সময়টাতে জনগণের পাশে দাঁড়ানো প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের জন্য অপরিহার্য ছিল। ধর্ষিত সেই নারীই যেনো এই সময়টাতে পুরো দুঃখী বাংলাদেশ। এই ধর্ষিত নারীর পাশে দাঁড়ানোর অর্থ হলো পুরো বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
এই চরম বাস্তবতাকে যারা অনুধাবন করতে পেরেছে, তারাই এই দেশের রাজনীতি বোঝে বলে আমি মনে করি। যারা নির্মম ধর্ষণের শিকার নারীর পক্ষে কথা বলেছে, তারাই জনগণের বাহবা পেয়েছে।
গুটিকতেক বাম রাজনীতিক দুদিন পরে প্রেসক্লাবের সামনে একটি ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে ধর্ষকের বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছিলো। সারাদেশের বিবেকবান মানুষ তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। কওমী অঙ্গনের মাত্র এক ডজন ছাত্র তার দুদিন পরে প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে উক্ত ধর্ষণের বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছিলো, পুরো সোস্যাল মিডিয়ায় তা নিয়ে হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিলো।
এরপরে আওয়ামীলীগের নোয়াখালীর জনৈক এমপি সাহেব হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে উক্ত নারীর সার্বিক দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দেয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম উপস্থিত হয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দীর্ঘ সাতদিনেও দেশের ইসলামী রাজনীতির এবং আলেম সমাজের প্রতিনিধি হয়ে উল্লেখযোগ্য কেউ সেখানে সহমর্মিতা জানাতে উপস্থিতি হয়নি। যেন তারা রাজনীতি করবেন জনগণের কষ্টে তাদের পাশে না দাঁড়িয়েই।
অষ্টম দিনে শাইখুল হাদিস মাওলানা মামুনুল হক সাহেব উপস্থিত হয়ে কোন মতো আলেম সমাজের মুখটা বাঁচিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
কিছু কিছু লোক আবার সামাজিক বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ঠুনকো ও হাস্যকর যুক্তি দাঁড় করে নিজেদের পিঠ বাঁচানোর চেষ্টা করে। তারা বলার চেষ্টা করে যে, এসব বিষয় নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক না। আরে ভাই, রাজনীতিই করবেন না তো রাজনীতি করতে নামতে বলেছে কে?
হ্যাঁ, রাজনীতি করতে হবে।
আপনি বলবেন, আওয়ামীলীগ নেতারাই ধর্ষণ করলো আবার একদল আওয়ামীলীগ নেতা তার পাশে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দিলো, এটা কি ভন্ডামী রাজনীতি নয়?
আমরা এমন ভন্ডামীর রাজনীতি করি না। আপনাকে ভন্ডামীর রাজনীতি করতে বলেছে কে? আপনি শুদ্ধ রাজনীতি করুন।
হ্যাঁ, আপনি শুদ্ধ রাজনীতি করুন।
আপনি তাদের ভন্ড রাজনীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধ রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রদান করুন।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ধর্ষিতা নারী কি মাজলুম নয়?
বলবেন অবশ্যই মাজলুম। তাহলে আপনিই বলুন, মাজলুম জনতার পাশে দাঁড়ানোটা কি রাজনীতিকদের কর্তব্য নয়?
কেউ যদি এই ইস্যূগুলোকে ব্যবহার করে অপরাজনীতি করতে চায়, সেটা তাদের বিষয়। আপনি এই সকল জনসম্পৃক্ত বিষয়গুলোতে শুদ্ধ পদ্ধতির রাজনীতি করে অশুদ্ধ রাজনীতির প্রতিরোধ করুন, এটাই আমাদের কামনা।
বাংলাদেশের আলেমসমাজ এবং ইসলামী দলগুলোর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি অনুরোধ থাকবে, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতা আর দীর্ঘ না হোক।
লেখক:
মুফতী সালাহুদ্দীন মাসউদ
সম্পাদক: মাসিক কলমদানি (এখন অপ্রকাশিত)
[উল্লেখ্য যে, এই মতামত কলাম প্রকাশের কিছুক্ষণ পরই আমরা খবর পেয়েছি বৃহত ইসলামী সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সুবর্ণচরে যাচ্ছে সেই নারীকে দেখতে]