গতকাল সোমবার দুপুরেই শেষ হয়েছে রাজন-সুমাইয়ার বিয়ের সকল কার্যক্রম। কবুল বলে দুজনেই দুজনকে নিজের জীবন সঙ্গী বানানোর সংকল্প করেছেন। পরের রাতই ছিলো তাদের মধুচন্দ্রিমার রাত। দুই পরিবারের সবাই মিলে উৎসবেও মেতে ছিলেন। কে জানতো একটু পরই এই উৎসব পরিণত হবে বিষাদে, দুঃখে। সিরাজগঞ্জ সদরের কান্দাপাড়া গ্রামের রাজন হোসেন (২৫) উল্লাপাড়ার সুমাইয়া খাতুনকে বিয়ে করে বিকেলের দিকে বাড়ি ফিরছিলেন। নববধূ বরণের অপেক্ষায় ছিলেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে লাশ হয়ে ফিরতে হলো তাদের। সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যায় এই নবদম্পতিকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে গেলে তাদের মৃত্যু হয়। এ সময় নিহত হন আরও আট জন। রাত ৩ টার দিকে হাসপাতাল থেকে তাদের লাশ গ্রহণ করেন স্বজনরা।
সিরাজগঞ্জের অতারিক্ত জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন সিরাজগঞ্জের শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হাসপাতাল থেকে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করেন। এর আগে দুই পরিবারের স্বজনরাই লাশ ময়নাতদন্ত না করার মুচলেকা দেন। লাশ হস্তান্তর করার সময় ম্যাজিস্ট্রেটসহ হাসপাতালের কর্মীরাও চোখের পানি আটকে রাখতে পারেননি। সেখানে উপস্থিত সবাই সমব্যাথী হয়েছেন স্বজনদের। অশ্রুসিক্ত নয়নে সবাই শান্তনা দিয়েছেন তাদের।
রাত ১২ টা থেকে স্বজনরা হাসপাতালের সামনে অপেক্ষা করতে থাকেন লাশের জন্য। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রাত ৩ টায় লাশ হস্তান্তর করা হয় স্বজনদের কাছে। আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে স্বজনদের কষ্ট লাঘবে জেলা প্রশাসন থেকে সদর হাসপাতালের দায়িত্ব দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেনকে। পরে তার সহযোগিতায় লাশ হস্তান্তর করা হয়।
একটি লাশ আগে থেকেই মর্গে থাকলেও রাত ১২টার পর জিআরপি থানা পুলিশ শিশুসহ ১০টি লাশ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসেন। এর মধ্যে নববধূ ও বর ছিলেন। ছিলেন মাইক্রোবাসচালক ও হেলপারসহ নিকটতম আত্মীয়-স্বজন। দুর্ঘটনার পর জেলা প্রশাসকের ত্রাণ তহবিল হতে স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকা করে নিহতদের পরিবারকে অনুদান হিসেবে দেওয়ার ঘোষণা দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেন।
এক বিষাদময় অধ্যয় শেষ করে রাত সাড়ে ৩ টার পর মাইক্রোবাসে করে লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরেন স্বজনরা। যে লাল বেনারসির শাড়িতে জড়ানো নববধুকে বরণ করার জন্য অপেক্ষমান ছিলেন সবাই সেই নববধুকে লাল রক্তমাখা শরীরে সাদা কাফনে জড়িয়ে বাড়ি ফিরিয়ে নিলেন সবাই।
প্রসঙ্গত : গতকাল সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বিয়ের গাড়িবহরের একটি মাইক্রোবাসে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় বর ও কনেসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও ট্রেনের সামনে থেকে ছিটকে পড়ে ও মাইক্রোবাসে থাকা তিনজন আহত হয়েছেন। অরক্ষিত রেলক্রসিং পার হতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং ট্রেনের ইঞ্জিনের সাথে আটকে প্রায় দেড় কিলোমিটার জায়গা মাইক্রোবাসটি ঠেলে নিয়ে যায় ট্রেনটি। যাতে মাইক্রোতে থাকা ১৩ জনের ১০ জনেরই মৃত্যু হয়। এমন নির্মম দুর্ঘটনায় সারাদেশবাসী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে তাদের দুঃখে সমব্যাথী হয়েছেন।