
রোজা! ইসলামের মূল ৫টি ভিত্তির একটি। সকল মুসলমানই রোজা রাখে। কিন্তু রোজাভঙ্গের কারণ জানা না থাকার কারণে এমন কাজ করে ফেলে, যার কারণে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। এখানে আমাদের দুটি জিনিস জানতে হবে। প্রথমত, কী কারণে রোজা ভঙ্গ হয়? দ্বিতীয়ত, রোজা ভঙ্গ হয়ে গেলে করণীয় কী? প্রথমত, আমরা রোজা ভঙ্গ হওয়ার কারণ নিয়ে আলোচনা করব।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহি. রোজা ভঙ্গকারী বিষয়গুলোকে দুইভাগে ভাগ করেছেন। প্রথমত, কিছু জিনিস শরীর থেকে বের হলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, কিছু জিনিস শরীরে প্রবেশ হলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। শরীর থেকে বের হওয়া বস্তু হল সহবাস করা, হায়েজ বা নেফাস শুরু হওয়া, ইচ্ছেকৃত বমি করা। ভিতরে প্রবেশ করানোর উপমা হল খাওয়া, পান করা। (মাজমুআতু ফতোয়া ইবনে তাইমিয়া : ২৫/২৪৮)
প্রাসঙ্গিকভাবে আরেকটি মাসআলা নিয়ে আলোচনা করা জরুরী। রোজা অবস্থায় রক্ত দেওয়া যাবে কি না? কারণ রক্ত শরীর থেকে বের হয়। এ ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরামের মত হল, রোজা অবস্থায় অন্যকে রক্ত দেওয়া যাবে। তবে রক্ত দেওয়ার কারণে মাত্রাতিরিক্ত দুর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে রক্ত দেওয়া মাকরুহ। (আহসানুল ফতোয়া, ৪/৫৬৩, ফতোয়া কাসিমিয়্যিহ : ৬/৩৪২) সহবাস হল প্রথম।
এছাড়া হস্তমৈথুন করে বীর্যপাত করালেও রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। বীর্যপাত না হলে রোজা বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে তাকে খাঁটি অন্তরে আল্লাহর কাছে তাওবা করতে হবে। এক্ষেত্রে তার জন্য করণীয় হল, বাকী দিন সে উপবাস থাকবে। পরবর্তীতে উক্ত রোজা কাজা করে নিবে। সহবাসের জন্য বীর্যবাত শর্ত নয়। বরং পুরুষ এবং মহিলার খতনা করা অংশ মিলিত হয়ে গেলেই রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। অনিচ্ছাকৃতভাবে সহবাস করলেও রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।
সহবাস করলে পরবর্তীতে রোজার কাজা এবং কাফফারা উভয়টি আদায় করতে হবে। যদি মজি বা কামরস বের হয়, তাহলে বিশুদ্ধমত অনুযায়ী রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে রোজাদারের জন্য জরুরী হল, কাম উত্তেজনা সৃষ্টি করে এমন কাজ থেকে দূরে থাকা। রোজার কথা স্মরণ থাকাসত্বেও ইচ্ছে করে খেলে বা পান করলে তা যত কমই হোক রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এমনকি মুখের ভিতরে থাকা কোন খাদ্যকনা বা দাত মাজার ব্রাশ মুখ থেকে বের করার পর আবার মুখে দিয়ে তাতে অবস্থিত তরল পদার্থ পান করলেও রোজা বাতিল বলে পরিগণিত হবে। তবে যদি সে তরল পদার্থ তার সাথে এভাবে মিশে থাকে যার ফলে তা বাইরের তরল পদার্থ বলে ধরা হয় না, তাহলে রোজা বাতিল হবে না। তবে কাশ বা কফ গলার মধ্যে থাকা অবস্থায় গিলে ফেলার কারণে রোজা বাতিল হবে না; তবে যদি তা গলার উপরে মুখের ভেতর চলে আসে, তাহলে তা গিলে ফেলা উচিত হবে না।
যেসব কারণে রোযা ভাঙে এবং কাযা কাফফারা প্রয়োজন।
মাসআলা : রমযানে রোযা রেখে দিনে স্ত্রী সহবাস করলে বীর্যপাত না হলেও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ওপর কাযা ও কাফফারা ওয়াজিব হবে। একটি দীর্ঘ হাদীসে আছে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বলল, আমি রোযা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করেছি। রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কাফফারা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন দেখুন : সহীহ বুখারী ৬৭০৯; জামে তিরমিযী ৭২৪; মুসান্নাফে আবদুররাযযাক ৭৪৫৭; মুসনাদে আহমদ ২/২৪১
মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব রাদি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তিকে (যে স্ত্রীসহবাসে লিপ্ত হয়েছিল) কাফফারা আদায়ের সাথে কাযা আদায়েরওআদেশ করেছিলেন।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৭৪৬১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৬
মাসআলা : রোযা রেখে স্বাভাবিক অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে কাযা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি হবে। হাদীস শরীফে আছে- এক ব্যক্তি রমযানে রোযা রেখে (ইচ্ছাকৃতভাবে) পানাহার করল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আদেশ করলেন, যেন একটি দাসআযাদ করে বা দুই মাস রোযা রাখে বা ষাটজন মিসকীনকে খানা খাওয়ায়; -সুনানে দারাকুতনী ২/১৯১
ইমাম যুহরী রাহ. বলেন, ‘রমযানে রোযা রেখে যে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করবে তার হুকুম ইচ্ছাকৃতভাবে দিনে সহবাসকারীর অনুরূপ।’ অর্থাৎ তাকে কাযা ও কাফফারা উভয়টি আদায় করতে হবে। মাবসূত, সারাখসী ৩/৭৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৬
মাসআলা : বিড়ি-সিগারেট বা হুক্কা পান করলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি হবে।-রদ্দুল মুহতার ৩/৩৮৫ এই মাসআলার দলীল বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনারজন্য দেখুন : ঝাজরু আরবাবির রায়্যান আন শুরবিদদুখান; তারবীহুল জিনান বিতাশরীহি হুকমি শুরবিদদুখান, আল্লামা আবদুল হাই লাখনোবী রাহ.
মাসআলা : সুবহে সাদিক হয়ে গেছে জানা সত্ত্বেও আযান শোনা যায়নি বা এখনও ভালোভাবে আলো ছড়ায়নি এ ধরনের ভিত্তিহীন অজুহাতে খানাপিনা করলে বা স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত থাকলে কাযা-কাফফারাদু’টোই জরুরি হবে।-সূরা বাকারা : ১৮৭; মাআরিফুল কুরআন ১/৪৫৪-৪৫৫