
নরসিংদী সদর উপজেলার কাউরিয়াপাড়া লঞ্চঘাটের টয়লেট থেকে দুই বোনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন নিহত দুই মেয়ের বাবা শফিকুল ইসলাম। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, ভরণপোষণ ঠিকমতো দিতে না পারার কষ্ট সইতে না পেরে তিনি তার দুই মেয়েকে হত্যা করেন।
শনিবার (২৫ মে) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে নরসিংদীর পুলিশ সুপার (এসপি) মিরাজ উদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান।
এসপি মিরাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ডাক্তার দেখানোর জন্য শফিকুল ইসলাম তার দুই মেয়েকে শিবপুর উপজেলা সদরে নিয়ে আসেন। কিন্তু সেখানে ডাক্তার না পাওয়ায় তাদের নিয়ে নরসিংদী সদরে আসেন। একপর্যায়ে দুই বোন লঞ্চঘাট দেখতে চাইলে তাদের কাউরিয়াপাড়া লঞ্চঘাটে নিয়ে আসেন শফিকুল ইসলাম।’
এসপি জানান, লঞ্চঘাটের টয়লেট থেকে লাশ উদ্ধারের পর শফিকুল ইসলাম এসে নিহতদের তার সন্তান বলে দাবি করেন। তার আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘লঞ্চঘাটে আসলে লিচু খেতে চায় মেয়ে দুটি। কিন্তু তার কাছে টাকা না থাকায় সে লিচু কিনে দিতে পারেনি। এসময় প্রথমে ছোট মেয়েকে লঞ্চঘাটের টয়লেটে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন শফিকুল এবং পরে একইভাবে তিনি বড় মেয়েকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। ভরণপোষণ ঠিকমতো দিতে না পারার কষ্ট সইতে না পেরে তিনি মেয়ে দুটিকে হত্যা করেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।’
মিরাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শফিকুল তার দেওয়া বক্তব্যে স্থির থাকছেন না। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অসংলগ্ন কথাও বলেছেন। তবে ঘটনার স্থান ও সময়, নিহতদের গলায় আঘাতের চিহ্ন ও হত্যার বিবরণ থেকে আমরা নিশ্চিত, দুই মেয়েকে শফিকুলই হত্যা করেছেন।’
জানা গেছে, অভিযোগ না পাওয়ায় এখনও (শনিবার দুপুর) মামলা দায়ের হয়নি। আজ শনিবার সকালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দু’টি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, শফিকুল ইসলামকে ‘মানসিক রোগাক্রান্ত’ বলে দাবি করেন তার ভাই রাফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘১০-১১ বছর আগে মানসিকভাবে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে শফিকুলকে দুই-তিনমাস আবদ্ধ করে রাখা হয়। ওই সময় চিকিৎসাও করানো হয়। এরপর সুস্থ হয়ে উঠে সে। সম্প্রতি অভাব-অনটনে সে আবার মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে, যা পরিবারের সবাই লক্ষ্য করেছে।’
শুক্রবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় কাউরিয়াপাড়া লঞ্চঘাটের টয়লেটে এক শিশু ও এক কিশোরীর লাশ পরে থাকতে দেখে থানায় খবর দেন স্থানীয়রা। পরে নরসিংদী সদর মডেল থানার পুলিশ টয়লেটের ভেতর থেকে লাশ দু’টি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরে জানা যায়, নিহত নুসরাত জাহান তাইন (১১) ও তানিশা তাইয়েবা (৪) মনোহরদীর পূর্ব চালাক চর গ্রামের শফিকুল ইসলামের মেয়ে।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন