
ট্রেনে দুষ্কৃতকারীর ছোড়া পাথরের আঘাতে পৃথক দুই ঘটনায় দুই শিশু মারাত্মক আহত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। দুই শিশুরই মাথার আঘাত গুরুতর বলছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে দুষ্কৃতকারীদের খুঁজে বের করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়ে আহত শিশুদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার কথা জানিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক খোন্দকার শহিদুল ইসলাম। আর দোষীদের কঠোর শাস্তির আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন আহত শিশুদের স্বজনরা।
গত রোববার বিকেল ৪টায় পদ্মা এক্সপ্রেসে রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশে পরিবারের সঙ্গে যাত্রা করছিলেন চার বছরের শিশু জিসান। সন্ধ্যা নাগাদ জামতৈল স্টেশন পার হবার পরপরই চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে দুষ্কৃতকারীর ছোড়া একটি পাথর সরাসরি এসে লাগে শিশু জিসানের মাথায়। সাথে সাথেই শুরু হয় প্রচন্ড রক্তপাত। প্রথমে সিজানকে নেয়া হয় সিরাজগঞ্জ হাসপাতালে। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হলে পাঠানো হয় রাজশাহী মেডিকেলে।
জিসানের বাবা আবদুস সালাম জানান, ছোড়া পাথরের আঘাতে রক্তাক্ত জিসানকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের ৩০ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। গত রোববার রাতে জিসানের মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। শিশুটি এখনো আশঙ্কামুক্ত কি না নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না চিকিৎসকরা।
গত রোববার চিকিৎসার জন্য রকেট মেইলে ভেড়ামারা থেকে রাজশাহী আসার পথে পাকশী-ঈশ্বরদীর মাঝামাঝি পাথরের আঘাতে আহত হন ১৪ বছরের আরেক শিশু জুঁথি। সেও মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় চিকিৎসাধীন রাজশাহী মেডিকেলে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার চিকিৎসক সাইদুজ্জামান বলেন, আহত দুই শিশুর অবস্থাই শঙ্কামুক্ত নয়। তাদের ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এর পর নিশ্চিত হওয়া যাবে তাদের অবস্থা সম্পর্কে।
এদিকে, গতকাল সোমবার দুপুরে আহত শিশুদের দেখতে হাসপাতালে যান পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক খোন্দকার শহিদুল ইসলাম। এ সময় তিনি আহত শিশুদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার পাশাপাশি দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান।
তিনি জানান, গত এক বছরে চলন্ত ট্রেনে ৩০টির মতো পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয় ১৭ জন। যাদের মধ্যে গত বছর নিহত হন এক রেল কর্মকর্তা।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জিএম বলেন, রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী পথে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেড়ে গেছে। ফলে ট্রেন চলাকালীন জানালা বাধ্যতামূলকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করা হয়েছে দায়িত্বরতদের। পাশাপাশি পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অনিষ্টকারী দুর্বৃত্তদের শিগগিরই চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রেলওয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রেলযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, এ পথে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি রেলের যাত্রীও বেড়েছে। তবে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা চলতে থাকলে যাত্রীরা ট্রেনবিমুখ হয়ে পড়বে। এতে বরং সরকারই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি দ্রম্নত পাথর নিক্ষেপকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
জিআরএস/পাবলিক ভয়েস