মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে দেশবিরোধী মিথ্যা, বানোয়াট অভিযোগ করার দায়ে বাংলদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়ার সাহার বিরুদ্ধে আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার পর স্যাটেলাইট টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’র ‘টু দ্য পয়েন্ট’ অনুষ্ঠানে মুখোমুখি হয়েছিলেন পরিষদের প্রেসিয়াম সদস্য গণফোরামের সহ সভাপতি সুব্রত চৌধুরী এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন সোমা ইসলাম। এ বিষয়ে তিনি জানতে চান আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছে। এতে মুখোমুখি হন সুব্রত চৌধুরী এবং ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সুব্রত চৌধুরী ও ব্যারিস্টার সুমন। এসময় নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আর্জি আদালতে জানানোর কথা বলেন ব্যারিস্টার সুমন। অন্যায়ের প্রতিবাদের অধিকার আছে বলেই সাথে সাথে করি বলে মন্তব্য করেন সুমন। পাবলিক ভয়েস পাঠকদের জন্য প্রশ্নোত্তর আকারে তুলে ধরা হলো ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর বিশেষ এই প্রশ্নোত্তর পর্ব:-
সোমা ইসলাম: আপনার সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা। আপনি বা আপনার সংগঠন কী একমত তার এই বক্তবের সাথে?
সুব্রত চৌধুরী: আসলে বিষয়টা যেভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে তেমন নয়। যেভাবে আলোচনা হচ্ছে তাতে কয়েকদিন পরে তো নোবেল দেয়ার জন্য তার নাম যাবে। আমরা তাকে নোবেল দেয়ার পরিস্থিতি তৈরি করছি। এটা তো রুটিন কাজ। প্রত্যেক বছর এ অনুষ্ঠানটি হয়। সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি যান। সরকারি কথা বলার জন্য।
সোমা ইসলাম: কিন্তু তিনি যে গেলেন একটা সংগঠনের পরিচয়ে
সুব্রত চৌধুরী: নট অনলি আরেকটা সংগঠন। বেসরকারি প্রতিনিধিরাও যায়। আমিও গেছি,রানা দাস গুপ্ত গেছে। আমার বেসরকারি প্রতিনিধি হিসেবে গেছি।
সুব্রত চৌধুরী: প্রত্যেক দেশেই মাইনরিটি প্রবলেম আছে। এখানে হিন্দু মাইনরিটি, কোথাও খ্রিস্টান মাইনরিটি, কোথাও মুসলিম মাইনরিটি।
সুব্রত চৌধুরী: কিন্তু আপনি যে নোবেলের কথা বলছেন, আপনি কি বলতে চাচ্ছেন একটি বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে নোবেল দিবে?
সুব্রত চৌধুরী: আপনি যতই বলেন, এটা তো একটা রুটিন ওয়ার্ক। এরপর একটা প্যারাগ্রাফ বেরুবে। আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যে সরকারই থাকুক বলবে বাংলাদেশে মাইনরিটি প্রবলেম নেই।
সোমা ইসলাম: যে সংখ্যাটার কথা বলেছে এটা কি সত্য? এই সময়ে কেমন আছেন
সুব্রত চৌধুরী: এরচেয়ে খারপ সময় ছিলো। তখন তো এতো আলোচনা হয়নি। এখন কেন প্রিয়া সাহাকে এতো আলোচনা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলেছেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই তিনি একটি ঘোষণা দিয়েছেন তার আত্মপক্ষ সমর্থন করার অধিকার রয়েছে। সব আলোচনা তিনি থামিয়ে দিয়েছেন। এতো তুঙ্গে নিয়ে যাওয়ার তো কথা না।
(সোমা: সুব্রত চৌধুরী এতো তুঙ্গে কেন নেওয়া হলো কারা নিলো- সেটা জানতে আবার আসবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন আত্মপক্ষ সমর্থনের আগে যেন তার বিরুদ্ধে লিগ্যাল ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। ব্যারিস্টার সুমন আমরা আপনার কাছে যেতে চাই)।
সোমা ইসলাম: ব্যারিস্টার সুমন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন যেন মামলা না করা হয়। কিন্তু আপনি মামলা করেছেন। আপনি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেছেন। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা রাষ্ট্র করবে। আইনজীবি হিসেবে আপনি মামলা করতে পারেন কিনা?
