
মুফতী ইমরান হোসাইন
ইবাদাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো দাসত্ব করা। অর্থাৎ মালিক যে উদ্দেশ্যে দাস খরিদ করেছে সে উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্যে মালিকের হুকুম পালন করা এবং মালিকের নিষেধ মেনে চলা। এরুপ খরীদ করা দাসকে ক্রীতদাস বলে। এটা মানুষের দাসত্বের ব্যাখ্যা। কিন্তু আল্লাহর ইবাদাত বলতে এই ব্যাখ্যাটির সাথে আরও কিছু কথা যোগ হবে। কারণ আল্লাহ মানুষকে খরীদ করে আনেননি। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।
সুতরাং শরিয়তের পরিভাষায় ইবাদাত হলো সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহকে একত্ববাদে বিশ্বাস করা, তার কাছে নিঃশর্তভাবে নিজের জীবনকে সমর্পন করে দেওয়া, তার হুকুম পালন করা এবং তার নিষেধ মেনে নেওয়া। এ ব্যাাপারে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে পাকে এরশাদ করেছেন, আমি জ্বিন ও মানুষকে এই জন্যে সৃষ্টি করেছি যে তারা আমারই ইবাদাত করবে। (সূরা যারিয়াত, ৫৬ নং আয়াত)।
আর ইবাদাত হলো জীবনের উৎস সৃষ্টি থেকেই মানুষের জীবনে ইবাদাত জড়িত থাকা। বরং কথাটি এভাবে বলা যেতে পারে যে ইবাদাত হলো জীবনের উৎস। ইবাদাত থেকেই জীবনের উৎপত্তি হয়েছে। যিনি জীবন সৃষ্টি করছেন তিনিই একথা বলেছেন। তিনি বলছেন, আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদাতের উদ্দেশ্যে। একথা দ্বারা বুঝা যায় যে, আগে উদ্দেশ্য পরে সৃষ্টি। আর উদ্দেশ্যটা ছিল ইবাদাত করানো। সুতরাং ইবাদাত করানোকে ভিত্তি করে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। অতএব ইবাদাত হলো জীবনের উৎস। আর যদি মানুষ যদি ইবাদাত অবহেলা করে মানুষ ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ ইবাদাত হলো মানুষের জীবনের উৎস।
আমরা দেখি- অনেক মানুষ আল্লাহর ইবাদাত করে না, কিন্তু তারা বেঁচে আছে এবং তারা ধ্বংস হয়নি। তাহলে জেনে রাখুন যে, ইবাদাত দুই প্রকার। একটি হলো স্বেচ্ছায় ইবাদাত করা, আরেকটি হলো বাধ্য হয়ে এবাদত করা। কাফের যারা আল্লাহর হুকুমের কাছে আত্মসমর্পন করেনি তারা বাধ্য হয়ে আল্লাহর ইবাদাত করে যাচ্ছে। যেমন ক্ষুধার সময় আহার করা, পেশাব করা, ঘুমানো, পরিশ্রম করা ইত্যাদি। এই গুলিও আল্লাহ পাকের এক একটি বিধান। আল্লাহর দেওয়া এই বিধানের উপর চলতে কাফেররাও বাধ্য। বাধ্য হওয়া এই ইবাদাত দ্বারা দেহ কিছু দিন টিকে থাকে।
কিন্তু আসল মানুষ যাকে রুহ বলা হয়, সেই মানুষটি ধ্বংস হয়ে যায়। সেই ধ্বংস প্রাপ্ত মানুষটিকে আবর্জনার মতো দোযখে নিক্ষেপ করা হয়। এরা দোযখে গিয়েও ইবাদাত করতে বাধ্য হবে। দোযখে পড়ে থেকে সব সময় ‘আল্লাহ বাঁচাও’ বলে এত বেশী আল্লাহকে ডাকবে যেন আল্লাহর যিকিরে তাদের ক্বলব জারি হয়ে গেছে। তখন এই ইবাদাত কোনো কাজে লাগবে না। দোযখেই পড়ে থাকতে হবে।
আউলিয়ায়ে কেরামের কাশফ থেকে জানা গেছে যে,ম রুহেরও দেহের মতো হাত পা আছে, চোখ-মুখ ইত্যাদি আছে। তেমনি দেহপোষাকটি ও মানুষ ফেলে দেয় এবং আসল মানুষ টিকে থাকে। আর সেই আসল মানুষটা যদি ধ্বংস হয়ে যায় তবে তার দেহটা বৃথা ধারণ করা হয়। বাধ্য হয়ে ইবাদাত করা সম্পর্কে এই আয়াতে প্রামাণ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আকাশে ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তাঁর কাছে আত্ম সমর্পণ করেছে’। (সুরা আলে ইমরান, ৮৩ নং আয়াত)
আর যারা স্বেচ্ছায় তার ইবাদাতগ্রহন করছে তারা ধ্বংস হয় না। তারা বেঁচে থাকে অনন্তকাল। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন।গোলামি করার তৈফিক দান করুন। আমিন।
/এসএস

