ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ৩ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে “ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলমানদের হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানী বন্ধে করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, শায়খে চরমোনাই’র সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে জাতীয় ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ভার মুসলমানদের উপর নির্যাতন বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছেন। এছাড়াও ভারতে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন বন্ধে বাংলাদেশে যে কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচীতে সবার একান্ত অংশগ্রহণের আহবান জানানো হয়েছে।
বৈঠকে বক্তব্য রাখেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মাইমুল আহসান খান, মুসলিম লীগের স্থায়ী কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম, জাতীয় সমজাতান্ত্রিক দল জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, ইসলামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি এডভোকেট শেখ আতিয়ার রহমান, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, প্রিন্সিপাল শেখ ফজলে বারী মাসউদ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইনিঞ্জনিয়ার আশরাফুল আলম, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, কেএম আতিকুর রহমান, মাওলানা নেছার উদ্দিন, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী, এডভোকেট আব্দুল বাসেত, শায়খুল হাদীস মকবল হোসাইন, এডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার, ছাত্রনেতা এম হাসিবুল ইসলাম, মুস্তাকিম বিল্লাহ।
মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, মুসলমানদের এক হওয়া সময়ের অনিবার্য দাবি। মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য থাকলে কুফুরী শক্তিগুলো এক মুহুর্তও টিকতে পারবে না। সৌদী আরবসহ অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর খামখেয়ালীর কারণে ইয়াহুদি ও হিন্দুত্ববাদী উগ্রশক্তিগুলো মুসলমানদের তিলে তিলে হত্যা করছে। তিনি বলেন, ভারতবর্ষ মুসলমানদের দেশ। মুসলমানরা এ ভারতবর্ষ ৭০০ বছর শাসন করেছে। কাজেই মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করতে চাইলে ভারতই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার অযুহাত তুলে ভারত কঠোর প্রতিবাদ জানালেও ভারতে মুসলমানদের বিভিন্ন অযুহাতে হত্যা করছে, মা-বোনদের ধর্ষণ করছে, বাড়ী-ঘর জালিয়ে দিচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশের সরকার নিন্দা প্রস্তাবও পাশ করতে পারেনি। তিনি ভারতের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে সরকারকে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে।
সাবেক এমপি গোলাম মাওলানা রনি বলেন, নতজানু ও ভারতপ্রীতির কারণে আওয়ামী লীগ কোন প্রতিবাদ করতে পারছে না। শেখ মুজিব ভারতের বিরোধীতা সত্বেও ওআইসি সম্মেলন অংশ নিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবের আদর্শের ওপর নেই।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী বলেন, মুসলমানদের চেতনায় ধস নামার কারণে ভারত সুযোগ নিয়ে মুসলিম হত্যাকান্ড চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ভারত বিভিন্ন কারণে অকারণে মুসলমানদের ওপর জুলুম নির্যাতন করে নিজেদের বিশ্বে জঙ্গি ও উগ্র সম্প্রদায় হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। গরুকে দেবতা মেনে মুসলিম হত্যা করছে, আবার গরুর গোস্ত রপ্তানীতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ভারতের উপর অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ না করলে ভারত সোজা হবে না। এজন্য ভারতীয় বাজারকে শেষ করতে ভারতের সবধরণের পণ্য বর্জণ করতে হবে।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, ভারতে মুসলিম নির্যাতনে বাংলাদেশ সরকার উদ্বেগও প্রকাশ করতে পারেনি। এটা দুর্বল রাষ্ট্রনীতির কারণ। তিনি বলেন, মুসলমানদেরকে নিজেদের সমস্যা নিজেরা দূর করতে না পারলে বড় ধরণের কিছু করা সম্ভব হবে না। ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া কোন গতান্তর নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মাইমুল আহসান খান বলেন, ভারতসহ বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চলছে। মুসলমান হিসেবে সর্বদলীয়ভাবে একটি বৃহত প্রতিবাদ গড়ে তোলা প্রয়োজন। বর্তমানে দেশে বাক স্বাধীনতাও নেই। তারপরও মুসলিম হিসেবে এটা করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, জয় শ্রীরাম শ্লোগান দিয়ে মুসলিম হত্যা এটা মেনে নেয়া যায় না। ভারতের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে জাতিসংঘ অফিস, ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও করতে হবে।
অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, মুসলমাদের পিঠ য়োলে ঠেকে গেছে। এখণ আর বসে থাকার সময় নেই। সর্বত্র প্রতিবাদ সংগ্রামের সুচনা করতে হবে। ভারতসহ বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠক শেষে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম সবাইকে নতুন কোনো কর্মসূচীর আহবান করা হলে সেখানে সবাইকে উপস্থিত থাকার বিশেষ আহবান জানিয়েছেন।