মাওলানা ইমরান হোসাইন:
বিবাহ সকল নবীর সুন্নত। হযরত আদম আ. থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত নবী রাসূল এসেছেন সবাই বিবাহ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘আপনার পূর্বে আমি তো অনেক রসূল প্রেরণ করেছিলাম এবংতাদেরকে স্ত্রী সন্তান সন্ততি দিয়েছিলাম’। (সূরা ১৩ রা'দ ৩৮ আয়াতাংশ)
সুতরাং নবী ও রসূলগণ যা করেন তা মানুষের জন্যে সর্বোত্তম অনুসরনীয় কাজ। হাদিস শরিফে আছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ থেকে বর্ণিত যে- রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন- হে যুবক সকল! যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্যে বিবাহের দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম সে যেন বিবাহ করে। কারণ বিবাহ করলে দৃষ্টিকে নীচু রাখা যায় এবং লজ্জা স্থানের হেফাজত করা যায়। আর যে ব্যক্তি বিবাহ দায়িত্ব পালন করতে পারবে না সে যেন রোযা রাখতে থাকে। কারণ রোযা তার খাহেশকে কমিয়ে দিবে (বোখারী, মুসলিম)।
উলামায়ে কেরাম এই হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে যদি কারো খাহেশ এত বেশী হয় যে সে ছবর করতে পারে না এবং বিবাহ না করলে গুনাহের পথে পা বাড়ানোর সম্ভাবনা থাকে, আর সে দেন মোহর ও খোরপোষ দিতে সক্ষম থাকে তবে তার জন্যে বিবাহ করা ফরয। অন্যাথায় সে রোজা রাখবে।
আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিবাহ করা ওয়াজিব এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিবাহ করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ্। অর্থ্যাৎ ব্যক্তির অবস্থা অনুযায়ী শরীয়তের হুকুম ভিন্নতর হয়ে থাকে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তাঁর কুদরতের চিহ্নসমূহের মধ্যে রয়েছে এই যে- ‘তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্যে থেকে সৃষ্টি করছেন তোমাদের সঙ্গিনীদিগকে, যেমন তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পারিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করছেন’ (সূরা ৩০ রুম, আয়াত ২১।
একে অপরের পরিপূরক হিসাবে আল্লাহ্ পাক নারী ও পুরুষকে সৃষ্টি করছেন। আবার দুইটিকে একত্র করার জন্যে বিবাহের জন্য ব্যবস্তা দিয়েছেন। মানব জাতিকে কেয়ামত পর্যন্ত টিকিয়ে রাখার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে বিবাহ। বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রীর জীবনে এক নতুন দিকের দরজা খুলে যায়। জীবনে আসে পবিত্র চাল-চলন। বিবাহের মাধ্যমে একটি নারী সামাজিক উৎপাত, অপবাদ এবং নির্লজ্জতা থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে মান সম্মান নিয়ে জীবন যাপন করতে পারে। বিবাহিত জীবন মেয়েদের জন্যে যেমন এক নিরাপদ জীবন ব্যবস্থা তেমনি পুরুষের জীবনকেও মধুময় করে তুলতে তার গৃহে পদার্পন করে একজন স্ত্রী।
আল্লাহ পাক পুরুষের মতো নারীর অন্তরেও ভালবাসা সৃষ্টি করছেন। সেই ভালোবাসা দিয়ে নারী তার পুরুষকে কর্ম জীবনে উৎসাহ ও উদ্দীপন সৃষ্টি করে দেয়। ফলে পুরুষ তার কর্মের শক্তি লাভ করে এবং প্রশান্ত চিত্ত নিয়ে এবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত হতে পারে। সারা যৌবনকাল নারী ও পুরুষ একে অপরকে ভালোবাসা বিতরণ করে থাকে। আবার যখন বার্ধক্য এসে যায় তখন তাদের অন্তরে দয়া সৃষ্টি করে নেন। অর্থাৎ বার্ধক্যে একে অপরের প্রতি দয়ার বশবর্তী হয়ে জীবন কাটাতে পারে।
যদি কেউ বলে যে আমি খুব ভালো মানুষ, আমার নারীর প্রতি আর্কষন নাই; তবে সে মিথ্যা বলবে। কারণ স্রষ্টা তার সৃষ্টির অবস্থা খুব জানেন। তিনি স্বয়ং বলেছেন, নারী, রাশিকৃত স্বর্ণরৌপ্য, চিহ্নিত অশ্বরাজি, গবাদি পশু এবং ক্ষেত খামার প্রতি আসক্তি মানুষের (পুরুষ) জন্য সুশোভিত করা হয়েছে। (সূরা ৩ আলে ইমরান ১৪ আয়াতাংশ)। এই আয়াতে বলা হয়েছে নারীর প্রতি আকর্ষণ মানুষের জন্ম সত্ত্বার সাথে মিশানো আছে।
সুতরাং বিয়ের হলো নারী-পুরুষের আসক্তির বৈধ মেলাবন্ধনের উপায়। এজন্য আল্লাহ তায়ালা বলেন, তবে বিবাহ করো নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই তিন বা চার জন। আর যদি আশংকা করো সুবিচার করতে পারবে না; তবে একজনকে। (সূরা ৪ নিসা ৩ আয়াতাংশ)।
হাদীস শরিফে আছে, যখন পুরুষ তার স্ত্রীর দিকে স্নেহের দৃষ্টিতে তাকায় আর স্ত্রী তার স্বামীর দিকে স্নেহের দৃষ্টিতে তাকায় তখন আল্লাহ পাক তাদের উভয়ের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন। আর বিবাহের ফলে অভাব দুর হয়। একদা এক যুবক রাসূল সা. এর খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করলো, আমি খুব গরিব। আমার অভাব দুর হয় না। দিন আনি দিন খাই আমাকে দয়া করে একটা পথ বলে দিন, রাসূল সা. তাকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি কি বিয়া করেছ? তিনি বল্লেন না। রাসূল সা. তাকে বললেন, তুমি বাড়িতে গিয়ে বিয়া করো। তিনি বাড়ি গিয়ে দেখে শুনে বিয়া করলেন। কিছু দিন তাদের বিয়ের জীবন কাটলো তার অভাব দুর হয় না। আবার নবী দরবারে হাজীর হলেন রাসূল সা. কাছে বললেন, আমার অভাব দুর হয়নি। রাসুল সা. তাকে আবারো বিয়ে করতে বললেন। এভাবে তিনি চারটি বিয়ে করেন।
এরপর আবারো ওই যুবক, রাসূল সাঃ দরবারে হাজির হয়ে বললেন যে- আমার তো অভাব দূর হয়নি। রাসুল সা. তাকে বললেন, তোমার আগে একটি ঘর ছিলো না, আর এখনতো চারটি ঘর হয়েছে। তুমি এখন চারটি নারীর অধিকারী এবং চারটি বাড়ির মালিক হয়েছো। এগুলি কি সম্পদ নয়? আর দিন আনি দিন খাই বলছো; সেটাই তো জীবন। জীবন এই রকমই হয়। সুতরাং টাকার পাহার গড়া আদর্শ জীবন নয়। প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রয়োজন মত ব্যবহার করতে পারাটাই আদর্শ জীবন। আল্লাহ আমাদের যেন এই তৌফিক দান করেন এবং সব কিছু যেন ইসলামের গন্ডির ভিতরে থেকে করতে পারি। আমিন।
/এসএস