মিদহাদ আহমদ
“মা”। আমার ভালোবাসা। আমার প্রথম চাওয়া। আমার আবদার। আমার আবেগ। আমার ইচ্ছা। আমার অনুভূতি। আমার মাকে আমি ছোটবেলা থেকেই সংগ্রাম করতে দেখেছি। সংগ্রাম মানে আমার জন্য সংগ্রাম। কীসে আমার ভালো হবে,কিসে আমার খারাপ হবে তাই নিয়েই আমার মা সবসময় ব্যাস্ত থাকতেন। আমি যা চাইতাম আমার মা সবসময় আমায় তা দেয়ার চেষ্টা করতেন।
পড়াশোনার ব্যাপারে মা ছিলেন আমার অগ্রদূত। পড়া পড়া এবং পড়া এককালে আমার মায়ের মুখের একমাত্র প্রচলিত বানী ছিল। সময়ের সাথে সাথে এখন অনেকটাই সেই পড়ার কথা ‘মা’ কমিয়ে নিয়েছেন। যখন আমি মোবাইলে ব্যস্ত, আম্মু এসে বলেন, বাবা এই সময়টা একটু পড়লেও তো পারিস। আমি মুচকি হাসি দেই। আম্মুও কিছু বলেন না।
চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী আম্মু বলেন না, "মোবাইলের ভেতর ঢুকে পড়ো" আমার আম্মু একারণেই ব্যতিক্রম। আম্মু আমার কাছে সবসময়ই একজন বিস্ময়রমনী। আমার মা আমাকে কতটুকু ভালোবাসেন তার কোনো উদাহরণদ বা ডেফিনেশন দিয়ে আমি বুঝাতে পারবো না। এমনও অনেক দিন গিয়েছে, আমি রাত ১ টা ২ টা পর্যন্ত ফেসবুক চালাচ্ছি। আম্মু ওনার মোবাইলে আমায় একটিভ দেখছেন, কিন্তু আমায় ধমক দিয়ে বলেননি, "ফেসবুক বন্ধ কর" রোমে এসে বলেছেন, "বাবা কালকে কলেজ আছে। ঘুমিয়ে পড়ো। কলেজ থেকে এসে না হয় সারাদিন মোবাইলে থাকিস।"
আমার কাছে আম্মু আমার এজন্যই ব্যতিক্রম। সারা দুনিয়া যখন সন্তানের হাতে ইন্টারনেট নিয়ে সন্ধিহান, এমন সময় আমি বলছি, নতুন কো নো ইসলামি সংগীত রিলিজ হলে আম্মু বলেন, "বাবা এইটা ডাউনলোড করে দে।" মা আমার এমনই।
গতকাল সাহরীর জন্য আম্মু দই বসাবেন। আমায় দিলেন ডাক, মিদহাদ, এসো দই বানাই। আমিও গেলাম। রেসিপি দেখলাম একসাথে। দই বানালাম একসাথে। খেলামও একসাথে। ছোট বোন মাকে এসে বলে, "তোমার ছেলে মোবাইলে কোন মেয়ের সাথে কথা বলছে" আম্মু কী বলেন জানেন (?) আম্মু বলেন, "চয়েজ হলে আমাকে বলে দিবি।" আমার আর কী ই বা চাই। যার মা এরকম তার জীবনে অপরাধবোধ কখনোই আসবে না। প্রেমিকার কথা নাহয় মাকে বলেই দিবো (যদি কোনো কালে হয় আরকি)। মাকে নিয়ে যদি আমি লিখতে বসি, তাহলে এই পৃথিবী অবাক চোখে তাকিয়ে থাকবে। আমার মা আমার কাছে মমতাময়ী, স্নেহময়ী, নীলিমার মতো মুখের হাসির অধিকারিনী।
মা, তোমায় খুব খুব খুব ভালোবাসি। এরকমই থেকো আজীবন।