
গণমাধ্যম ও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের আদলে অস্ত্র সহ তোলা ছবি প্রকাশে অলোচিত জৈনপুরী পীর এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীর ছোট ভাই নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে একটি দুই নলা বন্দুক ও কিছু গুলির খোসা সহ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
[caption id="attachment_28891" align="aligncenter" width="300"]
এই ছবি নিয়েই তার ব্যাপারে সমালোচনা শুরু হয়। কয়েকটি নিউজমাধ্যম নিউজ করার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়।[/caption]
আরও পড়ুন : এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীর ছোট ভাইয়ের আপত্তিজনক ছবি প্রকাশ
বুধবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদ সম্মেলন এসপি জানান, মঙ্গলবার মধ্যরতে অভিযান চালিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে জানিয়েছে সে জৈনপুরী পীরের ভাই।
সংবাদ সম্মেলনে এসপি হারুন অর রশিদ বলেন, কিছুদিন আগে বিভিন্ন পত্রিকায় ও ফেসবুকে যার নাম আসছিল তার নাম নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসী। সে সন্ত্রাসী কায়দায় ড্রেস পড়ে রিভলবার ও এসএমজি সাথে নিয়ে ছবি পোস্ট দিয়েছিলেন। তার প্রেক্ষিতে আমরা তদন্ত শুরু করি। তার প্রেক্ষিতে আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি। তার কাছ থেকে দুই নলা বন্দুক ও খোসা সহ অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছি।
তিনি আরও বলেন, সে কেন সন্ত্রাসীদের আদলে ড্রেস পড়ে অস্ত্র ধারণ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে সেটা আমরা বের করবো। এবং কারো সঙ্গে জড়িত কিনা সেটাও আমরা তদন্ত করবো। সেই বিষয়ে তদন্ত করে, কে কি কারণে অস্ত্র ব্যবহার করে, এ খোসা গুলো কোথায় ব্যবহার করা হয়েছে, সে কেন গার্মেন্টসে অভিযান বা লুটপাট করেছে, কেন সে জঙ্গি ড্রেস পড়ে অস্ত্র সহ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে সব কিছুই আমরা তদন্ত করবো।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন পারভেজ জানান, নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীর বন্দুক-পিস্তল সহ ফেসবুক ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া ছবির পরই পুলিশ সুপারের দৃষ্টিতে আসে। এরপর তিনি দ্রুত নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীকে গ্রেফতার ও পিস্তল উদ্ধারের নির্দেশ দেন। নির্দেশ মোতাবেক মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীর কাছ থেকে দুই নলা একটি বন্দুক ও কিছু গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তিনি সেই বন্দুকের লাইসেন্স দেখিয়েছেন। তারপরও আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। এজন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭দিনের রিমান্ড আবেদন করে বিকেলে আদালতে পাঠানো হবে।
এর আগে ২৮ এপ্রিল রোববার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীন শাহ পারভেজের নেতৃত্বে পাঠানটুলীতে নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীর বাড়ি থেকে ছবিতে দেখানো পিস্তল ও বন্দুক উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানান, দুটাই খেলনা পিস্তল ও বন্দুক। আর তখন তখন বাড়িতে নেয়ামতউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন না।
ওসি জানান, বাড়িতে তল্লাশী করে দুটি খেলনা পিস্তল ও বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে। নেয়ামতউল্লাহর হাতে ও পেছনে এ দুটি খেলনা পিস্তল ছিল। বাড়ির লোকজনও জানিয়েছে মূলত শখের বশে নেয়ামতউল্লাহ এসব ছবি তুলেছেন। ‘তারপরও আমরা বিষয়টি আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখছি।’
এর আগে ২৫ এপ্রিল দিনগত রাত ১২টায় পাঠানটুলীতে একটি গার্মেন্টে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাটের পরেই ওই ছবিটি আসে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে। এ ছবি সহ সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এ ছবির উৎস নিয়েও তদন্তে নামেন। খোঁজ নিয়ে গেছে, ওই ছবিটি নেয়ামতউল্লাহর বাসাতেই ছিল। বাসার কয়েকটি দেয়ালে ছবিটি বাধাই করা ছিল।
স্থানীয়রা জানান, নেয়ামতউল্লাহ ছোট থেকেই বেশ আগ্রাসী মনোভাবের। সে এ ধরনের ছবি দেখিয়ে এলাকাতে প্রভাব বিস্তার করতো। বিভিন্ন উগ্রপন্থীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ থাকতে পারে বলে পুলিশের ধারণা।
এদিকে বৃহস্পতিবার দিনগত গভীর রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত দেড় শ’ জনের বিরুদ্ধে এইচ এন এপারেলস লিমিটেড নামের গার্মেন্টের কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায় জৈনপুরী পীর এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীর ছোট ভাই নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীর নেতৃত্বে আমির উদ্দিন, মঞ্জুর রহমান, হাসানুর রহমান, ইমরান হোসেন, ফয়সাল, কাউসার, চঞ্চল, রাব্বি, শিবলু, রোমান সহ অজ্ঞাত ১৫০ জন দলবদ্ধভাবে লাঠি, লোহার রড, বল্লম, শাবল, হ্যামার নিয়ে এইচ এন এপারেলস লিমিটেডের টিনশেড বিল্ডিংয়ের প্রিন্ট ফ্যাক্টরীর দেয়াল ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে কারখানার ১০ লাখ টাকা ক্ষতিসাধন ছাড়াও কারখানার অভ্যন্তরে থাকা প্রিন্টিং কেমিক্যাল, প্রিন্টিং মেশিন, কিউরিং মেশিন, কার্টুন রোল সহ ১০ লাখ টাকা মূল্যের সামগ্রী লুটে নিয়ে যায়। এসময় হামলাকারীরা ফ্যাক্টরী ছেড়ে না গেলে কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রাণনাশের হুমকী দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এজাহারনামীয় আসামী আমির উদ্দিন, মঞ্জুর রহমান, হাসানুর রহমান, ইমরান হোসেনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে।
উল্লেখ্য চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারী দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের নবীগঞ্জ ফেরিঘাট এলাকায় দু’টি লঞ্চে নাশকতার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠক চলাকালে জৈনপুরী হুজুর এনায়েতউল্লাহ আব্বাসীর বড় ভাই সৈয়দ ইমদাদ উল্লাহ আব্বাসীসহ জামায়াত ও শিবিরের ১০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সূত্র : নারায়ণগঞ্জ নিউজ