জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহসভাপতি শায়খুল হাদীস আল্লামা আবদুর রব ইউসুফী বলেছেন, চট্টগ্রামের ইসকন কাণ্ডকে হাইকোর্ট হালকাভাবে নিয়েছে। হাইকোর্ট শুধু ‘অন্যায়’ বলে দায় থেকে এড়িয়ে যাওয়ায় আমরা হতাশ হয়েছি। কারণ, সংবিধানে প্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষাকল্পে এই ঘটনায় আদালতের আরও বেশি কিছু আমরা আশা করতে পারি। ইসলামী মূল্যবোধের ওপর রহস্যময়ী সনাতনী সংস্থা ইসকনের এতো বড় আঘাত হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। এই ঘটনায় সারাদেশের মুসলমানরা আঘাত পেয়েছেন এবং তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
ইউসুফী বলেন, দেশবাসী মনে করছেন, ইসকনের এই অপকর্ম মুসলমানদেরকে বিক্ষুব্ধ করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর অপচেষ্টা হতে পারে। যাতে অজুহাত দাঁড় করে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল কোন বিদেশী আধিপত্যবাদী শক্তিকে আমন্ত্রণ জানানোর সুযোগ তৈরি হয়। দেশবাসীর মনে ইসকন কাণ্ড থেকে তৈরি হওয়া এই ক্ষোভ ও উত্তেজনা প্রশমনের জন্য দায়ীদেরকে চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘ইসকন’ নামক একটি বেসরকারী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংস্থা চট্টগ্রামের স্কুলসমূহে কোমলমতি শিশু ছাত্র-ছাত্রীদেরকে হিন্দুদের দেবতা শ্রীকৃষ্ণের নামে উৎসর্গ করা প্রসাদ বিতরণ এবং হিন্দু ধর্মীয় নামাজ পড়ানোর খবর গতকাল থেকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে আমাদের মাননীয় হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন আইনজীবি। অনলাইন মিডিয়া সমূহের মাধ্যমে যতদূর জানা গেছে, রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বিষয়টিকে ‘অন্যায়’ উল্লেখ করে এ বিষয়ে সংস্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে যাওয়ার জন্য মতামত প্রদান করেছেন।
আল্লমা ইউসুফী বলেন, আমাদের সংবিধান দেশের সকল নাগরিককে তাদের নিজ নিজ ধর্মের স্বাধীনতা দিয়েছে। সংবিধানের এই ধর্মীয় স্বাধীনতার আলোকে কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া বা ধর্ম ত্যাগ করতে উদ্বুদ্ধ করার সুযোগ কারোর নেই। সংবিধানের ধর্মীয় স্বাধীনতা অনচ্ছেদের ৪১ (২) ধারায় বলা হয়েছে- "কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোন ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম-সংক্রান্ত না হইলে তাঁহাকে কোন ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণ কিংবা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপাসনায় অংশ গ্রহণ বা যোগদান করিতে হইবে না।"
এমন একটি স্পষ্ট ধারা সংবিধানে বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও আদালত বিষয়টিকে হালকাভাবে নিতে পারে কিনা, আমাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে। এছাড়া সংবিধানের রাষ্ট্রধর্ম অনুচ্ছেদের ২ক ধারায় বলা হয়েছে- "প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করবেন”।
আল্লামা ইউসুফী বলেন, যেখানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, সেখানে উল্টো মুসলিম শিশুদেরকে তাদের অভিভাবকদের অগোচরে ইসলাম ধর্মমতে হারাম খাদ্যের প্রলোভন ও পরিবেশন করে হিন্দু ধর্মের দীক্ষা নিতে বাধ্য করা কত ব্যাপক অপরাধ এবং সংবিধান লংঘন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মাননীয় আদালত স্কুল কর্তৃপক্ষসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তলব না করে কি করে বিষয়টিকে এড়িয়ে গেলেন- নাগরিক হিসেবে তা আমার বোধগম্য নয়। এটা কি সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা কিনা, তা আদলতকে পুন:র্বিবেচনা করার অনুরোধ করছি। পরিশেষে আমি সংশ্লিষ্ট আইনজীবি, যিনি ঈমানী চেতনাবোধ ও নাগরিক কর্তব্যের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনায় তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি এ বিষয়ে ধারাবাহিক আইনি উদ্যোগ নেওয়ার জন্যও তাকে অনুরোধ করছি।
আইএ/পাবলিক ভয়েস