ব্যারিস্টার সুমন: দেখেন স্টেটম্যানটা ফেসবুকে ভাইরাল হয়। আমার স্যার (সুব্রত চৌধুরী) কিন্তু বলেছেন উনার গিয়েছেন, আমার কলিগ রানা দাশ গুপ্ত গিয়েছেন। উনারা কিন্তু এরকম কিছু বলেননি ভাইরলাও হননি। উনি উনার ব্যক্তিগত যে লস। উনি ব্যক্তিগতভাবে যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকেন, ঘর পুড়ে থাকে বা যন্ত্রণা পেয়ে থাকেন। উনি ওনার কথা বলতে পারেন। কিন্তু উনি বলেছেন ৩ কোটি মানুষ গুম। এটা তো আন্তর্জাতিক অপরাধ। যদি উনার কথা আমলে নেন এটা তো আন্তর্জাতিকভাবে বিচার করা লাগবে। আরেকটা কথা আছে। পুরো কমিউনাল কথা। কারা করছে? মুসলিম ফান্ডামেন্টালিস্ট। তিনটা জিনিস এখানের। আবার এদেরকে সাপোর্ট দিচ্ছে পলিটিশিয়ান। এর মানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি সব পার্টি আছে। পার্টি একটাও বাদ নাই। আবার মুসলিমরা আছে। আবার যে সংখ্যায় এতো হিন্দু কমিউনিটিরি হিন্দু মানুষও নাই। তিন কোটি ৭০ লাখ মানুষ গুম হয়ে গেছে। আর যারা আছে ১ কোটি ৮০ লক্ষ তারা বিপদে আছে।
সোমা ইসলাম: আপনি যে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করলেন, এটা তো রাষ্ট্র করবে। আপনি করতে পারেন?
ব্যারিস্টার সুমন: রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা যে রাষ্ট্র করবে আপনি করতে পারবেন না- এরকম না। আমি তো ইনফরমেন্ট। আজকে যে মামলাটা করলাম এটা ইনফরম। আমি একটা সিআর মামলা করি। আমি আমার অভিযোগ দায়ের করি। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার উপাদান হলো আপনি আপনার কথা বলতে পারবেন। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের এই ক্ষমতা নাই আমলে নেয়ার। নিতে পারবেন যখন রাষ্ট্র সেঙ্কশন (অনুমতি) দেয়। রাষ্ট্র কিন্তু আমাকেও এ সেঙ্কশন (অনুমতি) দিতে পারে। রাষ্ট্র যদি মনে করে দিবে। যেমন আজকে দেয়নি। না দিলে আমার ফিরে আসবো।
সোমা ইসলাম: আমি প্রধানমন্ত্রী যেখানে নির্দেশনা দিলেন সেখানে আপনি যে মামলাটা করলেন, আমরা জানি আপনি জনপ্রিয়,আপনি কি আরো জনপ্রিয় হওয়ার জন্য মামলাটা করলেন?
ব্যারিস্টার সুমন: দেখুন আমি মামলাটি আজকে করেছি। প্রধানমন্ত্রী সকালে নির্দেশনা দিয়েছেন।
সোমা ইসলাম: আপনার কি আরো অপেক্ষা করা উচিত ছিলো না?
ব্যারিস্টার সুমন: শুনেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে বিবেচনায় নির্দেশনা দিয়েছেন। আপনি যাদের কথা বলেছেন তারা কিন্তু গতকালকেও প্রধানমন্ত্রী ছাড়া সুর ছিলো এক রকম। আজকে প্রধানমন্ত্রী একটি অবস্থান নেওয়ার পর উনার সুর পাল্টেছেন। এখন এতো বুদ্ধি করে তো প্রতিবাদ করা যায় না। যারা বুদ্ধি করে প্রতিবাদ তারা আসলে ইন্টেনশনাল (ইচ্ছাকৃত/পরিকল্পিত) প্রতিবাদ করে। যেটা প্রিয়া সাহা করেছে। ইন্টেনশনালি ওখানে গিয়ে করেছেন। এটাতো সুব্রত বাবু করেননি। রানা দাস গুপ্ত করেননি। আমি দেশের একজন নাগরিক। আমি যেটা বলেছি এটা আমি আমার ভালো না লাগা বলতে পারি। কিন্তু যখন কেউ রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকবেন তিনি কিন্তু পারেন না। প্রধনামন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন রাষ্ট্রপ্রধান বিবেচনায়। ওবায়দুল কাদেরের কথা যদি বলেনম উনি রাষ্ট্রের একটি বড় দায়িত্বে আছেন। আমি আমার এক্সপ্রেশন দিতে পারি। আমার যেটা ভালো লাগবে না; আমি সেটা বলতে পারি ভালো লাগেনি। কিন্তু যখন আপনি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকবেন তখন আমার মতো বলতে পারবেন না।
পুরো অনুষ্ঠানটি শুনতে চ্যানেল আই’র ইউটিউব ফলো করুন........
/এসএস