মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ এনে “আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ” (ইসকন) এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
আজ বুধবার (২৪ জুলাই) সকাল ১০ টায় রাজধানীর কোর্ট কাচারীর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে এ মামলাটি দায়ের করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ। ৩৪ ফৌজদারী দন্ডবিধির ২৯৫/ক ধারায় বিজ্ঞ মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলাটি দায়ের করা হবে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন : মুসলিম শিশুদের মাঝে ইসকনের প্রসাদ বিতরণ চরম ধৃষ্টতার শামিল: আল্লামা বাবুনগরী
মামলায় সর্বমোট ৯ জনকে বিবাদী করা হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। বিবাদীরা হলেন, ১. আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন), ২. শ্রীমৎ ভক্তিচারু স্বামী, চেয়ারম্যান, ইসকন, বাংলাদেশ। ৩. চারুচন্দ্র দাস ব্রক্ষ্মচারী, সম্পাদক, ইসকন, ঢাকা । ৪. জগৎ গুরু গৌরাঙ্গ দাস ব্রক্ষ্মচারী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ইসকন, ঢাকা । ৫. শ্রী পাদ লিলারাজ গৌরদাস ব্রক্ষ্মচারী, অধ্যক্ষ, শ্রী কৃষ্ণ মন্দির, ইসকন, চট্টগ্রাম ৬. শ্রী পাদ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষচারী, বিভাগীয় রিজিওনাল সেক্রেটারী, ইসকন, চট্টগ্রাম।৭. শ্রী পাদ দারুব্রক্ষ জগন্নাথ দাস ব্রক্ষ্মচারী, সাধারণ সম্পাদক, শ্রী কৃষ্ণ মন্দির, ইসকন, চট্টগ্রাম। ৮. পান্ডপ গোবিন্দ দাস ব্রক্ষ্মচারী, পরিচালক, ফুড ফর লাইফ, ইসকন, চট্টগ্রাম, ৯. রমেশ্বর পরমাত্মা দাস, পিতা- অজ্ঞাত। ১০. দারু ব্রক্ষ্ম জগন্নাথ দাস, পিতা- অজ্ঞাত।
আরও পড়ুন : উগ্রপন্থি সংগঠন ‘ইসকন’ এর সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম
তবে মামলার বাদী মুফতি হাবিবুর রহমান মিছবাহ এ বিষয়ে পাবলিক ভয়েসকে বলেন, বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির অন্যন্য নজির স্থাপনকারী দেশ। এদেশে দীর্ঘকাল থেকে সকল ধর্মমতের লোকেরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। কতিপয় দূষ্কৃতিকারীরা সবসময় দেশের সম্প্রীতি নষ্ট করার পায়তারা করতে থাকে। ইসকনের সাম্প্রতিক কার্যক্রম তারই অংশ।
তিনি বলেন, হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘ইসকন’ মুসলিম ধর্মীয় অনুভুতিতে চরমভাবে আঘাত করেছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুলে বাচ্চাদেরকে নিজেদের ধর্মীয় স্লোগান ‘শ্রী কৃষ্ণ’ ‘হরে রাম, হরে কৃষ্ণ’ পাঠ করিয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও দেবদেবীর নামে তৈরীকৃত খাবার প্রসাদ খাইয়েছে; এই সাহস তারা কোথায় পেয়েছে? নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো অদৃশ্য শক্তি রয়েছে। আমি মনে করি এটার মাধ্যমে তারা মুসলামানদের উষ্কানী দিতে চাইছে। এদের উদ্দেশ্য মুসলমানদের উষ্কানী দিয়ে বহির্বিশ্বে মুসলামনদের উগ্র হিসেবে চিহ্নিত করতে।
মুফতী মিছবাহ বলেন, ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানার দায়ে ইসকনের বিরুদ্ধে আমি মামলা করতে যাচ্ছি। দেশে শান্তি বজায় রাখতে এবং সকল ধর্মের মানুষের মাঝে সম্প্রীতি ধরে রাখতে আইনের আশ্রয়ে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, সরকার এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ইসকনের বিরুদ্ধে এ মামলার এজাহারে বলা হয়েছে,
“যেহেতু বাংলাদেশ একটি পরস্পর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। এদেশে দীর্ঘকাল ধরে সকল ধর্ম-মতের লোকেরা শান্তিপূর্ণভাবে পাশাপাশি বসবাস করে আসছেন। কিন্তু আসামীগণের বিভিন্ন কর্ম-কান্ড দেশ ও সামজের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে নষ্ট করে চলেছে”
এছাড়াও মামলার এজাহারে ইসকনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে,
