
শেখ নাসির উদ্দিন, খুলনা: ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা। খুলনা আধুনিক রেল স্টেশনের মহিলা কাউন্টারের সামনে রোকসানা খানম নামের একজন মহিলার বৃথা টিকেটের আওয়াজ। কেননা কাউন্টার বন্ধ। একটি কাউন্টার চালু তাও যাত্রীদের চাপ নেই। তাও লাইনে অপেক্ষা করে কাউন্টারে ৩০ কিংবা ৩১ তারিখের টিকেট বললেই ভিতর থেকে নেই বলে ঘোষণা।
মহিলারাও এক কাউন্টারেই ভিড় করছেন টিকেটের জন্য। শুধু রোকসানা নয় এ রকম আরও অনেক রোকসানাকে পুরুষের সাথে পাল্লা দিতে হচ্ছে টিকেটের জন্য খুলনা রেল স্টেশনে। যাত্রীদের সমস্যা সমাধান করার মতো স্টেশনে নেই কোন কর্মকর্তা। যারা আছেন তারাও কিছুই জানেন না। এছাড়া বিক্রি শুরু করা হয়নি স্পেশাল ট্রেনের টিকেটও।
এভাবেই নিজস্ব নিয়মেই চলছে খুলনা আধুনিক রেল স্টেশনে ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রি। যাত্রীদের যেন কোন গুরুত্বই নেই সেখানে। ওই সময় স্টেশনে কোন কর্মকর্তাতো নেই এমনকি তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ। এটাও যেন কর্মকর্তাদের স্বরচিত নিয়ম। ঈদের টিকেট বিক্রির সময় আসলে তারা যে কোন ঝামেলা এড়ালে গা ঢাকা দিয়ে থাকেন।
জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে ২২ মে থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে এবং তা চলবে ২৬ মে পর্যন্ত। আর ফিরতি টিকেট পাওয়া যাবে ২৯ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত। সে হিসেবে খুলনা রেল স্টেশনের কাউন্টার থেকে ৩১ মে যাত্রার টিকিট পাওয়া যায় বুধবার।
একই সাথে ১, ২, ৩ ও ৪ জুনের টিকিট বিক্রি করা হবে যথাক্রমে ২৩, ২৪, ২৫ ও ২৬ মে। ঈদ শেষে ফেরার জন্য ৭, ৮, ৯, ১০ ও ১১ জুনের টিকিট যথাক্রমে ২৯, ৩০ ও ৩১ মে এবং ১ ও ২ জুন মিলবে। কাউন্টার থেকে একজন ব্যক্তি বা যাত্রী সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে পারবেন। থাকবে পৃথক নারী কাউন্টারও।
রূপসা থেকে টিকেট কিনতে আসা সামসুল আলম বলেন, মোবাইল এ্যাপসে কোন টিকেট পাওয়া যাচ্ছে না। আবার স্টেশনেও দায়িত্বরত পুলিশ আগে টিকেট নেয় আর সাধারণ মানুষের অপেক্ষা করতে হয়। এক কাউন্টার দিয়েই সব টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে।
নিরালা আবাসিক এলাকা থেকে টিকেট কিনতে আসা রোকসানা খানম বলেন, মহিলা কাউন্টার বন্ধ থাকলে লিখে রাখার কি দরকার। এগুলো দেখার জন্য ঈদের সময় আসলেই কোন কর্মকর্তার আর পাওয়া যায় না।
রহিমা খাতুন নামের এক যাত্রী বলেন, তিনি ৩১ তারিখের এসি টিকেট নিতে এসেছেন। কিন্তু নেই বলে কাউন্টার থেকে জানিয়ে দিয়েছেন। ছোট বাবু থাকায় এখন বিপাকে পড়েছেন তিনিও।
কাউন্টারের বুকিং সহকারী মনির হোসেন বলেন, অগ্রিম টিকেট আছে তবে উত্তর বঙ্গের কোন টিকেট নেই। স্পেশাল টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে না। যাত্রীদের চাপ মোটামুটি আছে। আর এ বিষয়ে মাস্টারের সাথে কথা বললে সবকিছু জানতে পারবেন।
টিকেটের বিষয়ে জানতে কাউন্টারের ইনচার্জ মেহেদী হাসানের সাথে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়। তিনিও বিগত সময়ে একই কাজ করেন।
খুলনা রেল স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার স্নিগ্ধা বলেন, সবকিছুই কাউন্টারে। স্পেশাল ট্রেনের কোন নির্দেশনা তিনি পাননি। বড়বাবু(স্টেশন মাস্টার) পেয়েছেন কিনা তা তিনি জানেন না।
খুলনা রেল স্টেশনের মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকারকে ওই সময়ে স্টেশনে ছিলেন না। এজন্য তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ঈদের সময় অগ্রিম টিকেট বিক্রির সময় তিনি বিগত সময়েও একই কাজ করেন।