
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ না নেয়ায় শূন্য হয়ে যাওয়া বগুড়া-৬ (সদর) আসনে আগামী ২৪ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এ আসনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ২৩ মে। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৭ মে এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৩ জুন।
এরই মধ্যে এই আসনে উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম।
আজ শনিবার দুপুরে হিরো আলম বলেন, আমি জাতীয় পার্টির সাংস্কৃতিক দলে যোগ দিয়েছি তাই জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইব। যদি জাতীয় পার্টি মনোনয়ন না দেয় তাহলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবো।
এর আগে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন হিরো আলম। সে সময় ১০ জনের স্বাক্ষরে গড়মিল থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছিল। এরপর ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে মনোনয়ন পত্রের বৈধতা পেয়েছিলেন হিরো আলম। নির্বাচনে এ আসন থেকে সিংহ মার্কায় হিরো আলম পেয়েছিলেন ৬৩৮ ভোট। পরে ভোট বর্জন করেন তিনি।
তবে হিরো আলম সম্পর্কে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুস সালাম বাবু বলেন, তিনি (হিরো আলম) মূল দলের কেউ নন। জাতীয় পার্টির কোনো নেতাকর্মীর সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাকে মনোনয়ন দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বগুড়া-৬ এর প্রার্থী হবেন জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর। হিরো আলম জাতীয় সাংস্কৃতিক দলে যোগ দিয়েছে বলে শুনেছি। এর বাইরে কোনো কিছু নয়।
বিএনপির দুর্গে ভিআইপি খ্যাত আসন বগুড়া-৬ (সদর)। বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য আসনটি সংরক্ষিত। আসনটি শূন্য ঘোষণার পরপরই উপ-নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। কে কোন দল থেকে প্রার্থী হবেন সেটি যেমন আলোচিত হচ্ছে, তেমনি বিভিন্ন নেতার সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাই’ লিখে পোস্ট করতে শুরু করেছেন। এ উপ-নির্বাচনে আ.লীগের একাধিক প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির একজনের নাম শোনা গেলেও দল বা জোটগতভাবে বিএনপি এই উপনির্বাচনে অংশ নেবে কি-না তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। তবে এবার মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থীও থাকছে।
৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ২৯ এপ্রিল বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ শপথ নিলেও মির্জা ফখরুল শেষ পর্যন্ত শপথ নেননি। এ কারণে ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। বগুড়া-৬ আসন শূন্য ঘোষণার খবর প্রচার হওয়ার পর থেকেই উপ-নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় আসে।
উপ-নির্বাচনে আ.লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন জেলা আ.লীগের তিনজন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে রাগেবুল আহসান রিপু, টি জামান নিকেতা ও মঞ্জুরুল আলম মোহন, জেলা আ.লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শাহাদৎ আলম ঝুনু, জেলা আ.লীগের প্রয়াত সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের ছেলে ও বগুড়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন এবং আ.লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সহ-সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক। এছাড়াও জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম ওমর বগুড়া-৬ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সাবেক মোটর শ্রমিক নেতা সৈয়দ কবির আহম্মেদ মিঠু।
জানতে চাইলে বগুড়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এবং প্রয়াত আলহাজ মমতাজ উদ্দিনের ছেলে মাসুদার রহমান মিলন জানান, দলকে তিনি ভালোবাসেন। কেন্দ্র চাইলে প্রার্থী হতে রাজি আছেন। বগুড়ার মানুষ ধানের শীষ ছেড়ে নৌকাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে ব্যালটে সেটি তারা দেখিয়ে দিবে।
বগুড়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান আকন্দ বলেন, বগুড়া জেলা আ.লীগের সভাপতি বর্ষিয়ান নেতা মরহুম মমতাজ উদ্দিনের মৃত্যুতে আ.লীগে এক ধরণের অভিভাবক শূন্যতা বিরাজ করছে। এই দলের একটি বিরাট অংশ চেষ্টা করছে মরহুম মমতাজ উদ্দিনের ছেলে বগুড়া চেম্বারের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মাছুদার রহমান মিলনকে দলের মনোনয়ন দেয়ার। এটি করা হলে বগুড়ায় আ.লীগের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত উপকার হবে। সংগঠনও শক্তিশালী হবে।
একই কথা বলেছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুর রহমান তিতাস। তার মতে, মমতাজ উদ্দিন দলকে আগলে রেখেছিলেন। দলে তার ত্যাগ অনেক। এ কারলে তার ছেলের ব্যাপারে দেশনেত্রী সদয় হবেন, এটি সবার প্রত্যাশা।
বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়ার ৭টি আসনই দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির দখলেই ছিল। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বিপুল ভোটে বগুড়া-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ভোটে অংশগ্রহণ না করায় মহাজোটের প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম ওমর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী নূরুল ইসলাম ওমরকে পরাজিত করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বগুড়া জেলা আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, টি জামান নিকেতা ও মঞ্জুরুল আলম মোহন বলেন, আমরা অতীতেও প্রার্থী ছিলাম। এবার থাকবো। আশা করছি দল আমাদের মূল্যায়ন করবে। তারপরও দল যাকে মনোনয়ন দেবে আ.লীগের সকল নেতাকর্মীই নৌকার হয়ে তার পক্ষে থাকবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।
জেলা আ.লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শাহাদৎ আলম ঝুনু বলেন, আমরা বরাবরই পরিবর্তনের পক্ষে। দল নতুনদের অগ্রাধিকার দিতে চায়। সে কারণে আমি প্রার্থী।
জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি নূরুল ইসলাম ওমর বলেন, যেহেতু সর্বশেষ নির্বাচনে আমি মহাজোটের প্রার্থী ছিলাম, এ কারণে আসন্ন উপ-নির্বাচনেও আমি মনোনয়ন চাইবো। দল বা জোটগতভাবে মনোনয়ন পেলে আমি প্রার্থী হবো।
জেলা আ.লীগের একাধিক নেতাকর্মী জানান, ধানের শীষের ওপর থেকে মানুষের আস্থা হারিয়ে গেছে। এখন তারা বুঝতে পেরেছে ভুল লোককে ভোট দিয়ে জয়ী করেছিল। যার কারণে মানুষ আগামীতে এই ভুল আর করবে না।
এদিকে জেলা বিএনপির একাংশের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম উপ-নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে দলের অপর অংশের নেতা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা জানিয়েছেন, এই উপ-নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। এ কারণে কারও প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন চাঁন বলেন, বগুড়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের। এখন জেলা কমিটি নেই। আহ্বায়ক কমিটি হয়ে আছে দুটি। কেন্দ্র কোনো কমিটিকেই অনুমোদন দেয়নি। যার কারণে এখানে মন্তব্য করা কিংবা সিদ্ধান্ত দেয়ার মতো কেউ নেই।
এদিকে ২০ দলীয় জোটের সাম্প্রতিক টানাপোড়েনের কারণে এই আসনে জামায়াত তাদের প্রার্থী দাঁড় করাতে পারে বলে দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
জিআরএস/পাবলিক ভয়েস