
আরও এক মাস বাড়িয়ে দেওয়া হলো ভারতের আসামের নাগরিক তালিকা সংশোধনের কাজ সময়। কিন্তু আদৌ কি তার পিছনে কোনো সদিচ্ছা কাজ করছে? নাকি এ আদতে বাঙালি খেদানোর ছক? আসামের বৈধ বাসিন্দা কারা, আর কারাই বা বেআইনি বহিরাগত, তা শনাক্ত করার জন্য যে নাগরিক তালিকা সংশোধনের কাজ চলছে, তা শেষ হওয়ার কথা ছিল ৩০ জুন৷ তার আগের দিন ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, যেহেতু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই কাজ শেষ করা যায়নি, এর মেয়াদ আরও একমাস বাড়িয়ে ৩১ জুলাই পর্যন্ত করা হলো৷
তথাকথিত ওই ‘ডাউটফুল’, বা ডি ভোটাররাও নিজেদের প্রকৃত নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পারলে, তাদের ঠিকানা হবে ওই বন্দিশিবির৷ আসাম রাজ্য জুড়ে এই যে ঝাড়াই-বাছাই চলছে, তার অন্তরালে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডাও সমান সক্রিয়৷ প্রকাশ্যেই বিজেপির নেতারা বলছেন, অবৈধ মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের আসাম থেকে এবং ভারত থেকে তাড়ানো হবে৷ মুসলিম অনুপ্রবেশকারী বলে এক্ষেত্রে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে রুটি-রুজির খোঁজে আসা খেটে খাওয়া মানুষজন, যাদের অনেকেই বংশ পরম্পরায় আসামের লোক৷ বিজেপি নেতারা খোলাখুলিই বলছেন, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার হাবেভাবে বোঝাচ্ছে যে, বিতাড়িত হবে মুসলিমরা, আশ্রয় দেওয়া হবে হিন্দুদের৷
প্রথম দফায় তৈরি খসড়া নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল আসামের ৪০ লক্ষ বাসিন্দার নাম, যাদের এক বড় অংশ কয়েক পুরুষ ধরে আসামের বাসিন্দা৷ সেই নিয়ে বিস্তর বিতর্কের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সুযোগ পাবে প্রত্যেকেই৷ সম্প্রতি জানানো হয়েছে, সেই আবেদনের মধ্যে ১ লক্ষ ২ হাজার চিরতরে বাতিল হয়ে গেছে৷ নিজেদের ভারতীয় নাগরিকত্ব এরা প্রমাণ করতে পারেননি৷ এই বেনাগরিক হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর জন্য খালি করা হয়েছে সবকটি জেলা কারাগার।
কিন্তু পুরো ব্যাপারটাই আদতে বাঙালিকে কোণঠাসা করার চক্রান্ত৷ হিন্দু বা মুসলিম নয়, বাঙালিদের তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে আসাম থেকে, যা আদৌ নতুন কিছু নয়৷ আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য, যিনি দীর্ঘদিন ধরে এই বাঙালিবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সরব৷ তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ভারতের স্বাধীনতার পর থেকেই আসামে এই বাঙালি বিরোধী মানসিকতা সক্রিয়, যাতে ধারাবাহিকভাবে ইন্ধন জুগিয়ে গেছে প্রথমে কংগ্রেস এবং পরে বিজেপি সরকার৷
আইএ/পাবলিক ভয়েস