
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের কাছে ‘বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদে’র সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার বানোয়াট বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ও হাটহাজারী মাদরাসার সহযোগী পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
আজ ২১ জুলাই রবিবার সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে আল্লামা বাবুনগরী বলেন,সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ভুল তথ্য প্রকাশ এবং বানোয়াট ও ডাহা মিথ্যা অভিযোগ করে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করেছেন প্রিয়া সাহা। তার বক্তব্য মুসলমান ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হয়ে নিজ দেশ সম্পর্কে সে এমন মন্তব্য করতে পারে না। আমি তার এ বক্তব্য প্রত্যাখান করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, প্রিয়া সাহা দেশের মুসলিম সমাজ ও সরকারের নামে মিথ্যে নালিশ করে মূলত রাষ্ট্রদোহিতামূলক অপরাধ করেছে। সে একজন রাষ্ট্রদ্রোহি, রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে বাংলাদেশে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষনা করতে হবে।
আল্লামা বাবুনগরী বলেন,বাংলাদেশ ৯০% মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হওয়া সত্বেও সংখ্যালঘুরা সর্বোচ্চ সুবিধাভোগ করছে। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা, বিচার ব্যাবস্থা এমনকি দেশের মূল চালিকাশক্তি অর্থব্যবস্থাতেও তুলনামূলক তাদের উপস্থিতি বেশি রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর, সোনালি ব্যাংকের এমডি ও সিইও, অগ্রনী ব্যাংকের পরিচালক, রূপালি ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং জনতা ব্যাংকের পরিচালক তারা সকলেই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার উচ্চ পর্যায়েও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের উপস্থিতি অনেক বেশি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) হিন্দু,বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়্যারম্যান হিন্দু,এমনি ভাবে কারিগরি শিক্ষা অধিপ্তরের মহাপরিচালক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তিনিও হিন্দু,ঢাকা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক এবং ঢাকা বোর্ডের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব হিন্দু সম্প্রদায়ের। এ ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব,শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-প্রধান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ প্রধান তথ্য কর্মকর্তা,শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পদ সহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদ সমূহে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের উপস্থিতি রয়েছে। ক'দিন আগেও বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি যিনি ছিলেন তিনিও ছিলেন হিন্দু।
আল্লামা বাবুনগরী আরো বলেন,২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে হিন্দু জনগোষ্ঠি ৮.৫ শতাংশ এবং মুসলমানদের অনুপাত ৯০.৪ শতাংশ।
সে হিসেবে বাংলাদেশে মোট হিন্দু জনগোষ্ঠির সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৩ লক্ষ। অন্যদিকে মুসলমান জনগোষ্ঠির সংখ্যা ১৩ কোটির বেশি। মুসলমান সংখ্যাঘরিষ্ট হওয়া সত্বেও সংখ্যালঘুরা কতটা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধাভোগ করছে উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত তালিকায় তা সুস্পষ্ট। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৮% হিন্দু ৩৩% সরকারি চাকুরী করছে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে ৩০% মুসলিম ২% সরকারি চাকুরী করছে।এর দ্বারাও বুঝা যাচ্ছে হিন্দু এ দেশে কতটা সর্বোচ্চ সুবিধাভোগ করছে।
আল্লামা বাবুনগরী বলেন,পৃথিবীর বুকে শ্বাসত ধর্ম ইসলাম ইসলাম একমাত্র শান্তির ধর্ম। হযরত মুহাম্মদ সা.বিশ্ববাসীর জন্য শান্তির বার্তা বাহক হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন।হাদীস শরীফে রাসুল (সা.)সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিধান বর্ণনা করেছেন।সংখ্যালঘুদের জান, মাল ও ইজ্জত- আব্রু রক্ষার আদেশ দিয়েছেন।কেবলমাত্র শান্তিরধর্ম ইসলামই সংখ্যালঘুদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সুখ-সমৃদ্ধিও নিশ্চিত করেছে।
তিনি বলেন, এদেশে সকল ধর্মের মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত রয়েছে।মুসলমানরা কখনো হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করেনি। বাংলাদেশের মুসলমানদেরকে ফান্ডামেন্টালিস্ট বা মৌলবাদী আখ্যা দেয়ার মাধ্যমে চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছে প্রিয়া সাহা।বাংলাদেশের মুসলমানদেরকে মৌলবাদী বলে লক্ষ - কোটি তৌহিদী জনতার কলিজায় আঘাত করেছে এই রাষ্ট্রদ্রোহী মহিলা।এর জন্য তাকে মুসলমানদের কাছে নিঃশ্বর্ত প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন,অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রিয়া সাহা’র বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করতে হবে। এবং রাষ্ট্রদ্রোহি আসামি হিসেব তাকে আইনের আওতায় এনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
অন্যথায় রাষ্ট্র,ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভিন্ন রাষ্ট্রের কাছে এমন অবাস্তব মিথ্যা তথ্য দেয়ার প্রতিবাদে ধর্মপ্রাণ, দেশপ্রমিক সচেতন তৌহিদী জনতা তাকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করা সহ কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
/এসএস