জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, বর্তমানে শিক্ষা ও সংস্কৃতিক ক্ষেত্রেই ইসলামী আদর্শ ও চেতনাবোধের উপর সবচেয়ে বড় আঘাত আসছে। কারণ, বিদ্যালয়ে ছাত্ররা যে শিক্ষা আত্মস্থ করে এবং যে সংস্কৃতির চর্চা করে তার আলোকেই তাদের চিন্তাচেতনা গড়ে ওঠে। দেশি-বিদেশী ইসলামের দুশমন ও নাস্তিক্যবাদিরা শিক্ষা ও সংস্কৃতি; এই গুরুত্বপূর্ণ দুই জায়গাতেই সবচেয়ে বেশি ইসলামের উপর আঘাত হেনেছে। উলামায়ে কেরামকে এই দিকটা গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হবে। শিশুদের প্রাথমিক ইসলামী শিক্ষা নিশ্চিত করা গেলে কেউ ঈমানহারা করতে পারবে না।
আজ (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরী ভাটারা থানা শাখার উদ্যোগে বারিধারা মাদরাসাস্থ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত উলামা মাশায়েখ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জমিয়ত মহাসচিব আরো বলেন, গত দুই যুগ আগেও বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম ও মহল্লায় ফোরকানিয়া মক্তব শিক্ষা চালু ছিল। এতে প্রায় সকল মুসলমানের ছেলে-মেয়ে সন্তানরা পবিত্র কুরআন ও ইসলামের মৌলিক শিক্ষাটা শিশুকালেই আত্মস্ত করে নিত। এর এত ব্যাপক উপকারিতা ছিল যে, এসব শিশুরা বড় হয়ে কখনো ইসলাম ও আল্লাহ-রাসূলের বিরুদ্ধে কথা বলতো না। এদেরকে নাস্তিক্যবাদিরা সহজে খপ্পরে ফেলতে পারতো না।
তিনি বলেন, ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদিরা সাধারণ মুসলমানদের মজবুত ঈমানী শক্তির এই গুরুত্ব অবলোকন করে ফোরকানিয়া মক্তব শিক্ষাকে টার্গেট করলো। সকাল ১০টার স্কুল টাইমকে তারা ভোর বেলায় নিয়ে এসে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতি চালু করল। ক্রমান্বয়ে ভোর বেলার মক্তব শিক্ষা সংকুচিত হতে হতে অনেকটা হারিয়ে গেল। এই মক্তব শিক্ষা বন্ধ হওয়ার মারাত্মক কুফল আজ আমরা অবলোকন করছি। এখনকার তরুণ শিক্ষিত মুসলমানদের মধ্যে ইসলামী চেতনাবোধ কমতে থাকার মূল কারণ এখানেই।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, শিক্ষা-সংস্কৃতিতে নাস্তিক্যবাদি ফিতনা থেকে আমাদের শিশুদেরকে সুরক্ষা দিতে হবে। এ বিষয়ে যে সকল উলামায়ে কেরাম মসজিদের খতীব, ইমাম, মুয়াজ্জিন, তাদের দায়িত্ব সর্বাধিক। আপনারা অন্তত নিজ নিজ মসজিদ ভিত্তিক সমাজের শিশুদের প্রতি লক্ষ্য রাখুন। আপনার এলাকার একজন শিশুও যাতে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে কাজ করুন। সকালে বা বিকেলে যে সময়েই হোক, ফোরকানীয়া মক্তব শিক্ষা চালু করতে উদ্যাগী হোন।
আল্লামা কাসেমী বলেন, শিশুদের মনে দ্বীনি শিক্ষার আলো দিতে পারলে আপনা আপনি অন্ধকার আর থাকবে না। শিশু বেলা থেকেই তারা সৎ চিন্তা-চেতনা নিয়ে বড় হবে। কুরআনী শিক্ষা সমাজে যত বাড়বে, নাস্তিক্যবাদি ফিতনা ততই উৎখাত হতে থাকবে। শিশুরা যদি কুরআনী শিক্ষা তথা প্রাথমিক ইসলামী শিক্ষাটা ভালভাবে পেয়ে যায়, তাকে কখনো নাস্তিক্যবাদিরা ঈমানহারা করতে পারবে না। এজন্য ছেলে-মেয়ে সকল শিশুকে প্রাথমিক ইসলামী শিক্ষাটা গুরুত্বের সাথে দিতে হবে। শিশুদের অভিভাবক পিতা-মাতাকে তার সন্তানের ইসলামের মৌলিক শিক্ষা পাওয়াকে সুনিশ্চিত করার দিকটা গুরুত্বের সাথে খেয়াল রাখতে হবে।
মহানগর জমিয়তের সহসভাপতি ও ভাটারা থানা জমিয়তের সভাপতি মুফতি মকবুল হোসাইন কাসেমীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন- জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি আল্লামা আব্দুর রব ইউসূফী, আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক, আল্লামা জুনায়েদ আল-হাবীব, সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা নাজমুল হাসান, অর্থ সম্পাদক মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুতিউর রহমান গাজীপুরী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন, মাওলানা আমজাদ হোসাইন হেলালী প্রমুখ।
/এসএস