এম শামসুদদোহা তালুকদার
হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন ‘ইসকন’র সদস্যরা চট্টগ্রামের অন্ততঃ ১০ টি স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদেরকে তাদের বানানো প্রসাদ ছাড়াও খিচুড়ি ও বিরানি খাইয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের সামনে খাদ্য দিয়ে ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ নাম জপিয়েছে। এমন তৎপরতা চলাকালীন সময়ে ঐসব স্কুলের শিক্ষক শিক্ষয়ত্রীদের মাথায় ঠাডা পড়ায় সবাই তব্দায় ছিলেন বুঝি!
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর শাখার নেতৃবৃন্দ যখন এসব স্কুল পরিদর্শন করতে গেছেন, তখন শিক্ষকরা সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইসকন আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। তারা নিজেদেরকে সামাজিক সংগঠনের সদস্য বলে পরিচয় দিয়েছে। আমরা সরল বিশ্বাসে তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করি। আমার প্রশ্ন, তাদের কথা সঠিক হলেও তারা তখন ছিলেন কোথায়? যখন ‘হরে রাম হরে কৃষ্ণ’ নাম জপতে বলছিলো এবং সমস্বরে বাচ্চারা বলছিলো?
এখানে বাচ্চাদের কোনো দোষ নাই। ক্ষুধার্ত পেট দানা চায়। আর তখন সেটা যদি বেঞ্চের উপর কেউ রাখে, তাহলে তা তো খাবেই। তারা পার্সেল প্যাকেট পেলে বাড়ীতেও নিয়ে যেতো।
বাচ্চাদের যখন খাবার দেয়া হয়েছিল, তখন টিচাররাও উক্ত খিচুড়ি অফিসকক্ষে বসে চাটতে ব্যস্ত ছিলেন নিশ্চয়ই। কারণ, তখন বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিলো, তখন গরম গরম খিচুড়ি কতই না টেস্টি! ঐ সব লাফাঙ্গা টিচারদেরকে পুরস্কার হিসেবে নগদে 'পিএল' দেয়া ওয়াজিব হয়ে গেছে।
মূলত: ইসকনের জন্ম বৃত্তান্ত সুবিধার নয়। এটার জন্ম হয়েছে ১৯৬৬ সালে নিউইয়র্কে। হিন্দু ধর্মের তীর্থস্থান ভারতে এর তেমন কিছুই নাই। আন্তর্জাতিক নাম করে নিউইয়র্ক থেকে তা পরিচালন করা হচ্ছে। এর অর্থ যোগান দেয় ইহুদীরা। ইহুদীদের নেতৃত্বে কিছু হিন্দু ও খৃষ্টানরা বিশ্বব্যাপী তাদের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। অথচ তাদের সাথে সনাতনী হিন্দুদের সাথে সম্পর্ক নেই। তারা বিভিন্ন দেশের সরকার ও প্রভাবশালীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে কাজ করে যাচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে জনহিতকর কাজে ব্যস্ত দেখালেও তারা মুসলমানদের অসচ্ছল ও নিম্নবর্ণের হিন্দুদেরকে সহায়তার নামে উদ্দেশ্য হাছিল করছে। ইসকনিদের অনুসারী হতে তারা উদ্বুদ্ধ করছে।
তাদের রয়েছে অসম্ভব অর্থ ও প্রভাব। যদ্বারা প্রচলিত আইনকানুনকেও তারা উপেক্ষা করার স্পর্ধা দেখায়। চট্টগ্রামের ঘটনাটি অনুরূপ একটি ডেলিভারি। মুসলমানদের জন্য যা হারাম তা-ই গলাধঃকরণ করিয়েছে। স্কুলগুলোতে কর্মরত মুসলিম শিক্ষকদের ঈমানী জোর অবশ্যই তলানীতে ছিল, না হলে এমনটা মেনে নেয় কি করে?
