
ভারত শাসিত কাশ্মীরে গত কয়েক দিন ধরে চলা অচলাবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। পাশাপাশি কাশ্মীরে ভারতের বিতর্কিত পদক্ষেপ সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাবে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এক টুইটার পোস্টে এ কথা বলা হয়।
টুইসে আরও বলা হয়, কাশ্মীরে আইনি কড়াকড়ি চলছে। মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে, কোনও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। বার্তায় কাশ্মীরের টেলিযোগাযোগ বন্ধ, নেতাদের নির্বিচারে আটক ও সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞায় আপত্তির বিষয়টি জোরালো ভাবে উপস্থাপন করে জাতিসংঘ।
চলতি সপ্তাহে কাশ্মীরে নতুন যে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে তা পরিস্থিতিকে নতুন এক মাত্রায় নিয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করে জাতিসংঘ। সংস্থাটি আরো বলে, ‘ভিন্নমত দমনে কাশ্মীরে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া, রাজনৈতিকভাবে ভিন্নমত পোষণকারীদের শাস্তি দিতে নির্বিচারে আটক এবং বিক্ষোভ মোকাবেলায় মাত্রাতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে যা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুরুতর জখম ঘটায় আগের প্রতিবেদনে তার বিবরণ আছে।’
‘জাতিসংঘ এখন ওই অঞ্চলে ফের টেলিযোগাযোগে বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। এবারের বিধিনিষেধ আগেরবার আমরা যা দেখেছি তার চেয়েও তীব্র। এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণকে তাদের অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত করবে।’
এদিকে কাশ্মীরে অচলাবস্থায় বন্ধ হয়ে গেছে স্বাভাবিক খাবার সরবরাহ। নেই বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ। ব্যাংক ও এটিএম গুলোতেও টাকা নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে দোকানগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে কাশ্মীরবাসী। ৭২ ঘণ্টা পার না হতেই তাই দোকানগুলোতেও শেষ হয়ে গেছে খাবার। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে বহুগুণ তিনদিন ধরে চলা এই অচলাবস্থায় না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে নিম্নবিত্ত অনেক কাশ্মীরবাসীর। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কাশ্মিরের বাসিন্দাদের এই দুর্দশা। পিটিআই’কে জম্মু-কাশ্মীরের প্রশাসন জানিয়েছে, রাজনৈতিক নেতাসহ ১০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার মোদি। বিরাজ করছে ভারত-পাকিস্তানের ভেতর উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। এমন সময় ভারতকে রাষ্ট্রসঙ্ঘে টেনে নিয়ে যাওয়ার হুঙ্কার দিয়েছেন ইমরান খান।
এদিন জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে- ১. ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক কমানো হবে। ২. ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতাগুলি নিয়ে হবে পর্যালোচনা। ৩. ভারতের সঙ্গে সমস্ত রকম বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাতিল। ৪.জম্মু-কাশ্মীরের বিষয়টি রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে জানাবে পাকিস্তান। ৫. ১৪ অগস্ট স্বাধীনতা পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস। ওই দিনটি কাশ্মীরিদের সমর্পণ করবে পাকিস্তান। ৬. পরের দিন ভারতের স্বাধীনতা দিবস কালো দিন হিসেবে পালিত হবে পাকিস্তানে। ৭. বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে থাকা পাক কূটনীতিবিদদের কাশ্মীরে ইস্যূতে ভারতের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলতে হবে। এরপরই ভারতে নতুন রাষ্ট্রদূত মইন-উল-হককে তারা পাঠাচ্ছে না বলে জানিয়ে দেয় পাকিস্তান। একইসঙ্গে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অজয় বিসারিয়াকে।
ইসমাঈল আযহার/পাবলিক ভয়েস