মোঃ আব্দুল্লাহ হক, চুয়াডাঙ্গা থেকে :
চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গা নূরানী মাদরাসার ছাত্র আবির হুসাইনকে বলাৎকার ও মাথা কেটে হত্যা রহস্য অবশেষে উন্মোচিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় ওই মাদরাসার পাঁচ ছাত্রকে গ্রেপ্তারের পর চাঞ্চল্যকর ও দেশজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দেয়া এ হত্যাকান্ড রহস্যের জট খুলে যায় বলে জানিয়েছেন তারা।
ওই মাদরাসার ছাত্র আনিসুজ্জামান (১৮), ছালিমির হোসেন (১৭) ও আবু হানিফ রাতুল (১৬) সোমবার রাতে চুয়াডাঙ্গার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় এ খুন সম্পর্কে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে এই তিন ছাত্র জানায়, ওই মাদরাসার শিক্ষক তামিম বিন ইউসুফ তাদেরকে নিয়মিত নির্যাতন ও বলাৎকার করতেন। তার প্রতিশোধ নিতে শিক্ষকদের ফাঁসিয়ে দিতে তারা আবিরকে বলাৎকারের পর গলা কেটে হত্যা করে।
ঘটনার দুদিন পর মাদরাসার অদূরের একটি পুকুর থেকে নিহত ছাত্রের মাথা উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ মাদরাসার পাঁচ শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পরে পুলিশ মাদরাসা সুপার আবু হানিফ ও শিক্ষক তামিম বিন ইউসুফকে আলোচিত এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়।
এরপর আবু হানিফ ও তামিম বিন ইউসুফকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ হত্যার নতুন ক্লু পায়। এরপরই পুলিশ ৫ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল খালেক জানান, রোববার রাতে মাদরসার ছাত্র সদর উপজেলার হানুড়বাড়াদী গ্রামের আনিসুজ্জামান, টেইপুর গ্রামের ছালিমির হোসেন, আকুন্দবাড়িয়া গ্রামের আবু হানিফ রাতুল, আব্দুর নুর ও বলদিয়া গ্রামের মুনায়েম হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তিনজন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে আবির হুসাইনকে হত্যার কথা স্বীকার করে।
পুলিশ সোমবার রাত ৯ টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গ্রেপ্তারকৃত পাঁচ মাদরাসা ছাত্রকে চুয়াডাঙ্গার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করেন। এ সময় আনিসুজ্জামান, ছালিমির হোসেন ও আবু হানিফ রাতুল আদালতের বিচারক সাজেদুর রহমানের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
ওই তিন ছাত্র জানায়, মাদরাসা শিক্ষক তামিম বিন ইউসুফ তাদেরকে বিভিন্নভাবে নিপীড়ন করতো। কোনো প্রতিবাদ করলে নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়ানো হতো। বিষয়টি নিয়ে আমরা পাঁচ ছাত্র শিক্ষক তামিম বিন ইউসুফকে হত্যার পরিকল্পনা করি। পরে সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আমরা মাদরাসা ছাত্র আবির হুসাইনকে হত্যার পরিকল্পনা করি। কারণ আবিরকে গ্রাম থেকে তামিম বিন ইউসুফই মাদরাসায় নিয়ে আসেন।
তারা জবানবন্দিতে আরও বলেন, ২৩ জুলাই রাত ৮টার দিকে আমরা পাঁচজন মিলে আবিরকে গল্প করতে করতে মাদরসার পাশে আমবাগানে নিয়ে যাই। এরপর আনিসুজ্জামানসহ আমরা তিনজন তাকে বলাৎকার করি। পরে তাকে শ্বাসরোধে করে হত্যা করি। হত্যার পর গুজব ছড়াতে আবিরের মাথা শরীর থেকে কেটে বিচ্ছিন্ন করে ছালিমির হোসেন। পরে মাথাটি পাশের পুকুরে ফেলে দিই। এরপর আমরা মাদরাসায় ফিরে যাই। আদালতের বিচারক হত্যার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ শেষে তাদের জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।
উল্যেখ্য, ২৪ জুলাই চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের নুরানি হাফিজিয়া মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র আবির হুসাইনের মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার হয়। মাদরাসার অদূরের একটি আমবাগান থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়।