নিষ্পাপ বাচ্চারা ব্লাকমেইলের শিকার। ইসকনিদের এমন অপতৎপরতার সংবাদ পেয়ে ফুঁসে উঠেছে দেশের মানুষ। আলেম সমাজ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের লোকাল নেতারা এ সব স্কুল পরিদর্শন করে উর্ধ্বতন নেতাদেরকে প্রকৃত জানানোর পর সর্বপ্রথম আইএবি’র মুহতারাম নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। তাঁর বক্তব্য ছিল সরাসরি ও তীব্র নিন্দায় ভরা। তিনি আলেম সমাজকে জাগ্রত হতে আবেদন করেছেন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিল চলছে। গতকাল হাটহাজারীতে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছেন মাদ্রাসার ছাত্র ও উস্তাদগন। তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হুজুর। আজ শুক্রবার চট্টগ্রামে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল করেছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। দেশের শীর্ষ আলেম আল্লামা আহমদ শফী হুজুর ইসকনকে নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানিয়েছেন।
এ দেশে হিন্দু মুসলমানদের মাঝে যে সহাবস্থানের যে ঐতিহ্য বিরাজ করছে, তা কোনভাবেই বিনষ্ট করতে দেয়া হবে না। ইসকনিদের উস্কানিমূলক কর্মকান্ডের ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
বিএনপি নেতা এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তিনি ইনকিলাবে প্রকাশিত এতদসংক্রান্ত নিউজ কোট করে বিচারপতিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বিচারপতিদ্বয় অন্য ধর্মের অনুসারীদেরকে এভাবে হরেকৃষ্ণ নাম জপতে বাধ্য করা ও প্রসাদ খাওয়ানোর ব্যাপারে উষ্মা প্রকাশ করেন। ইসকনিদের এমন তৎপরতা বেঠিক বলে মন্তব্য করে আইনী পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে হাইকোর্ট নির্দেশনা দেন।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) হাটহাজারীতে অনুষ্ঠিত সভা-সমাবেশের পর সিদ্ধান্ত হয় যে, প্রসাদ খাওয়া ও হরেকৃষ্ণ নাম জপনেওয়ালা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পবিত্র করণের লক্ষ্যে পবিত্র যমযমের পানি ও খেজুর খাওয়ানোর কর্মসূচি পালন করা হবে। বিষয়টি যদিও একটি প্রতীকি তবুও অত্যন্ত সুন্দর সমাধানই বলা চলে।
আসলে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে জড়িতদেরকে পাকড়াও করে যদি গরুর গোশত খাওয়ানো যেতো, তাহলে দেশের মানুষদের ক্ষতবিক্ষত হ্রদয়গুলোতে একটু হলেও প্রশান্তি আসতো।
ইন্ডিয়ার চলমান কাহিনী আমরা দেখেই যাচ্ছি। ওখানে মুসলমানদের উপর ননস্টপ নির্যাতন চলছে। গরুর গোশত ওখানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মুসলমানরা তা খেতে পারবে না। কারো কাছে গরুর গোশত আছে, শুধুমাত্র এমন সন্দেহের বশে তাদেরকে পিটিয়ে মারছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) তো একটা মাদরাসা পুড়িয়ে দিয়েছে উগ্রবাদীরা, ওখানে গরুর গোশত থাকার অলীক সন্দেহে। অথচ বাংলাদেশের মুসলমানরা কতই না মানবিক! এখানে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আমরা হিন্দুদেরকে গরুর গোশত খাওয়াই না। আমরা প্রতিশোধপরায়ন নই। এখানে কোন জবরদস্তি নেই। সহাবস্থাণের এমন সুন্দর পরিবেশকে ইসকনিরা বিনষ্ট করছে। এটাই আমাদের আক্ষেপ!
স্থানীয় আলেম সমাজ বিশেষ করে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের প্রতি অনুরোধ থাকবে, তারা যেন ঐসব স্কুলের মুসলিম ছাত্রছাত্রীদেরকে অন্ততঃ একবেলা গরুর গোশত খাওয়ানোর উদ্যোগ নেন। বীফ খিচুড়ি বা বিরানি বিতরণের প্রস্তাবিত কর্মসূচি ইশা ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হোক।
বীফের বিনিময়ে দায়শোধ
এটাই আমাদের প্রতিশোধ।
লেখক, এক্টিভিস্ট ও বিশ্লেষক।