প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের এই উপমহাদেশে শিক্ষার যাত্রা শুরু হয়েছিল মাদরাসা দিয়ে। হিন্দু ধর্মের জন্য (শিক্ষা শুরু) যেমন টোল (আদি শিক্ষা) থেকে; (তেমনই) আমাদের মুসলমানদের তেমন মাদরাসা শিক্ষা থেকে। তাই এটাকে আমরা সম্পূর্ণ বাতিল করতে পারি না। কারণ, ১৪ থেকে ১৫ লাখ ছেলেমেয়ে প্রতি বছর পড়াশোনা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাদরাসা শিক্ষার বিষয়ে বলব, এখানে লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়েরা পড়ে। আমাদের দেশে অনেক গরিব সন্তান, অনেক এতিম সন্তানরা সেখানে ঠাঁই পায়। কিন্তু তাদের আসলে কোনো স্বীকৃতিও ছিল না-তারা নিজেদের মতো নিজেরাই করতো।’
তিনি বলেন,আমি চেষ্টা করে গেছি-এটার একটা সমাধান করতে। আজকে সেটা করে (কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি) দিয়েছি তাদের জন্য। কেউ যদি এখন আমার জন্য দোয়া করে বা কেউ যদি ভালো বলে তাহলে তো দেশের মানুষের খুশি হওয়া কথা।
এসময় প্রশ্নের সুরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কী পড়ছে, কোথায় যাচ্ছে, কী করছে-তাদের কোনো ঠিকানা নাই। তাদেরকে একটা সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার বা সম্মান দেওয়ার তাদের জীবন-জীবিকার পথটা সৃষ্টি করে দেওয়া কি আমাদের কর্তব্য না?’-
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের অভিজ্ঞতা জানাতে বুধবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই নিউইয়র্কে তার সফরের বিষয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। লিখিত বক্তব্যের পর তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শেখ হাসিনা বলেন, অনেকেই অনেক কিছু মনে করতে পারেন। কিন্তু আমি মনে করি, ধর্মীয় অনুভূতির আমরা কেউ বাইরে না। ধর্ম শিক্ষাটা আমাদের শিক্ষাটা পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা তখনই যখন আমরা জীবন-জীবিকার শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাটা গ্রহণ করতে পারি সে শিক্ষাটাই পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা হয়।
‘আপনার এক সময়ের শত্রু আল্লামা শফী এখন আপনাকে সংবর্ধনা দিচ্ছে-এ প্রসঙ্গে আপনার মতামত কী?’- একটি পত্রিকার সম্পাদকের করা এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমার কোনো (হেফাজতের সঙ্গে) শত্রুতা ছিল না, এটা ভুল। কে শত্রু কে মিত্র তা দেখিনি।
হেফাজতে ইসলামের দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় তারা মনে করতো আমি ধর্মে বিশ্বাস করি না, এখন যদি তারা প্রশংসা করে তাহলে আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। সবার মনেই একটা স্বস্তি এসেছে যে, এখন আর (শাপলা চত্বরের মতো) ওই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না। আমি চেয়েছি এরকম পরিস্থিতি যেন আর না হয়, সেটা হয়ে গেছে।
৫ মের ঘটনা বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি চেয়েছি যে, এরকম পরিস্থিতি যেন বাংলাদেশে আর না ঘটে। এবং বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তা দরকার। তখনকার ওই অঞ্চলের সবাই ভয়ভীতির মধ্যে ছিল। এমন অবস্থা ছিল যে, তারা যেকোনো সময় যেকোনো ঘটনা ঘটাতে পারে। খালেদা জিয়া তো ওপেনলি তাদের সমর্থন দিয়ে দিল। জামায়াত তাদেরকে সমর্থন দিয়ে দিল।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘তাদের বলা হয়েছিল, ২০০ গরু জবাই করে খাওয়াবে। কিন্তু তাদেরকে খাওয়াই নাই, তারা মাদরাসার বাচ্চা বাচ্চা (ছেলেদের) নিয়ে আসছিল। তাদের ভাগ্যে একটা রুটি কলা ছাড়া কিছুই জুটেনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেভাবেই হোক, আমি যেভাবেই পারি আমি তো টেনশন মুক্ত করেছি। কেউ তো আর সাধুবাদ দেবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা আমার সত্যিকার ভালো চায় না, যারা আমাকে খুন করার চেষ্টা করছে, তারা হয়তো মনে কষ্ট পাবে, অখুশি হবে। কিন্তু সারা বাংলাদেশের মানুষ (কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতির কারণে) খুশি হয়েছে। এখন আমার অনুভূতি এতটুকুই যারা শিক্ষা গ্রহণ করতো তাদের যে একটা ভবিষ্যতের ঠিকানা করে দিতে পেরেছি সেটাই আমার বড় সেটিসফেকশন (তৃপ্তি)।
আইএ/পাবলিক ভয়েস