রমজান মাসে যদি কেউ একটি নফল ইবাদত করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে একটি ফরয আদায়ের সওয়াব দান করেন। যদি কেউ একটি ফরয আদায় করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে সত্তরটি ফরয আদায় করার সওয়াব দান করেন
আর অভাবগ্রস্ত মানুষদের অভাব দূর করা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভালো কাজের অন্যতম। আবদুল্লাহ বিন উমর রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يُسْلِمُهُ وَمَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللَّهُ فِي حَاجَتِهِ وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
অর্থাৎ মুসলমান হলো মুসলমানের ভাই। যে কোনো মুসলমান ভাইয়ের প্রয়োজন পূর্ণ করে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রয়োজন পূর্ণ করেন। যে কোনো মুসলমানের একটি প্রয়োজন পূর্ণ করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা একটি প্রয়োজন পূর্ণ করবেন। যে কোনো মুসলমানের দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তায়ালা কিয়মাতের দিন তাঁর দোষ গোপন রাখেন। (বুখারী: হাদীস নং ২৪৪২, শায়খ যুহাইর বিন নাসের তাহকীককৃত)
মানুষের পাশে দাঁড়ানো ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্বভাবজাত অভ্যাস। তিনি ছিলেন সকলের সুখ, দুঃখের সাথী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সামর্থ্য অনুসারে সকলকে সাহায্য করতেন। এজন্য জিবরীল আ. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট প্রথমে ওহী নিয়ে আসার পর তিনি প্রচুর ভয় পেয়েছিলেন। বাড়িতে এসে খাদীজা রা. কে বলেন, আমি আমার প্রাণনাশের ভয় করছি।
তখন খাদিজা রা. বলেন,
كَلَّا وَاللَّهِ مَا يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ وَتَحْمِلُ الْكَلَّ وَتَكْسِبُ الْمَعْدُومَ وَتَقْرِي الضَّيْفَ وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ
অর্থাৎ আল্লাহ আপনাকে অপদস্থ করবেননা। আপনি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করেন। অনাথ নিঃস্বদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন। ইয়াতীমদের সাহায্য করেন। মেহমানের মেহমানদারী করেন। মাজলুমকে সাহায্য করেন। (বুখারী, হাদীস নং ৩)
এ হাদীস থেকে বুঝা গেলো যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়ত লাভের পূর্ব থেকে এ গুণাবলি তাঁর মধ্যে ছিল। কিন্তু রমজান মাসে তিনি অন্যান্য মাসের চেয়ে বেশি দান করতেন।
ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেন-
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ وَكَانَ يَلْقَاهُ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ فَيُدَارِسُهُ الْقُرْآنَ فَلَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدُ بِالْخَيْرِ مِنْ الرِّيحِ الْمُرْسَلَةِ
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন মানুষদের মাঝে সবচেয়ে বেশি দানশীল। রমজানে যখন জিবরীল তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বেশি করে দান করতেন। জিবরীল আ. তাঁর সাথে রমযানের প্রতি রাতে দেখা করতেন এবং পরস্পর কুরআন তেলাওয়াত করতেন। দানশীলতার ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবহমান বাতাসের চেয়ে বেশি অগ্রগামী। (বুখারী, হাদীস নং ৫)
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহ. বলেন-
في الحديث فوائد منها الحث على الجود في كل وقت ومنها الزيادة في رمضان وعند الاجتماع بأهل الصلاح وفيه زيارة الصلحاء وأهل الخير وتكرار ذلك إذا كان المزور لايكرهه واستحباب الأكثار من القراءة في رمضان وكونها أفضل من سائر الأذكار إذ لو كان الذكر أفضل أو مساويا لفعلاه
অর্থাৎ এ হাদীসে কিছু ফায়েদা রয়েছে। একটি হলো: সব সময় দানের প্রতি উৎসাহ প্রদান। আরেকটি হলো: অন্য সময়ের তুলনায় রমযানে বেশি করে দান করা। আরেকটি হলো: বেশি করে এ মাসে কুরআন তেলাওয়াত করা। (ফাতহুল বারী, ১/৪০ দারুল হাদীস, কাহেরা)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দানশীলতা সবার মাঝে প্রসিদ্ধ ছিল। প্রসিদ্ধ সাহাবী জাবের রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট কোনো কিছু কিছু চাওয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি না করেননি।
জাবের রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন-
لَوْ قَدْ جَاءَ مَالُ الْبَحْرَيْنِ قَدْ أَعْطَيْتُكَ هَكَذَا وَهَكَذَا وَهَكَذَا فَلَمْ يَجِئْ مَالُ الْبَحْرَيْنِ حَتَّى قُبِضَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থাৎ যদি বাহরাইনের সমুদয় সম্পদ আমার নিকট আসে, তাহলে আমি এভাবে এভাবে দান করবো। (বুখারী, হাদীস নং ২২৯৬, শায়খ যুহাইর বিন নাসের তাহকীককৃত)
আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ সামর্থ অনুযায়ী রমজান মাসে দান করা। আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দান করুন।