গত ৩০/০৬/২০১৭ ইং তারিখে রোজ শুক্রবার স্বামীবাগের প্রায় পাচঁশত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী স্বামীবাগ মসজিদের মুসল্লিগণের উপরে ইসকন কর্মীরা হামলা চালায়। ইসকন সদস্যরা ভোর চারটা থেকে শুরু করে রাত বারটা পর্যন্ত মাইক ব্যবহার করে উচ্চ শব্দে এলাকা কাঁপিয়ে ঢোল-বাদ্য বাজায়। শুধুমাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় ঢোল-বাদ্য বাজানো বন্ধ রাখার অনুরোধ করলে ইসকনের নেত্রিস্থানীয়গণ তাতে রাজী না হয়ে বরং চরম দুর্ব্যবহার করে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে গেলে পুলিশ ও র্যাব এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পুলিশ সংঘাতময় পরিস্থিতি ঠেকাতে পবিত্র রমজানের তারাবীহ এর নামায বন্ধ রাখে।
আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে ‘ইসকন’ নিষিদ্ধের দাবিতে ইশা ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল
অভিযোগে আরও বলা হয়, সিলেটের কাজলশাহ মসজিদের মুসল্লিগণ ইসকনের মাইকে বাদ্য-যন্ত্র ও মন্ত্র পাঠের তান্ডবে নামায আদায় অসম্ভব হয়ে পরায় শুধুমাত্র নামাযের সময়টুকু বাদ্য-যন্ত্র বাজানো বন্ধ রাখতে অনুরোধ করায় ইসকনের সদস্যরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে মসজিদে হামলা চালায়। মুসল্লিগণ আত্মরক্ষায় প্রতিরোধ গড়ে তুললে ইসকনের সদস্যরা মসজিদসহ আশেপাশের বাড়িঘরে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে এবং তাদের হামলায় মুসল্লি ও পথচারীসহ ২০ জন আহত হয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তাছাড়াও নগরীর পুরনো জুগল টিলা মন্দিরটি ইসকনের সদস্যরা দখল করে নেয়।
আরও পড়ুন : উগ্রবাদী ইসকন : প্রতিবাদে স্কুলে স্কুলে তাকবীরের শ্লোগান উঠুক!
এছাড়াও ইসকনের সদস্যরা গত পবিত্র রমজানের শেষ দিনে অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের আগের দিন রথযাত্রার নামে জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররম এর দক্ষিণ গেইট সংলগ্ন রাস্তায় আসামীগণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে নানারূপ অঙ্গভঙ্গি, চেঁচামিচি এবং হৈহুল্লর করে এবং উচ্চ আওয়াজে বাদ্য-যন্ত্র বাজিয়ে এক অসহনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে মামলার এজাহারে।
এজাহারে চট্টগ্রামে মুসলিম শিশুদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ বিষয়ে বলা হয়েছে, ইসকনের “ফুড ফর লাইফ” কর্মসূচির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে যাহারা “হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে” এই মন্ত্রে দিক্ষিত হবেন শুধুমাত্র তাদেরকেই বিনা পয়সায় খাদ্য সরবরাহ করা হবে। তারা বিশ্বের প্রায় ২২ টি দেশে এই মতাদর্র্শে বিশ্বাসীদের খাওয়ানোর জন্য পৃথক হোটেল খুলেছে। আসামীগণ এরই ধারাবাহিকতায় সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে অসৎ উদ্দেশ্য তাড়িত হয়ে গত ০৮/০৭/২০১৯ ইং তারিখ হইতে ১৬/০৭/২০১৯ ইং তারিখ সকাল অনুমান ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টায় পর্যন্ত চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুল, চট্টগ্রাম সরকারী উচ্চবিদ্যালয়, পাথার ঘাটা সিটি কর্পোরেশন বালক উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল, সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, জামাল খান কুসুম কুমারী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, জে. এম. সেম. স্কুল এন্ড কলেজ, পাথর ঘাটা ম্যানকা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি ন্যাশনাল প্রাইমারি স্কুল, পাথার ঘাটা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ইয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সহ প্রায় ৩০ (ত্রিশটি) স্কুলের কোমলমতি শিশু-কিশোর-কিশোরী শিক্ষার্থীদের মাঝে রাম কৃষ্ণ দেবতার নামে উৎসর্গকৃত খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে খাওয়ার সময় তাহাদের “হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে” এই মন্ত্র পাঠে বাধ্য করে অথচ কোমলমতি শিশুদের অধিকাংশই মুসলমান।
আরও পড়ুন : খেজুর ও জমজমের পানি খাওয়ানো হবে ইসকনের প্রসাদ খাওয়ানো মুসলিম শিশুদের
সুনির্দিষ্ট এসব কর্মকান্ডকে ফৌজদারী দন্ডবিধির ২৯৫/ক, ৩৪ ধারার বিধানমতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচনা করে আসামীদের কৃত অপরাধ ফৌজদারী দন্ড বিধির ২৯৫/ক, ৩৪ ধারার বিধান মতে আমলে নিয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু করতঃ গ্রেফতার পূর্বক জেলহাজতে আটক রেখে ন্যায় বিচারের আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী পক্ষ।
আরও পড়ুন :