
রাজধানীর ক্যাসিনো সাম্রাজ্যে আঘাত হেনেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ‘ক্যাসিনো সম্রাট’খ্যাত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটসহ তার সাঙ্গোপাঙ্গরা এখন খাদের কিনারে। কেউ ধরা পড়েছে, কেউ আটকের অপেক্ষায়। ক্যাসিনো নামে রাজধানীতে জমজমাট ১২টি ক্লাব।
এসব জুয়ার আসর থেকে যুবলীগের নামে প্রতিটি ক্লাব থেকে দৈনিক চাঁদা নির্ধারণ করা আছে ১০ লাখ টাকা। সে হিসাবে দৈনিক চাঁদার পরিমাণ ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
মাসে চাঁদা ওঠে ৩৬ কোটি টাকা। বছরে এই টাকার পরিমাণ ৪৩২ কোটি, যা অবিশ্বাস্য বটে। তবে বিশাল অঙ্কের এই টাকার ভাগ যায় সরকারি দলের বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতাদের পকেটে। প্রতি মাসে চাঁদা হিসেবে আদায় করা এই টাকাকে বলা হয় ‘প্রক্রিয়ার টাকা’।
রাজধানীর ক্যাসিনোগুলোয় এতদিন ঘুঁটি ও তাসের মাধ্যমে জুয়া খেলা চললেও দিন দিন পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। সরকারদলীয় নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে জুয়া অনেকটাই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। ঢাকার ১২টি ক্লাবে চলে মূলত জুয়ার রমরমা অবস্থায় ফকিরাপুল ইয়াংম্যানস ক্লাব, আরামবাগ ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, অ্যাজাক্স ক্লাব, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, সৈনিক ক্লাব ও কলাবাগান ক্লাব। এর বাইরে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব, পল্টনের জামাল টাওয়ার, যুবলীগ নেতা সম্রাটের কাকরাইলের অফিসসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় গভীর রাত পর্যন্ত ক্যাসিনো চলে।
গতকাল বুধবার অভিযান শুরু হয়েছে ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত যুবলীগের প্রথমসারির কিছু নেতার বিরুদ্ধে। তবে সংশ্লিষ্টদের কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পর্দার আড়ালে থাকা যেসব প্রভাবশালী সবচেয়ে বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, তাদের নাম তো সামনে আসছে না।
পর্দার আড়ালে থাকা যেসব গডফাদার কোটি কোটি টাকার ভাগ নিয়েছেন, তাদের কী হবে, তারাও ধরা পড়বে তো? এরকম নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র।
সূত্র বলছে, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে ইতিমধ্যে জুয়ার আস্তানাগুলোয় অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকার জুয়াজগতের অঘোষিত সম্রাট হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট পলাতক। তার অন্যতম প্রধান সহযোগী আরেক যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে। ক্যাসিনো ব্যবসার প্রধান ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত ক্ষমতাধর যুবলীগ নেতা খোরশেদ আলম ও আরমান গা ঢাকা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৯ জুন ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবের ৩১ সদস্যের নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এতে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে সভাপতি ও হাজী মো. সাব্বির হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ফকিরেরপুলের এই ক্লাবটির প্যাভিলিয়নে কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় ওই নতুন কমিটি অনুমোদনের পাশাপাশি তৎকালীন বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপিকে সর্বসম্মতিক্রমে ক্লাবের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়।
জিআরএস/পাবলিক ভয়েস