
মুজাহিদ হোসেন, রাবি: রমজান হলো আত্নশুদ্ধির মাস। রমজান পালনের দুটি বড় মাধ্যম হলো সেহরি ও ইফতার। সারাবিশ্বের মতো আমাদের দেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হচ্ছে রমজান মাস। তবে শহর কিংবা গ্রামের মতো ইফতারের সময় অনেকটা ভিন্নরূপ দেখা যায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ইফতার নিয়ে আড়ম্বর না থাকলেও এ নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি থাকে না শিক্ষার্থীদের মনে। সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়লে শুরু হয় ইফতারির প্রস্তুতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রতিটি হলের সামনে ছোটখাটো ইফতারির দোকান বসে। আসরের পর পর সবাই ইফতারি কিনে আনে। ইফতারির মধ্যে থাকে মুড়ি, আলুর চপ, পিয়াজু, ডিমের চপ, জুস, বেগুনি, জিলাপি, শরবত, খেজুর, বুন্দিয়া, এবং নানা রকম ফল-ফলাদি।
প্রথম রোজা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) সবুজ ক্যাম্পাসের বিভন্ন স্থানে ইফতার করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শহীদ মিনার থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় মসজিদের খোলা বারান্দায়, ছেলেদের হলের সামনের ফাঁকা জায়াগা, মেয়েদের হলের সামনে, হবিবুর মাঠ, শেখ রাসেল চত্বরের খোলা মাঠ, সাবাস বাংলার মাঠ, সিনেট ভবনের সিঁড়ি সহ ক্যাম্পাসের বিভন্ন ফাঁকা জায়গায় আসরের নামাজ পর পরই অনেকে ইফতারের পসরা সাজিয়ে বৃত্তাকার হয়ে বসেছে।
গত শুক্রবার রাবির শেখ রাসেল চত্ত্বরে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইফাত জাহান রোকেয়া হল থেকে বন্ধুদের সাথে ইফতারি করতে এসেছে। তিনি হল থেকে এক বোতল পানি এবং নিজের হাতে বানানো ভাজা পোড়া জিনিস নিয়ে এসেছেন যেগুলো সবার সাথে শেয়ার করে ইফতারি করবে। ইফাত জাহান এর সাথে কথা বলতে গিয়ে দেখা গেল সবুজ ঘাসের উপর বৃত্তাকার হয়ে বসে তার অনেকগুলো বন্ধু-বান্ধবীরা মিলে ইফতারি সাজাচ্ছে। গল্পের ফাঁকেফাঁকে ইফতার আয়োজনে ব্যস্ত তারা।
কেউ বিভিন্ন রকমের ফলগুলো ধুয়ে আনছে, কয়েকজন শশা, গাজর, ফলমূল কাটাকাটি করছে, কেউবা আবার লেবু চিপিয়ে শরবত তৈরিতে ব্যস্ত, আরেক জন সবার বসার জন্য পেপার বিছিয়ে দিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা ছেলেমেয়েরা পরিবার থেকে দূরে থেকেও যেন আরেক নতুন পরিবার গড়ে তুলেছে এখানে।
ইফাত জাহান তার অনূভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই প্রতিবছর আমরা বন্ধুরা একসঙ্গে ইফতার করি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন প্রায় শেষ হতে চলল। এরপর এমন করে ইফতারি করা হবে কি না জানি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবন শেষে এই বন্ধুরা মিলে ইফতার করাটা খুব মিস করব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন হবিবুর মাঠে তার সংগঠনের কিছু ছোট ভাইদের সাথে ইফতার করতে এসে তিনি বলেন, খোলা মাঠে এলাকার ছোট ভাই বোনদের সাথে ইফতার করতে এসেছি। সবাই মিলে ভাগাভাগি করে ইফতারি করা যে আনন্দ, তা অন্য কোথায় পাওয়া যায় না। ইফতার তো একটা এবাদত। এভাবে ইফতার করলে ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বও বাড়ে।
আল-হুছাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী তিনি বলেন, বেশিরভাগ রমজানে ইফতারি হয় হলের বন্ধু, বড় ও ছোট ভাইদের সঙ্গে। হলের সামনের খোলা মাঠ যেন সকলের মিলনমেলা। বড় থালায় খেজুর, বেগুনি, চপ, বড়া, নিমকি, জিলাপি, ছোলা, মুড়ি, বুন্দিয়া মাখিয়ে খাবার যে মজা, তা বলে বোঝানো যাবে না। মাখানো এ ইফতার যেন ভালবাসা মাখানোর মতোই। বাবা-মাকে রমজান মাসে বেশি মিস করলেও বন্ধুদের নিয়ে আড্ডার পাশাপাশি সারাদিন রোজা রাখার পর সন্ধ্যাবেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলা মাঠে বসে ইফতার করার স্বাদটাই যেন ভিন্ন রকম।